১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, রাত ১২:০৫
নোটিশ :
Wellcome to our website...

সুরের জগতে সুর-সরস্বতী নক্ষত্রপতন

রিপোর্টার
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

চলে গেলেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর । বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। রবিবার সকালে ৮.১২ মিনিটে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন ‘সুরের সরস্বতী’।
দেশজুড়ে চলছে সরস্বতী বন্দনা। আর সেই আবহেই ‘সুরের সরস্বতী’ চিরতরে বিদায় নিলেন! প্রয়াত সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর! শিল্প সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভারতবর্ষে তার অবদান সবচেয়ে বেশি , ও তার নাম সবার শীর্ষে । সেখানে মকবুল ফিদা হুসেন , ভীমসেন যোশী , রাজকাপুর , সত্যজিত্রায় , এমন কি অমিতাভ বচ্চনের মতো দিকপালেরাও স্থান পেয়েছেন লতার নিচের সারিতে । আড়াই ঘণ্টার
রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মধ্য মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

১৯২৯ সালে ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন লতা। পিতা নাট্য অভিনেতা ও গায়ক পণ্ডিত দিননাথ মঙ্গেশকরের মেয়ের নাম হেমা রাখলেও পরে হেমার নাম বদল করে রাখা হয় লতা। ৫ ভাইবোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৪২ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মারাঠি সিনেমায় গান গেয়ে সংগীতজীবন শুরু লতার। পরের বছর কণ্ঠে তোলেন হিন্দি সিনেমার গান।

 

লেখিকা: সুইটি বনিক

১৯৪৯ সালে হিন্দি সিনেমা ‘মহলের’ ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ গানটি দিয়ে পেয়ে যান ব্যাপক পরিচিতি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। লতার সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে বুঁদ থেকেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

সাত দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৩০ হাজারের বেশি গান রেকর্ড করেছেন তিনি। শুধু যে গুণী ব্যক্তিদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তা নয়, ছোটখাটো থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার- কী নেই সে তালিকায়।

বহু পুরস্কার ও সম্মাননা আছে লতার অর্জনের ঝুলিতে। ২০০১ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত হন। এছাড়া ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণ এবং ১৯৬৯ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ অর্জন করেন তিনি। এছাড়া ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাব প্রদান করে লতাকে।

এছাড়া দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৯), মহারাষ্ট্র ভূষণ পুরস্কার (১৯৯৭), এনটিআর জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৯), জি সিনে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (১৯৯৯) এএনআর জাতীয় পুরস্কার (২০০৯), শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার ও ফিল্ম ফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য অর্জন আছে লতার।

এছাড়া মধুমতি সিনেমার ‘আজারে পরদেসি’ গানের জন্য ১৯৫৮ সালে পান শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পীর পুরস্কার। বাংলায় তার অসংখ্য জনপ্রিয় গান আছে। তার কণ্ঠে স্থান পেয়েছে ৪০০ এরও বেশি বাংলা গান। এছাড়া বাংলাসহ ৩৬টি ভাষায় তিনি প্রায় প্রায় ৭ হাজার ৫০০টি গান গেয়েছেন।

‘পিয়া তোসে’ (গাইড), ‘আপ কি নজরো নে সমঝা’ (আনপড়), ‘লাগ জা গলে’, ‘নয়না বরসে রিমঝিম’ (উও কন থি), ‘তু জাহা জাহা চলে গা’ (মেরা সায়া), ‘চলতে চলতে’, ‘ইনহি লোগো নে’ (পাকিজা)-র মতো বিখ্যাত সব গানের জন্ম তার কণ্ঠেই।

জাদুকরী কণ্ঠের লতা মঙ্গেশকর চেয়েছিলেন নিজের মতো করে হারিয়ে যেতে। ৯২ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন পার্থিব এই মায়া ছেড়ে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে তার কণ্ঠ বেঁচে থাকবে শ্রোতার মন-মননে। তার মারা যাওয়ার খবরে শোকাহত গুণী এই শিল্পীর ভক্ত অনুরাগীরা।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসক প্রতীত সমদানির তত্ত্বাবধানে ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রয়াত সুরসম্রাজ্ঞীর জন্য চিকিৎকদের লড়াই কাজে এল না, কোটি কোটি অনুরাগীর প্রার্থনা বিফলে গেল। ৯২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ‘ভারতের কোকিলকণ্ঠী’।

লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এন সান্থানাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোভিড পরবর্তী জটিলতার ফলেই সকাল ৮টা ১২ মিনিটে মৃত্যু হল লতা মঙ্গেশকরের। আপতত তার দেহ শিবাজি পার্কে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সেখানেই শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে লতা মঙ্গেশকরকে।

এএনআই এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারির শুরুতেই করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে লতার। করোনার মৃদু উপসর্গ থাকলেও নিউমোনিয়ার কারণে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ৯ জানুয়ারি থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মাঝে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও হঠাৎ আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। টানা ২০ দিনের বেশি সময় হাসপাতালে ছিলেন লতা মঙ্গেশকর।

করোনা করে নিয়েছে অগণিত প্রাণ, তার মধ্যে কিছু মহা প্রাণ ও ছিল, আজ আবার আরো একটি মহাপ্রাণ চলে গেলেন পরের জগতে! কিছু প্রাণ জগতে মহীয়ান হয়ে থাকে যাদের দান অসীম ,যাদের অভাব কখনো পূর্ণ হয় না!! পরমেশ্বর যেন তাকে পরের জগতে শান্তিতে রাখেন!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর