গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আবার সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় কোনো অর্থই ব্যয় হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে ইউজিসি থেকে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করা হয়। ২০২০ সালের তথ্য নিয়ে তৈরি ইউজিসির এই বার্ষিক প্রতিবেদন। যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স বন্ধ, বাছাইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তরের সুযোগ দেওয়াসহ ২০টি প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১৫৩টি। তার মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬টি আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৭টি। ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে মোট ব্যয় করেছে ৭২ কোটি ৯০ লাখ ৬২ হাজার টাকা। আর ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৭টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় ব্যয় করেছে ১১১ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
৮টিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়নি। অনুমোদন বাতিল থাকায় ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি এবং কুইন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য সংযুক্ত করা হয়নি প্রতিবেদনে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গবেষণায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সর্বোচ্চ ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয় করেছে। তাদের প্রকাশনার সংখ্যা ছিল ৩৭৮। সর্বোচ্চ ব্যয়ের তালিকায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি— প্রায় ২২ কোটি ২১ লাখ টাকা, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি করেছে প্রায় ১২ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) গবেষণায় ব্যয় করেছে প্রায় ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ব্যয় ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) প্রায় ৩ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ব্যয় করেছে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয়ের তালিকায় আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাবির ব্যয় ৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তাদের প্রকাশনার সংখ্যা ছিল ৪৪৫। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয় করেছে ৫ কোটি ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ টাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ৩ কোটি ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৩ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
গবেষণা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কলা ও মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজনেস স্টাডিজ এবং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেয় সরকার। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারি বরাদ্দ নেই।
গবেষণায় ব্যয় নেই ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে
ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মতো ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় করেনি। এ তালিকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৮টি আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৭টি। এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩১, পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৩। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বেসরকারি।
এছাড়া, একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও বছরজুড়ে দু-চারটি প্রকাশনা ছাড়া অন্য কোনো গবেষণা করেনি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নামকাওয়াস্তে গবেষণা খাতে কিছু টাকা খরচ করে দায় সেরেছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় ৬৫ লাখ টাকা খরচ করলেও ২০২০ সালে একটি প্রকাশনাও প্রকাশ করতে পারেনি। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় এক কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করলেও তাদের প্রকাশনা ছিল মাত্র একটি। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র দুটি করে প্রকাশনা প্রকাশ করেছে। তবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৭০ লাখ টাকা এবং রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তিন লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয় করলেও একটি করে প্রকাশনা প্রকাশ করেছে।
ইউজিসির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়— দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনাক্রমে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সমস্যা ও চাহিদার কথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জানাবে। চাহিদার নিরিখে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান বের করবেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গবেষণার জন্য অর্থ পাবে।