৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, রাত ১১:৪০
নোটিশ :
Wellcome to our website...

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন পূর্ণিমা, খরচ জোগাবে কে?

রিপোর্টার
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ন

 

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১৪৬তম স্থান অর্জন করেছেন পূর্ণিমা রায়। ভর্তি হয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। একই শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ইউনিটেও ২৪১তম হয়েছিলেন তিনি। প্রথমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও পরবর্তী সময়ে ভর্তি বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেও পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে পূর্ণিমার উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়া এখন প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গত ২৭ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন পূর্ণিমা। তাঁর পারিবারিক অবস্থার খোঁজ নিয়ে ডেকে পাঠান জেলা প্রশাসক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন পূর্ণিমা। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী ২০ হাজার টাকার চেক, একটি ট্রাভেল ব্যাগ, একটি ব্যাগপ্যাক ও একটি ছাতা উপহার দিয়েছেন তাঁকে। সেই সঙ্গে পরবর্তী সময়েও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

পূর্ণিমা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের লক্ষ্মীকান্ত রায়ের মেয়ে। তিন ভাই–বোনের মধ্যে পূর্ণিমা সবার ছোট। বাবা অন্যের জমিতে কাজ করেন। মা গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাপড় বিক্রি করেন। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অর্থাভাবে একমাত্র ছেলে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পরে আর পড়ালেখা করাতে পারেননি, বর্তমানে অন্যের দোকানে চাকরি করছেন।

পূর্ণিমার বাবা অন্যের জমিতে কাজ করেন। মা গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাপড় বিক্রি করেন। সে এসএসসিতে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পান। উচ্চমাধ্যমিকেও পান জিপিএ-৫। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৪৬তম স্থান অর্জন করে ভর্তি হয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে।
পূর্ণিমা স্থানীয় গোলাপগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পান। ২০২০ সালে দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পান। মাধ্যমিক পাস করার পরে বোর্ড বৃত্তিতে ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকার বৃত্তি পেতেন। বর্তমানে সেটিও বন্ধ রয়েছে।

পূর্ণিমার মা পুষ্প রায় প্রথমে গ্রামে ঘুরে ঘুরে থান কাপড়, শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি করতেন। বছর পাঁচেক আগে কোমরে একটি অপারেশন হওয়ার পরে ব্যবসা বন্ধ করে দেন। স্বামী লক্ষ্মীকান্ত সংসার চালাতে আবার বিপাকে পড়েন। সম্প্রতি বাড়ির পাশে গোলাপগঞ্জ বাজারে মহিলা মার্কেটে ছোট পরিসরে একটি কাপড়ের দোকান দিয়েছেন পুষ্প রায়।

পূর্ণিমার বাবা লক্ষ্মীকান্ত বলেন, ‘টাকার অভাবে ছেলেকে পড়ালেখা করাতে পারিনি। মেয়ে প্রথমে রাজশাহীতে ভর্তি হইছিল। ধারদেনা করি টাকা জোগাড় করে ভর্তি করাইছি। সেটা এখনো শোধ করতে পারিনি। এরপর ঢাকাত ভর্তি হওয়ার সময় সমিতিত লোন করোছি। অনেক ভালো সমন্ধ আসছিল, মেয়েকে বিয়ে দিই নাই। যেহেতু এটাই শেষ সন্তান, তাকে লেখাপড়া শিখাতে চাই। ভাত খাওয়ার জন্য নয়, শুধু মেয়েটার পড়ালেখার খরচের জন্য সবার কাছে একটু সহযোগিতা চাইছি।’

পূর্ণিমার স্কুলের শিক্ষক রত্নেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘পূর্ণিমা খুবই মেধাবী। বিদ্যালয় থেকে সব সময়ের জন্য আমরা শিক্ষকেরা তাঁর খোঁজখবর রেখেছি। ওর বাবা আগে ভ্যান চালাতেন। বর্তমানে দিনমজুরির কাজ করেন। আমাদের বিদ্যালয় থেকে এই প্রথমবারের মতো কোনো মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। পূর্ণিমা আমাদের স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’

পড়ালেখা শেষে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা পূর্ণিমার। পূর্ণিমা বলেন, ‘এমনও দিন গেছে সকালে না খেয়েই স্কুলে গেছি। মা সকালে কাপড় বেচতে যেত। দিদির বিয়ের পরে সংসারের সব কাজ করে তারপরে স্কুলে যেতাম। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার কাছে পরীক্ষার ফি পর্যন্ত স্যারেরা নিতেন না। আমাকে পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়েছেন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর