২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, সকাল ৮:১৫
নোটিশ :
Wellcome to our website...

যে দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে

রিপোর্টার
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন
কথা বলার সময় হতে হবে আন্তরিক, এটিও আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তার চর্চার অংশ।

‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’ বা ‘আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তা’ শব্দটা শুনলেই এত দিন শার্লক হোমসের কথা মনে হতো আমার। অর্থাৎ বুদ্ধিদীপ্ত, কিন্তু নিরাবেগ মানুষকেই আমি ‘ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট’ হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। শব্দটি আলাপ-আলোচনায় খুব একটা আসে না, শিক্ষাজীবনে কোনো ক্লাসরুমে কখনো এর উল্লেখ শুনেছি বলেও মনে পড়ে না। তাই একরকম মনগড়া একটা ধারণা নিয়েই ট্র্যাভিস ব্র্যাডবেরি ও জিন গ্রিভসের লেখা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ২.০ বইটি পড়তে শুরু করি।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কী?

জটিল এ শব্দটিকে খুবই সহজ ভাষায় নানান ব্যাখ্যা করা হয়েছে বইটিতে। প্রথম অংশেই স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘মানবমস্তিষ্কের রেশনাল বা যুক্তিবাদী অংশের সঙ্গে আবেগের যথার্থ যোগাযোগই হলো ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স।’ লেখকদ্বয়ের মতে, ‘ইকিউ’ বা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স চারটি দক্ষতার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। দক্ষতা চারটি হলো—সেলফ অ্যাওয়ারনেস বা নিজেকে জানা, সেলফ ম্যানেজমেন্ট বা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস বা সামাজিক সচেতনতা এবং রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট বা সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা।

ইকিউ ও আইকিউর পার্থক্য

বইয়ের প্রথম অংশ পড়ার পর অনেকে হয়তো আইকিউ, ইকিউ, কিংবা ব্যক্তিত্ব—শব্দগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি গুলিয়ে ফেলতে পারেন। এমন প্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখেই ব্র্যাডবেরি ও গ্রিভস বলেছেন, ‘আইকিউ হলো বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব হলো মানুষ হিসেবে আপনার বৈশিষ্ট্যগুলো, আর ইকিউ হলো আবেগকেন্দ্রিক বিষয়গুলোতে আপনার বুদ্ধিমত্তা।’ তিনটি বিষয়ই যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, এমনটি বলার পাশাপাশি তাঁরা যোগ করেছেন এই তিনটির মধ্যে শুধু ইকিউ-ই এমন এক বৈশিষ্ট্য, যা চাইলে আরও সমৃদ্ধ করা যায়।

নিজের ভালো-মন্দ জানা

সেলফ অ্যাওয়ারনেসের পরিধি নিজের পছন্দের রং জানা বা প্রিয় লেখককে, জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। নিজের ভালো দিক, মন্দ দিক—সবই জানতে হবে আপনাকে। মূলত কোন পরিস্থিতিতে আপনি কী আচরণ করেন তা জানা, আবেগের পরিমাপ সম্পর্কে যথার্থ ধারণা থাকার অর্থই নিজেকে জানা। কেউ কেউ হয়তো প্রিয় মানুষটি সময় না দিলে প্রচণ্ড রূঢ় আচরণ করেন, কেউ আবার প্রচণ্ড রাগে অনেক জোরে চিৎকার করে ওঠেন, অথচ পরবর্তী সময়ে এগুলো নিয়ে কথাই বলতে চান না অথবা বুঝতেই পারেন না ঠিক কী আচরণ তিনি করেছিলেন। ব্র্যাডবেরি ও গ্রিভসের মতে, নিজেকে জানার অর্থ নিজের অবচেতন মনকে জানা নয়, বরং আপনি কী কারণে উত্তেজিত হন, কী দেখলে খুশি হন—এমন বিষয়গুলো নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা মানেই নিজেকে জানা।

নিজের ওপর দখল

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ২.০–এর দুই লেখক মনে করেন, নিজের প্রকৃতিগত আবেগকে ইতিবাচক দিকে প্রবাহিত করাই ‘সেলফ ম্যানেজমেন্ট’। অর্থাৎ আপনার রাগ খুব বেশি বলেই পান থেকে চুন খসলে আপনি চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলবেন, তা নয়; যেহেতু আপনি জানেন আপনি সহজেই রেগে যান, তাই রেগে যাওয়ার মতো কিছু ঘটলেই সতর্কভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবেন। এভাবেই অর্জিত হবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা। এ ছাড়া আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যুক্তি বিচার করা, বৃহত্তর স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন হওয়াও যে সেলফ ম্যানেজমেন্টের জন্য ভীষণ জরুরি, তা-ও বলা হয়েছে বইটিতে।

চোখ-মুখ-কাঁধ যখন যোগাযোগের মাধ্যম

রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে প্রায়ই আমরা একটা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। কোনো কোনো সময় রেস্তোরাঁর বেয়ারাকে বারবার ডেকেও তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় না। আবার কেউ কেউ আপনার ঘাড় ঘোরানোর ভঙ্গি দেখেই বুঝে ফেলেন, আপনি তাঁকে খোঁজেন। এই উদাহরণ টেনে ব্র্যাডবেরি ও গ্রিভস বলেছেন, ‘আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আপনার সচেতনতা বাড়বে তখনই, যখনই আপনি শরীরী ভাষা বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝবেন।’ তাঁদের মতে, পাশে বসে থাকা মানুষটির হাত নাড়ানো, কাঁধ ঝাঁকানো, বসার ভঙ্গি, উঠে দাঁড়ানোর ভঙ্গি থেকে আপনি আঁচ করে নিতে পারবেন আশপাশের পরিবেশের মেজাজ। তাই খোলা রাখতে হবে চোখ এবং সেই সঙ্গে ঠিক রাখতে হবে নিজের বডি ল্যাঙ্গুয়েজও। কারণ, তা থেকেই আপনার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাবেন পাশের ব্যক্তি।

নিয়মিত যোগাযোগ যখন সম্পর্কের ভিত্তি

আগের তিনটি দক্ষতায় বলা হয়েছে নিজেকে জানার কথা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণের কথা এবং নিজের আশপাশে কী হচ্ছে, তা বোঝার কথা। আর চতুর্থ দক্ষতার বিষয় হলো, অন্যকে বুঝতে শেখা ও সে অনুযায়ী আচরণ করা। সেখান থেকেই সূত্রপাত ঘটে একটি সুন্দর সম্পর্কের। লেখকদ্বয়ের মতে, শুধু সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটাই যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে, হতে হবে আন্তরিক। যোগাযোগের বন্ধন গড়ে না উঠলে আর আন্তরিকতার অভাব থাকলে সম্পর্ক কেবল পরস্পর ভাব আদান–প্রদানেই সীমাবদ্ধ থাকত।

চারটি দক্ষতার পাশাপাশি বইটিতে আরও রয়েছে ইকিউ মাপার পরীক্ষা, ইকিউ বাড়ানোর পদ্ধতি বা কর্মপরিকল্পনার কথা। এ ছাড়া যে বিষয়টি বইটিকে আরও সহজ করে তুলেছে তা হলো, বিভিন্ন রকম মানুষের আচরণ নিয়ে অন্যদের মন্তব্য। যেমন ‘নিজেকে জানা’ পরিচ্ছেদের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে চার ব্যক্তিকে নিয়ে তাঁদের সহকর্মীদের মন্তব্য। এর মধ্যে প্রথম দুজন নিজেকে খুব ভালো করে জানেন এবং পরের দুজনের নিজেকে নিয়ে ধারণা খুবই কম। এ দক্ষতাগুলোর ওপর ভিত্তি করে যে আমরা ভিন্ন ভিন্ন মানুষ হয়ে উঠি, তা বোঝানোর জন্য সত্যিই এটি একটি দারুণ পদক্ষেপ। বইটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ আরও চারটি পরামর্শ পেয়েছি। সে কথা বলেই শেষ করব।

১. নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

২. কোনো বিষয়েই আমাদের প্রতিক্রিয়া যেন সীমা লঙ্ঘন না করে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

৩. আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তার জন্য ঘুম ভীষণ প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার। লেখকেরা মনে করেন, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তৈরি হয় অস্থিরতা, যা আবেগ ও যুক্তির সঠিক সমন্বয়ের পথে বিরাট বাধা।

৪. ইতিবাচক চিন্তার চর্চা করা জরুরি। কেননা, ক্রমাগত নেতিবাচক চিন্তা থেকে নেতিবাচক আবেগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর