২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ভোর ৫:০৮
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

মধুসূদন : বাংলা কাব্যের ভিন্ন পথের পথিক

রিপোর্টার
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন

মো. আহসান হাবিব
সতত, হে নদ তুমি/পর মোর মনে /সতত তোমার কথা /ভাবি এ বিরলে…
বাংলা ভাষা, সাহিত্য সংস্কৃতির ও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্ত( ১৮২৪-১৮৭৩) কবি হিসেবে ব্যতিক্রমী ও আধুনিক। বাংলা কাব্য জগতের আধুনিকতাবাদের প্রবর্তক। এদিক থেকে তাঁকে বিপ্লবী কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
বাংলা অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী সাগরদাঁড়ি গ্রামে ২৫ জানুয়ারি ১৮২৪ সালে পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবীর সংসার আলোকিত করে পৃথিবীতে আসেন। আজ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৯ তম জন্মবার্ষিকী।

গ্রামে মাতা জাহ্নবী দেবীর তত্ত্বাবধানে তাঁর শৈশব শিক্ষার শুরু। রামায়ণ মহাভারতের প্রতি আকর্ষণ সম্ভবত এই পর্বেই তাঁর মনের কোণে উপ্ত হয়েছিল। ইংরেজি তথা ইউরোপীয় সাহিত্যরস ও বিচিত্র মানববিদ্যা যে সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নব্য বাংলার অন্তরে প্রবেশ করেছিল হিন্দু কলেজের স্থান তাদের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কলেজের ছাত্র হিসেবে এবং ছোট বেলা থেকেই আধুনিকতা বোধ সম্পন্ন হওয়ায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত পাশ্চাত্য সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি বহুলাংশে ধাবিত হন।

অতি আদুরে বিলাসীপূর্ণ হৃদয়ের মধ্যে তিনি মহাকবি হওয়ার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা পুষে রেখেছিলেন। এমন বাসনা থেকেই তিনি ভারতের তথা কথিত সনাতন ধর্মের গোড়ামীকে গুরুত্ব না দিয়ে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হন। খ্রিস্টান হওয়ার ফলে কলকাতার বিশপস কলেজের ছাত্র হিসেবে এবং পরে মাদ্রাজের বিদ্যালয় শিক্ষক রূপে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন, সংস্কৃত প্রভৃতি ক্ল্যাসিক্যাল ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন করতে পেরেছিলেন। এমন সাহিত্যের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার থেকে উপকরণ নিয়ে পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যকে বহুদিক দিয়ে সমৃদ্ধ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল।
কী ধর্ম, কী বর্ণ , কী জাতিগত ভেদাভেদ কিংবা জাতিগত ঐশ্বর্য সব কিছু ছাড়িয়ে ব্যক্তি মানুষ ও ব্যক্তি ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দিয়ে তিনি কবিতার নতুন বিষয় ও আঙ্গিকের পরিবর্তন এনেছিলেন। আঙ্গিকের ক্ষেত্রে তিনি অধ্যাবধি বাংলা সাহিত্যে কবিতার জগতে একজন শ্রেষ্ঠতম পুরুষ। বিষয়ের দিক থেকে তিনি প্রচলিত ধর্মীয় কাঠামো, পুরাণ এবং হাজার বছরের প্রচলিত বাঙালির ধর্মীয় অনুশাসনকে ভেঙে দিয়ে নতুন বিষয়কে উপস্থাপন করেছেন তাঁর কবিতার জগতে।
১৮০০ খ্রি: থেকে আধুনিক যুগের সূত্রপাত ধরা হয় কিন্তু বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার লক্ষণ মধুসূনের আমল থেকেই ফুটে ওঠে। আমরা এই মহান কবির প্রতিভার বিকাশ কাল লক্ষ্য করি ১৮৫৮ – ১৮৬২ খ্রি: পর্যন্ত। মাত্র পাঁচ বছর। শেষবারের মত ১৮৬৫ খ্রি: চতুর্দশপদী কবিতার মাধ্যমে তাঁর কবি প্রতিভার বিকাশ ঘটেছিল। সমগ্র জীবনের স্বল্প পরিসরে তাঁর কৃতিত্ব – প্রথম নাটক ‘শর্মিষ্ঠা ‘(১৮৫৯) যা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর পর পরেই প্রকাশিত ‘পদ্মাবতী’ (১৮৬০), ও ‘ কৃষ্ণকুমারী'(১৮৬১) নাটকদ্বয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম আধুনিক কমেডি ও ট্র্যাজেডির সৃষ্টি করেন। তাছাড়া ‘একেই কি বলে সভ্যতা’(১৮৬০) এবং ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ ‘(১৮৬০) নামে প্রহসন দুটি নতুনত্ব প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়।
‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য'(১৮৬০) রচনার মাধ্যমে অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত প্রথম কাব্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ মহাকাব্যের ধারার প্রবর্তন করেন। পৌরাণিক নারী চরিত্রের পুণর্বিচারে, অমিত্রাক্ষর ছন্দের চরমোৎকর্ষ সাধনে নতুন বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেন ‘বীরাঙ্গনা কাব্যে ‘ (১৮৬২)। পৌরাণিক রাধাকে নতুন রূপ দিয়েছেন ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্যে'(১৮৬১)। তাঁর ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী'(১৮৬৫) বাংলা কাব্য ধারায় জাতীয় কবিতা রচনার পথিকৃৎ হিসেবে অপরিসীম গুরুত্বের অধিকারী।
বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের অবদান অনস্বীকার্য।
• মধুসূদনের কাব্য রচনার মধ্য দিয়ে বাংলা কাব্যে নবযুগের সূত্রপাত ঘটে।• পুরান কাহিনির গতানুগতিকতা ভঙ্গ করে মানুষের মাহাত্ম্য বর্ণনার মাধ্যমে তিনি মানবতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করেন।• নতুন ধরনের আখ্যায়িকাকাব্য এবং ইউরোপীয় পদ্ধতিতে সার্থক মহাকাব্য রচনা করে তিনি নতুন রাজ্যের দ্বার খুলে দিলেন।• ক্লাসিক কল্পনা ও বাচনভঙ্গির সাথে ইউরোপীয় সাহিত্য সুলভ রোমান্টিক আকুতির সংমিশ্রণে প্রাচ্য পাশ্চাত্য সাহিত্যের মিলন ঘটিয়েছেন।• তিনিই আত্মকেন্দ্রিক লিরিক কবিতার জন্মদাতা, তাঁর চতুর্দশপদী কবিতাবলী এর প্রথম সূত্রপাত।• সনেট রচনা করে তিনিই প্রথম ইতালীয় ওষ কাব্যকৃতির সঙ্গে বাংলা সাহিত্যকে পরিচিত করলেন।• পয়ার ত্রিপদীর বন্ধন থেকে মুক্ত করে তিনিই প্রথম মিলটনের “Blank verse” ছন্দের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দ সৃষ্টি করলেন।• বাংলা সাহিত্যিক মহাকাব্য (মেঘনাদ বধ) রচনার বিজয় মুকুটটি তিনিই অর্জন করেছিলেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মিলন ঘটিয়ে, গতিহীন পয়ারের শেকল ভেঙে,অমিত্রাক্ষর ছন্দের সার্থক ব্যবহার করে, সাহিত্যে আধুনিকতার প্রবেশ ঘটিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সাবলীল গতি দান করেছেন। এক কথায় আধুনিক বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে তিনি ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী সাহিত্য স্রষ্টা। মূলত উপর্যুক্ত কারণেই আজ পর্যন্ত মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের একজন প্রবাদ প্রতীম পুরুষ।

(লেখক : তরুণ কলামিস্ট,সদস্য, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম ও সাবেক শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর