জবি করেসপন্ডেন্ট:
করোনাকালীন সময়ে বাসায় অবস্থান করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের(জবি) অধিকাংশ শিক্ষার্থী । অনেকে টিউশনির জন্য ঢাকায় অবস্থান করেছেন ।করোনা ভাইরাস সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ায় অনেক শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, কেউ কেউ সুস্থ হচ্ছেন । শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্বে অসুস্থতার কথা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে জানিয়েছেন । কিন্তু আশানুরুপ কোন সাড়া না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে । শিক্ষার্থীদের দেখ-ভালের দায়িত্ব ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত কিংবা আক্রান্তদেরও কোন সহায়তা দেয়া হয়েছে কি না সেটিও জানেন না তিনি। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিজের দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের অপসারণ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে লজ্জিত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল বাকী। বারবার দায়িত্ব পরিচালনায় অক্ষমতা প্রকাশ করলেও পরিচালক পদে বসে আছেন।
শুক্রবার বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল বাকী’র সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তথ্য জানতে চাইল উল্টো তিনি সাংবাদিককে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন- এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে তথ্য নাই। করোনা আক্রন্ত কতজন শিক্ষার্থীকে সহায়তা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাও আমি জানি না। কোথায় এ তথ্য পাবো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাও আমি জানি না। এভাবে কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি। যদিও এসব তথ্য ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের জানা থাকার কথা কিন্তু তিনি এসব তথ্য না জানার মধ্য দিয়ে আবার অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন ।
এই বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ।তাদের সাথে কথা বলে জানা জায় , জবির ছাত্র কল্যাণ পরিচালক নামেই আছে, কোন কাজের না। কোন ধরনের ছাত্র কল্যাণ মূলক কাজে সম্পৃক্ত নয় জবির ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের দপ্তর। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে চিনেন না ।
গণিত বিভাগের শিক্ষাথী হাফিজুল ইসলাম জানান, আর্থিক সঙ্কট নিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কাছে গেলেও এটা করো ওটা করো বলে সময় ক্ষেপন করেন কিন্তু কোন ধরনের সহায়তা করেননি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্য মূলক ব্যবহার, ফোন কেড়ে নেয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তিনি ‘সকল সংবাদিক বেয়াদব’ মন্তব্য করে বিতর্কিত হন। ছাত্রকল্যাণ পরিচালক হলেও নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে না পালন করার অভিযোগ অনেক পুরানো ।
আরো খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন মূলক কাজ করেন নি । বরং কোন সমস্যা নিয়ে গেলে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থীরা । বিভিন্ন নিয়ম-কানুন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের হতাশ করে ফিরিয়ে দিয়েছেন । শিক্ষার্থীর বিষয়ে নিজে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন সক্ষমতা দেখান নি । সব সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর জানাতে বলেন । এদিকে সাংবাদিকরা কোন সমস্যার কথা নিয়ে মন্তব্য নিতে গেলে উল্টো সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন এবং সমাধানের উপায় জানতে চান ।
তার বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি ক্লাসেও ঠিক মতো আসতেন না সব সময় শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের হেনস্তা করতেন। একটা কিছু হলেওই অভিভাবককে ফোন দিয়ে নানা কথা বলতেন।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনিষ্টিটিউট এর করোনায় আক্রান্ত হওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ছাত্রকল্যাণ পরিচালক এর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু আশ্বাস দেওয়া হলেও কোনো ধরণের সহযোগিতা করেনি। এমনকি আমার কোনো খোঁজ-খবরও নেয়নি আর।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জবির একজন সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, আমাদের ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সারা বছর কোন কাজ নেই। এমন একজন অযোগ্য লোককে এমন একটি সেনসিটিভ জায়গায় দায়িত্ব দেয়ার কারণ কী আমার বুঝে আসে না।
এ বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল বাকী কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, প্রশাসনের কেউ সাংবাদিকের সাথে এমন আচরণ করবে কেন? আমি তো এসব জানি না। আমি উনার সাথে কথা বলব। এর আগেও উনার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা বললে তিনি বলেন, এটা আমি জানি না। আমি সব বিষয়ে কথা বলব।
ভার্সিটি নিউজ/