গুচ্ছভুক্ত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি করানোর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থী পাচ্ছেন না। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে ২য় ও তৃতীয় ধাপের মেধাতালিকাও প্রকাশ করেছেন। এখন পর্যন্ত ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি রয়েছে পাঁচ হাজার ২৫১টি।
তথ্য মতে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে খালি রয়েছে ১ হাজার আটটি আসন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১২০টি আসন, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৯৩টি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬২৬টি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ইউনিটে ৭০৪টি আসন খালি রয়েছে।
দেশে প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগের ‘এ’ ইউনিটে, ২৪ অক্টোবর মানবিক বিভাগের ‘বি’ ইউনিটে এবং ১ নভেম্বর বাণিজ্য বিভাগের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০ অক্টোবর এ ইউনিটের ফল প্রকাশ হয়। ২৬ অক্টোবর বি ইউনিটের ও ৩ নভেম্বর সি ইউনিটের ফল প্রকাশ হয়। ফল প্রকাশের পর আড়াই মাস পার হলেও ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় মেধাতালিকা প্রকাশ করলেও বেশিরভাগই এখনো মেধা তালিকা প্রকাশ করেনি। মাত্র পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে।
বারবার মেধাতালিকা প্রকাশ করার পরও আসন খালি থাকায় অস্বস্তিতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শুরুর দিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট ও মেডিকেলের ভর্তি কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাতালিকা প্রকাশ করেনি। তখন গুচ্ছ কমিটি জানিয়েছিল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বুয়েটসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ হয়নি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি এখন ভর্তি করায় পরে দেখা যাবে ওই শিক্ষার্থী বুয়েটেও চান্স পেয়েছে তখন সে বুয়েটেই ভর্তি হবে। আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনটাও খালি হয়ে যাবে। যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে সেজন্য সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থী না পাওয়ায় গুচ্ছভুক্ত বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ধীর গতি এনেছে। বারবার মেধাতালিকা প্রকাশ ও ভর্তি কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
যদিও শিক্ষার্থীরা এর জন্য গুচ্ছের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে। তারা বলছেন, ফল প্রকাশের পর লম্বা সময় নিয়ে ভর্তি করাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অপেক্ষা করলেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় নিয়ে পড়তে পারার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না তারা। যার কারণে অনেকেই বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়ে গেছেন। তারা আরও জানান, বাড়ি থেকে অনেক দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চেয়ে বাড়ির পাশে কলেজগুলোতে পড়াও অনেক ভালো। সেজন্য আসন খালি থাকছে বলে জানান তারা। আগামীবার থেকে শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ পদ্ধতি বাতিল করার দাবি জানিয়ে বলেন, আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হলে আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার একটা সুযোগ থাকে।
এছাড়া অনেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন। দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশই শুরুর সারিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়ার কারণে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসন ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বারবার মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হচ্ছে।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালগুলোর মধ্যে প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম মেধাতালিকা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৪৪০ আসনের বিপরীতে ভর্তি হয় মাত্র ৩২০ জন। আসন খালি রয়েছে ১১২০টি। শূন্য আসন পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়টি আবারও মেধা তালিকা প্রকাশ করেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ধাপের মেধা তালিকা প্রকাশের পর ২ হাজার ৭৬৫ আসনের বিপরীতে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৭৫৭ জন। বাকি ১০০৮টি আসন পূরণের জন্য তৃতীয় মেধাতালিকার ভর্তি কার্যক্রম চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমদিনে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৪১২ জন। আসন খালি রয়েছে ৭৯৩টি। ২ হাজার ৯৫টি আসনের বিপরীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় টানা দুইদিন সাক্ষাৎকার নেয়ার পরও ৭৭ শতাংশ আসন খালি রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ইউনিটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক আবদুস সামাদ বলেন, মেধা তালিকায় থেকেও যারা সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হয়নি তারা উপযুক্ত কারণসহ যদি সমন্বয়কারী বরাবর লিখিত আবেদন করতে হবে। যদি তাদের থেকে কোন জবাব না পাওয়া যায় পরে তাদের আরও একবার সুযোগ দেয়া হবে।
শাহজালার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনের সাক্ষাৎকারে দুই ইউনিটে ৯৮৫টি আসনের বিপরীতে শুধু ২৮১ জন ভর্তিচ্ছু অংশ নিয়েছেন। ৮টি বিভাগ ভর্তি করানোর জন্য কোনো শিক্ষার্থী পায়নি। বিভাগগুলো হলো- রসায়ন, ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টি টেকনোলজি, জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্ট, গণিত, সমুদ্রবিজ্ঞান, পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং ও পরিসংখ্যান বিভাগ। এসব বিভাগগুলোতে ৪৩৫টি আসন রয়েছে।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যার দরকার হবে সে আসবে। আসন ফাঁকা থাকবে না। এখন আসছে না পরে আসবে। কেন শিক্ষার্থীরা আসছে না এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে এখনো কোনো স্টাডি হয়নি।