করোনার দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ মোকাবিলায় আবারোও বিধিনিষেধের পথে হাঁটতে যাচ্ছে সরকার। আপাতত বিভিন্ন খাতে সীমিত পরিসরে বিধিনিষেধ কার্যকর করা হবে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিসর বাড়তে পারে।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ‘ওমিক্রন’ ইস্যুতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে এ বৈঠক শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী হওয়া বৈঠকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে আসনের চেয়ে কম যাত্রী, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্রে আসন সংখ্যার ৫০ শতাংশ ব্যবহার করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, টিকা ছাড়া রেস্টুরেন্টে খেতে না দেওয়ার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ১৫ দিন পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এছাড়া মাস্ক না পরলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু থাকবে। তবে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকার কার্যক্রম আরও জোরদার করার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে না, তার দায় নিতে হবে তাদেরকেই। এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। শপিংমল, মার্কেটসহ দোকানপাটে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসনকে কঠোর থাকতে বলার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, করোনা বেড়ে যাচ্ছে। মৃত্যুর হার যদিও এখনো কম আছে। সংক্রমণের হার বেড়ে গেলে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই।
তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আবারো সেই লকডাউনের কথা চলে আসবে, আবারো স্কুল-কলেজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হবে। সবকিছুর উপরেই একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা আমরা চাই না। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, যত অনুষ্ঠান আছে, এগুলোর সংখ্যা যাতে সীমিত করা হয়, এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে এবং নীতিগতভাবে কিছুটা আমরা পজিটিভ যে, এটা করা হবে। পরিবহন সেক্টরে যাতে সিট ক্যাপাসিটি কমিয়ে এনে চালানো হয়, এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে এবং আশা করছি সিদ্ধান্ত পাব।
তিনি বলেন, আমাদের যেসব পোর্ট রয়েছে, সেখানে স্ক্যানিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো এবং আরও মজবুত করা। যেটা আমরা করেছিও। কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে আরও বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পুলিশি প্রহরায় কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা রাখা, যাতে কোয়ারেন্টাইন থেকে মানুষ বের হয়ে না যেতে পারে। মানে ঢিলেঢালা কোয়ারেন্টাইন আমরা চাচ্ছি না।
মন্ত্রী বলেন, দোকানপাটে যে যাবে, তাকে মাস্ক পরতে হবে। গণপরিবহনে উঠলে, মসজিদে গেলেও পরতে হবে। অর্থাৎ সব জায়গায় মাস্ক পরতেই হবে। না পরলে তাকে জরিমানা করা হবে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরেকটি তাগিদ দেওয়া হয়েছে, টিকা যাতে গ্রহণ করে। টিকা যারা নিয়েছে তারা রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে, অফিসে যেতে পারবে, বিভিন্ন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে মাস্ক পরা অবস্থায়। কিন্তু টিকা না নিয়ে থাকলে তারা রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে না। দেখাতে হবে টিকার সার্টিফিকেট। তবেই সেই রেস্টুরেন্ট তাকে খাবার পরিবেশন করবে।
যদি কোনো রেস্টুরেন্ট এ নিয়ম অমান্য করে তাহলে সেই রেস্টুরেন্টকেও জরিমানা করা হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।