১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা ৭:০৯
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার, আমাদের মানসিকতা ও বাস্তবতা

রিপোর্টার
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৯ অপরাহ্ন

ড. তাপস কুমার বিশ্বাস

শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই উপকারী হতে পারে যদি সংস্কারগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। তবে যেকোনো সংস্কার বা পরিবর্তনকে অর্থবহ করতে অনেকগুলো বিষয়কে বিবেচনায় নিতে হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, যেকোনো একটি সংস্কার বা পরিবর্তন পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই আরেকটি নতুন পরিবর্তন সামনে চলে আসে। সেটার পেছনেও কিছু কারণ পরিলক্ষিত হয়।

আমরা মূলত সংস্কারগুলো আমদানি করি উন্নত বিশ্ব তথা পশ্চিমা দেশগুলো থেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যখন কোনো সংস্কার পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন শেষ করে ফেলেছে অথবা বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে থাকে তখন আমরা সেটা নিয়ে চিন্তা করি এবং সেই জায়গায় পৌঁছাতে আরও অনেক দেরি হয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ সমস্ত সংস্কার বা পরিবর্তন আমাদের বিদ্যমান বাস্তবতাকে নিখুঁতভাবে বিবেচনা না করেই চাপিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও অনেকক্ষেত্রে সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পূর্ব প্রস্তুতিরও অভাব বা ঘাটতি থাকে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যখন কোনো সংস্কার পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন শেষ করে ফেলেছে অথবা বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে থাকে তখন আমরা সেটা নিয়ে চিন্তা করি…
যেকোনো সংস্কার বা পরিবর্তনকে অর্থবহ বা সফল করতে হলে শুরুতেই শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন যাচাই করে, আর্থসামাজিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে এবং অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মতামত নেওয়া দূরের কথা, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়েই কোনো একটি পরিবর্তনকে চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলে যা হওয়ার তাই হয়, বাস্তবায়নের সময় হোঁচট খেতে হয়।

যেকোনো উদ্যোগ সফল করতে হলে যাদেরকে দিয়ে সফলতা আনতে হবে তাদেরকে পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার অনেক সংস্কার হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু, অতীব দুর্ভাগ্যজনক হলো যে, মুখোশ নির্ভর শিক্ষা থেকে আজও আমরা বের হতে পারিনি।

সৃজনশীল পদ্ধতির নামে আরও বেশি কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি এবং তার ফলশ্রুতি হিসেবে সৃজনশীল গাইড বই এর আবিষ্কারও আমরা দেখেছি। সৃজনশীল গাইড বই যখন বাজারে পাওয়া যায় সেটাকে কীভাবে সৃজনশীল বলবেন?

আসলে এসব কিছুর মূলে রয়েছে আমাদের মান্ধাতার আমলের গ্রেডিং নির্ভর পরীক্ষা পদ্ধতি, যেখানে আজও মুখস্থ বিদ্যার জয়জয়কার। যেখানে পরীক্ষার সৃষ্টিই হয়েছিল শিখনকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য অথচ বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদেরকে আমরা পরীক্ষার জন্যই প্রস্তুত করছি।

আমাদের দেশে এখন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন, চারদিকে সবাই এখন শুধুমাত্র পরীক্ষার্থী। মূলত, আমাদের দেশে এসব কারণেই শিক্ষা যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ, শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা যে আগাইনি তা বলব না। পরিমাণগত দিকে আমরা যথেষ্টই এগিয়েছি। চিন্তা মূলত গুণগত মান উন্নয়নের।

শিক্ষাক্রমের নতুন এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের দক্ষ, যোগ্য এবং মনন গড়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। তবে, তার জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
শিক্ষাক্রমের নতুন এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের দক্ষ, যোগ্য এবং মনন গড়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। তবে, তার জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি সেক্ষেত্রে শিথিলতা থাকে তাহলে পূর্বের মতোই ব্যর্থতাকে বরণ করে নিতে হবে।

আমার মতে, উক্ত ব্যর্থতার জন্য সংস্কারের কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের। আর সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন দক্ষ ও যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মূল চ্যালেঞ্জই হলো এটা। প্রস্তাবিত নতুন শিক্ষাক্রমের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য এ বিষয়টি আরও বেশি প্রয়োজন এ কারণে যে, এখানে অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখনের কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, নিজেদের সম্পৃক্ত তথা কাজের মাধ্যমে শেখার কথা বলা হয়েছে। আর এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষকের কোনো বিকল্প নেই।

শিক্ষকের পাশাপাশি যোগ্য অভিভাবক ও যোগ্য সহপাঠীও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে। কারণ, অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখনের মূল্যায়নে শিক্ষকের পাশাপাশি অভিভাবক ও সহপাঠীদের ভূমিকাও অগ্রগণ্য। এক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে।

শিক্ষণ, শিখন প্রক্রিয়া থেকে মূল্যায়ন সমস্ত কিছু নতুন। এছাড়াও সমাজ তথা অভিভাবকদের বহুদিনের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করা খুব সহজ নয়। তারপরও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বা পরিবর্তিত বিশ্বে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনকে গ্রহণ করতেই হবে, সাথে সাথে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মানসিকতাও রাখতে হবে। যদি সত্যি সত্যি দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিশ্চিত করা যায় এবং বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো ভালোভাবে মোকাবিলা করা যায়, তাহলে এই শিক্ষা সংস্কার ফলপ্রসূ হবে।

ড. তাপস কুমার বিশ্বাস ।। অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর