আসাদ মান্নান।।
আলোর নদীর স্রোতে, অই দ্যাখো, ভেসে যাচ্ছে সেই
আততায়ী অমাবস্যা; একদিন যে-নগর পিতাকে বাঁচাতে
ব্যর্থ হয়, সে-নগর দ্যাখো আজ কলঙ্কের দাগ বুকে নিয়ে
নতুন দিনের স্বপ্নে আগুনের জামা গায়ে উঠে দাঁড়িয়েছে;
বেঁচেও মৃতের মতো ভয়ে ভয়ে যারা তেত্রিশ বছর ধরে
‘স্বাধীনতা’ এই প্রিয় শব্দটিকে লুকিয়ে রেখেছে, অই দ্যাখো
দ্বিধা ভয় জয় করে তারা আজ দাঁড়িয়েছে মুক্তিমোহনায়;
সূর্যকে আঁচলে নিয়ে কুয়াশার জাল ছিঁড়ে পিতার মতন
এ মাটিকে ভালোবেসে যিনি তাঁর দ্বিতীয় জন্মে ঐ
অনিবার্য মৃত্যুর দুয়ার থেকে বার বার ফিরে এসে
পিতার কবর ছুঁয়ে দাঁড়ালেন রবীন্দ্রনাথের গানে,
দরিদ্রজনের ঘরে-ঘরে, জরাজীর্ণ অভাবী অঙ্গনে,
শোকগ্রস্ত কঙ্কাল জীবনে অবিরাম যোগান দিচ্ছেন
প্রেম শক্তি মেদ মাংস রক্ত আর সাহসের মাটি-
অন্ধকারে তাঁর প্রাণে যে জ্বালায় অফুরন্ত আলো?
… হে উড়ন্ত স্বপ্নপাখি!
তুমি আজ নিচে নেমে অই মৃত নদীকে জাগাও;
অভিশপ্ত নগরীর কলঙ্কের দাগ মুছতে মুছতে
শিশুপার্ক ছেড়ে শিশুরা এসেছে আজ বহুদিন পরে
ইট-পাথরের নিচে চাপা আমাদের গৌরবের মাঠে :
নতুন শপথে তারা উজ্জীবিত হয়-পতাকার রঙে রঙে
পিতাকে উদ্ধার করে তুলে রাখে হৃদয়ের শহিদ মিনারে।
মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মহান পিতার স্বপ্নবুকে
নিরন্তর যিনি আজ এ জাতির মুক্তির দিশারী
ঘূর্ণিঝড়ে হালভাঙা নৌকাখানি শক্ত হাতে বৈঠা ধরে টেনে
অসীম মমতা দিয়ে পৌঁছুচ্ছেন আমাদের স্বপ্নের মঞ্জিলে,
হে রাব্বুল আলামিন! আমি এক সামান্য নফর
তোমার নাদান কবিতার একান্ত খাদেম-
আমার আয়ুর কিছু তাঁকে দিয়ে চাই তাঁর দীর্ঘ আয়ু।