গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু
করোনাভাইরাসের প্রকোপে থমকে পড়েছে বিশ্ব। বিশ্বে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। তার মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। কিন্তু এই বিশ্বজগতে মানুষ অসাধ্যকে মুহূর্তে সাধ্য করে ফেলেছে। বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। চাঁদে মানুষ বসবাসের চিন্তাভাবনা করছে। সমুদ্রের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। কিন্তু ছোট্ট করোনাভাইরাসের কাছে বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ মোকাবেলা করেও হেরে যাচ্ছে। তার ক্ষমতার দাপট কোনভাবেই কমাতে পারছে না বিশ্বের ক্ষমতাধররা। আমরা বুঝতে পেরেছি করোনাভাইরাস একটি নতুন ধরনের ভাইরাস। এখনো পর্যাপ্ত ঔষধ, চিকিৎসা নেই। এমনকি দেশে এটির পরীক্ষা পদ্ধতিও ভিন্ন। কেননা প্রতিনিয়ত জিনের গঠন পরিবর্তন করে ফেলছে ভাইরাসটি। তাই এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের একমাত্র উপায় সচেতন হওয়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী চলাফেরা করা। এর বাইরে কিছু করলেই আমাদের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে। বিশ্বের যে দেশগুলো এই ভাইরাসের মহামারীতে দিশাহারা হয়ে গেছে তার কারণ সচেতনতার অভাব। তাই আমাদের এখানে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে। এই ভাইরাস মোকাবেলায় কি করণীয় সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ২০ জানুয়ারি। এরপর ৫০ দিনে রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ছাড়ায় ১০ মার্চ। এরপরের এক সপ্তাহে রোগী ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি। পরের ১২ দিনে রোগী বেড়ে হয়েছে প্রায় ১ লাখ, সঙ্গে বেড়েছে মৃতের সংখ্যাও। কিন্তু প্রস্তুতির জন্য এত দীর্ঘ সময় পেলেও যুক্তরাষ্ট্রের এই হাল হলো কী কারণে? সম্পদের ঘাটতি নেই তাদের। আছে পর্যাপ্ত চিকিৎসা অবকাঠামো, সঙ্গে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। তারপরও এই পরিস্থিতি কেন? কারণ মার্কিন প্রশাসন একদিকে মুখে মুখে আশ্বস্ত করেছে, অন্যদিকে রোগ পরীক্ষা এবং লোকজনকে কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি। ঠিকমতো পরীক্ষা না হওয়ায় একটি ভুল বার্তা পেয়েছে দেশের মানুষ, জানতে পারেনি দেশে আসলে কত মানুষ আক্রান্ত। ফলে তারাও বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি। চলাফেরা-মেলামেশায় সতর্ক হয়নি। যেকারণে যুক্তরাষ্ট্র আজ এই ভয়াবহ পরিণতির মুখে এসে পড়েছে।
এছাড়া করোনাভাইরাসের বিস্তার রুখতে ইতালি সরকারের পদক্ষেপের মধ্যে নানা ত্রুটির অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, করোনা সংক্রমণ রুখতে চীনের সর্বাধিক প্রভাবিত এলাকাগুলিতে কঠোরভাবে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইতালি সরকার যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ছিল। প্রথমেই এই ভাইরাসকে তারা হালকাভাবে নিয়েছিল। যেকারণে ইতালিকে করোনাভাইরাসের এই মহামারী রূপ দেখতে হচ্ছে।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত হয়েছে৷ শুরুতে চরম অব্যবস্থাপনা থাকলেও পরে নানা কড়াকড়ি আরোপ করে চীন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে৷
এদিকে শুক্রবার পর্যন্ত দেশে যে ৬১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তারা কোন কোন এলাকার তা নিয়ে তথ্য পর্যালোচনা করেছে আইইডিসিআর। এতে দেখানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ঢাকায় (মহানগরী) ৩৫ জন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরীর ১৮ এলাকা রয়েছে। আর জেলা বিভাজন অনুসারে আক্রান্ত হয়েছে ৯ জেলার মানুষ। বাকি ৩৬ জন আক্রান্ত এই ৯ জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাইবান্ধা, কক্সবাজার, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, কুমিল্লা ও গাজীপুর। তাই এই ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়েও সবাইকে সচেতন হতে হবে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রত্যেককেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এখন থেকে সামনের কিছুদিন ঘর থেকে খুব জরুরি না হলে বাইরে বের হওয়াই উচিত হবে না। আর বাইরে কোনো প্রয়োজনে বের হলেই মুখে মাস্ক পরে বের হতে হবে।
দিনমজুর শ্রেণির মানুষ যাদের প্রতিদিন কর্মসংস্থান না হলে না খেয়ে থাকতে হয়, তাদের রক্ষার জন্য বেশ কয়েকটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। জেলা/উপজেলা পর্যায়ে সরকারি প্রশাসনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয় ও এস এম ১০ টাকা কেজিতে চালের ব্যবস্থা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিদের্শনায় আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন নিখিলের নেতৃত্বে আত্মমানবতার পাশে দাঁড়িয়েছে যুবলীগ। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের এই দুঃসময়ে নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী নিম্ন আয় ও দিনমজুরদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আমি নিজস্ব অর্থায়ন ও প্রচেষ্টায় এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিন ছুটি থাকায় আমাদের সমাজে যারা রিকশা-ভ্যান চালায়, চা-বিক্রেতা, ফুটপাতের হকার তাদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় আমরা সূত্রাপুর থানাধীন ৩০০ পরিবারের জন্য খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করেছি। খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, আলু, লবণ , পিয়াজসহ শুকনো খাবার। আর করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াস, সাবান।
ঢাকা শহরের যেকোনো প্রান্তে থাকা মানুষ আমাদের এই সহযোগিতা পাবেন। আমরা নিজস্ব কর্মীর মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী তাদের ঠিকানায় পৌঁছে দিব। মানবিক কারণে সমাজের বিত্তবানদেরও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত।
করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার । জনগণের সচেতনতার বিষয়ে কাজ করেছেন তারা। বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের জন্য কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেছেন। দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সকল অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দেশের খাদ্য দ্রব্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যাদি যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ আছে, সে কারণে উদ্বেগের কারণ নেই বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। সেই সঙ্গে এ নিয়ে কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা না করেন, সে সম্পর্কে হুশিয়ারি দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব তার প্রতিকারে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন।
গত ২৬ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত অঘোষিত লকডাউন দিয়েছেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ৩১ টি নির্দেশনাও দিয়েছেন। যাতে দেশের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশে একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহ এটা আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। তাই এখনি আমদেরকে আরো সচেতন হতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস ধরে রাখতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ এই সংকট মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াবে।
(লেখক : গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু , সাংগঠনিক সম্পাদক,
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ)