২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা ৬:৫৬
নোটিশ :
Wellcome to our website...

দেশি যন্ত্রে ১৭ গুণ কম খরচে ধান কাটা

রিপোর্টার
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৬ অপরাহ্ন

জমি থেকে গোলায় ধান তোলা পর্যন্ত ব্যয়ের চিত্র পাল্টে দিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই বা ব্রি) বিজ্ঞানীরা ‘খামার যন্ত্রপাতি গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের অর্থায়নে উদ্ভাবন করেছেন ‘ব্রি হোলফিড কম্বাইন হারভেস্টার’ নামের একটি যন্ত্র। এর মাধ্যমে প্রায় ১৭ গুণ কম খরচে ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই সম্ভব বলে মনে করছেন ব্রির বিজ্ঞানীরা।

হারভেস্টারটি উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্রির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এসএসও) ড. মো. আশরাফুল আলম। তার সঙ্গে কথা বলে যন্ত্রটির বিভিন্ন দিক ও কার্যকারিতা জেনেছে নিউজবাংলা।

আশরাফুল আলম বলেন, ‘এ যন্ত্রটি দিয়ে ঘণ্টায় তিন থেকে চার বিঘা জমির ধান কাটা সম্ভব। প্রতি ঘণ্টায় এতে ডিজেল খরচ হবে সাড়ে তিন থেকে চার লিটার। ডিজেলের দাম ৮০ টাকা লিটার ধরলে তিন বিঘা জমির ধান কাটতে সাড়ে তিন লিটার জ্বালানির দাম পড়বে ২৮০ টাকা।

‘জমি তিন বিঘা এবং ডিজেল ৪ লিটার ধরলে খরচ পড়বে ৩২০ টাকা। এর সঙ্গে মেশিনম্যানকে দিতে হবে আরও ১০০ থেকে ২০০ টাকা। অর্থাৎ তিন বিঘা জমিতে ধান কাটায় খরচ হবে ৫০০ টাকা প্লাস-মাইনাস।’

তিনি জানান, এ মেশিনে শুধু ধান কাটাই হবে না, একই সঙ্গে মাড়াই-ঝাড়াইও হবে। অর্থাৎ তিন বিঘা জমিতে পুরো প্রক্রিয়ায় খরচ হবে ৫০০ টাকার মতো। সে ক্ষেত্রে এক বিঘায় খরচ হবে ১৬৬.৬৭ টাকা।

দেশের বিভিন্ন স্থানে এক বিঘা জমির ধান কাটতে চার থেকে পাঁচজন কর্মী লাগে। প্রতি কর্মীর মজুরি কমপক্ষে ৫০০ টাকা ধরলেও চারজনের পেছনে বিঘাপ্রতি ধান কাটায় ব্যয় হবে দুই হাজার টাকা। ধান মাড়াই-ঝাড়াইয়ে কর্মীপ্রতি আরও ২০০ টাকা ধরলে বিঘাপ্রতি ধান তোলার ব্যয় হবে ২ হাজার ৮০০ টাকা।

ব্রির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুলের হিসাব অনুযায়ী, তাদের উদ্ভাবিত হারভেস্টার দিয়ে এক বিঘা জমিতে ১৬.৮০ গুণ বা প্রায় ১৭ গুণ কম খরচে ধান কাটা-মাড়াই-ঝাড়াই করা যাবে।

যন্ত্রটির বৈশিষ্ট্য

‘ব্রিডব্লিউসিএইচ২০২১’ মডেলের হারভেস্টারটি ৫ হাজার ২০০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্য, ১ হাজার ৮০০ মিলিমিটার প্রস্থ ও ২ হাজার ৬০০ মিলিমিটার উচ্চতার। এতে ৮৭ হর্সপাওয়ারের ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। যন্ত্রটির ওজন তিন হাজার কেজি।

ঘণ্টায় তিন থেকে ৪ বিঘা ধান কাটতে পারে এটি। এর গতি ঘণ্টায় তিন থেকে চার কিলোমিটার। এ যন্ত্রে শস্য নষ্ট হয় ১ শতাংশেরও কম।

ব্রি যন্ত্রটির প্রাথমিক দাম ঠিক করেছে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা।

এত টাকায় কৃষক কি যন্ত্রটি কিনতে পারবে

এ বিষয়ে ব্রির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের হারভেস্টারসহ ধান ঘরে তোলায় সহায়ক বিভিন্ন যন্ত্রে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে হাওরের সাতটি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের কৃষকদের হারভেস্টারে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভতুর্কি দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি ইভালুয়েশন কমিটি আছে। তারা ব্রি উদ্ভাবিত হারভেস্টারটিকে তালিকাভুক্ত করে নিলে নির্দিষ্ট অঞ্চলে কৃষক ৭০ শতাংশ কম দামে পণ্যটি কিনতে পারবে। সরকার ৭০ শতাংশ তথা ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভর্তুকি দিলে কৃষক তিন লাখ ৬০ হাজার বা ৪ লাখ ৬০ হাজারে যন্ত্রটি কিনতে পারবেন।

উদ্ভাবনের আদ্যোপান্ত

প্রকল্প পরিচালক ড. একেএম সাইফুল ইসলামের নিদের্শনায় গবেষণা দলে নেতৃত্ব দেয়া আশরাফুল আলম জানান, ২০১৯ সালে তিনিসহ ব্রির আরও কয়েকজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত হারভেস্টারগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। সেগুলোর জ্বালানি খরচ, কার্যকারিতা মূল্যায়ন শুরু হয় তখনই।

তিনি জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে যন্ত্রটি উদ্ভাবনে কাজ শুরু হয়। এতে তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যুক্ত ছিলেন ব্রির তিন থেকে চার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও সাত থেকে আট শ্রমিক। তাদের চেষ্টায় জুনে যন্ত্রটি উদ্ভাবন হয়।

ব্রির জ্যেষ্ঠ এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ল্যাবরেটরিতে যন্ত্রটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) খামারে যন্ত্রটির আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা হয়। সেদিন কৃষি কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী, কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। তারা যন্ত্রটির কার্যকারিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

যন্ত্রটির বিশেষত্ব কী

ব্রির বিজ্ঞানী আশরাফুল আলম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান যে যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছে, সেটি বিদেশ থেকে আনলে পণ্যের দাম, কর ও বিক্রেতার লাভ মিলে খরচ পড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। এটা দেশে উৎপাদন হলে খরচ কমে যাবে অর্ধেক।

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সহজ করা।’

বৈজ্ঞানিক এ কর্মকর্তা আরও জানান, দেশে এখন যে হারভেস্টার পাওয়া যায়, সেগুলোর কোনো স্পেয়ার পার্ট নষ্ট হলে অনেক দামে এবং বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে কিনতে হয়। ব্রি উদ্ভাবিত যন্ত্রে সে ঝামেলা থাকছে না। একে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে হাতের নাগালে কম খরচে পাওয়া যায়।

সরকারের কাছে প্রত্যাশা

আশরাফুল আলম জানান, যন্ত্রটি উদ্ভাবনে ১৬ ধরনের ওয়ার্কশপ মেশিনারি লেগেছে। এর জন্য বিভিন্ন ওয়ার্কশপে গিয়ে কাজ করতে হয়েছে। সরকারের আর্থিক ও নীতি সহায়তা পেলে এ ধরনের ঝামেলা দূর হবে এবং খুব সহজেই এর উৎপাদন বাড়ানো যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর