২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, সকাল ১১:৪৮
নোটিশ :
Wellcome to our website...

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবময় ইতিহাসের স্বাক্ষী

রিপোর্টার
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

এফ এম শরিফুল ইসলাম শরিফ।।

পাঠশালা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাসে বিরল। আর পাঠশালা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সাথে মিশে আছে সোনালি অতীতের গৌরবময় স্মৃতি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠার গল্পটি সহজ নয়। জামাত-বিএনপি জোট সরকার আমলে ২০০৫ সালে, বিশেষ করে ম্যাডাম খালেদা জিয়া অক্ষরজ্ঞানহীন এই নেত্রী বিশ্বব্যাংকের অপচেষ্টায় এবং সস্তা জনপ্রিয়তা পাবার আশায় পুরানো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপদান করেন। একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়  যেটি ছিল অনেকের ভাষায় একটি বিকলাঙ্গ শিশুর মত। সেই বিকলাঙ্গ শিশুকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপদান করার লক্ষে মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে  কেরানিগঞ্জে ২২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি মেগা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন যা প্রশংসার দাবি রাখে।

একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপদানে জবির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে যে ধারাটির বলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনাবাসিক ছিল সেই ধারাটি বাতিল করে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর হওয়ার সুযোগ করে দেন শিক্ষা বান্ধব নেত্রী শেখ হাসিনা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে কালো ধারা হিসেবে পরিচিত  ছিল সেই  ২৭/৪ ধারা বাতিল করে  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা  সরকারি খরচে ছাত্রদের মেধা বিকাশের পথ সুগম করে দেন। যার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

স্বনামধন্য মেধাবী এবং পরিশ্রমী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানকে  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ফলে, উপাচার্যের একান্ত প্রচেষ্টায়  দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, ২০ অক্টোবর ২০২০ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ছাত্রীহল উদ্বোধনের মধ্যেমে অনাবাসিকের তকমা ঘুচে যাবে।আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি,  বিশেষভাবে মাননীয় উপাচার্য স্যার এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে যে ছাত্রী হলটি  উদ্বোধন হবে সেটি উদ্বোধনের সুযোগ পাওয়ার একান্ত দাবিদার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালীন আমি কাছ থেকে দেখেছি একজন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অবৈধ স্থাপনা কিভাবে উচ্ছেদ করেন। এমনকি ছাত্রী  হলের যে জায়গা সেই জায়গাটি  দখলমুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্যারের যে তৎপরতা ছিল তা প্রশংসার দাবি রাখে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব  হলটি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সেই হলের জায়গাটি পুরানো ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো। সেই বরাদ্দকৃত জায়গায় আমাদের অগ্রজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আহবায়ক  সাইফুল ইসলাম আকন্দ সহ আহ্বায়ক কমিটির নেতারা সেই প্রতিষ্ঠানের নামফলকটি ভেঙে  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ছাত্রী হল শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন। তখনকার সময়ে সেখানে  অনেক অবৈধ স্থাপনা ছিলো এমনকি রাজনৈতিক দলের অফিসও ছিলো যা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা সহজ ছিল না।

মাননীয় উপাচার্য মীজানুর রহমান  স্যার আমাকে ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলামকে ডেকে বললেন আমি দাঁড়িয়ে থাকবো আর তোমরা সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। যেই কথা সেই কাজ, ছাত্রী হলের জায়গায় এসে স্যার দাঁড়িয়ে থাকলেন আর ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা মিলে দলের অফিসসহ সকল স্থাপনা মুহূর্তের মধ্যে অপসারণ করা হলো। সেইদিন দেখেছি একজন প্রশাসককে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে সুকৌশলে কিভাবে যে কোন কাজ সফলভাবে করতে পারেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে পরিবারের সকল সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সকল কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কালের স্বাক্ষী। বাংলাদেশের সকল গৌরবময় ইতিহাসের সাথে এই প্রতিষ্ঠানটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভাষা শহীদ রফিক যেমন আত্মত্যাগ দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্য করেছে ঠিক তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধেও এই প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। জবি ক্যাম্পাসের ভেতর  হানাদার বাহিনীরা গণকবর দিয়েছিল।বাংলাদেশের সকল গৌরবময় ইতিহাস ও সফল আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে  এই বিদ্যাপিঠের ছাত্র-শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।শাঁখারী বাজার এবং তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থী বিখ্যাত কমেডি অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়  কলকাতায় অভিনয় করার জন্য স্বাক্ষাৎকার  দেওয়ার সময় এক পরিদর্শক জিজ্ঞেস করেছিল কোথা থেকে এসেছো তুমি ?  তোমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম কি ? ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন আমি জগন্নাথ কলেজ থেকে লেখাপড়া করেছি। জগন্নাথ কলেজটা আবার কোথায়? উত্তরে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন পূর্বে লক্ষীবাজার উত্তরে শাঁখারীবাজার পশ্চিমে তাতিবাজার দক্ষিণে বাংলা বাজার মাঝখানে জগন্নাথ কলেজ। ব্যঙ্গ করে পরীক্ষক বলেছিলেন কোথাকার কোন বাজার থেকে এসেছ! তুমি আবার কি অভিনয় করবে, অভিনয় করে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু জগতখ্যাতি পেয়েছিলেন। ঠিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞানের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। বর্তমানে বিসিএসসহ যেকোন প্রতিযোগিতামূলক চাকুরির পরীক্ষায় নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে জবির শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে সব সময় প্রাণের প্রিয় বিদ্যাপিঠের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।

(লেখক : এফ এম শরিফুল ইসলাম শরিফ, সাবেক সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এবং সাবেক ছাত্র বাংলা বিভাগ, ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষ।)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর