মাসুদ রানা
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস আতঙ্কে জনজীবন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে দেশে প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকার বাধ্য হয়ে এক ধরনের অঘোষিত লক ডাউন দিয়েছে। ইতোমধ্যে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশের প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছেন। তারা জনগণকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু দেশে এই সুযোগে কিছু কুচক্রী মহল বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত হয়ে করোনাভাইরাসের হাত থেকে জীবনকে রক্ষা করতে মানুষ সহজেই গুজবকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। মুহূর্তেই এ ধরনের গুজব সাধারণ মানুষ বাঁচার শেষ সম্বল হিসেবে গ্রহণ করছে। সামাজিক মাধ্যমে এই গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি একজন আরেকজনের নিকট আত্মীয়-স্বজনকে মোবাইল ফোনে জানাচ্ছে। এতে করে এক এলাকা থেকে গুজব অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
গত বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসে রাত ৮ দিকে বাসায় শুয়ে আছি। এমন সময় একজন এসে বলল- ঘরে উঠার ডান পাশের মাটির নিচে চোখে দেওয়া সুরমা আছে। এই সুরমা চোখে দিলে করোনাভাইরাস হবে না। পরবর্তীতে মানুষজন করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে এইভাবে প্রত্যকে তার ঘরের সামনের মাটি খুঁড়তে থাকে।
পরে রাত ১২ দিকে আমার নানী ফোন দিয়েছেন আম্মুকে। নানী আম্মুকে বলেন, এখনি উঠে গরম পানি করে লবণ দিয়ে চা বানিয়ে খা। তাহলে আর করোনাভাইরাস হবে না। পরে জানা যায়, তাকে ঢাকা থেকে একজন ফোন করে বলেছে এই চা খেতে। তখন তিনি চা বানিয়ে খেয়েছেন।
এছাড়া করোনাভাইরাস নিয়ে থানকুনি পাতার কাহিনিও আমরা শুনেছি। যেকারণে কয়দিন সাধারণ মানুষ এই থানকুনি পাতা খেয়েছিল। উপরন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে ৩৫ সেকেন্ডের ভয়েস রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে এই ভয়েস রেকর্ড ছড়ানো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যেটা নিয়ে গণমাধ্যম ফলাও করে সংবাদ প্রচার/প্রকাশ করেছিল।
আসলে বাঙালিরা একটি সভ্য জাতি হলেও আমাদের মধ্যে আবেগ বেশি কাজ করে। কোন কিছু না দেখে, কোন কথার সত্যতা যাচাই না করেই মানুষের মুখের কথা বিশ্বাস করি। এতে সত্যের চেয়ে বেশি মিথ্যা ছড়িয়ে পড়ে। যেকারণে কুচক্রী মহল এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে গুজব রটাতে থাকে। যার মধ্যে কিছু গুজব সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
একটা বিষয় জেনেছি যদি একটা মিথ্যা কথা একশোবার বলা হয় সেটা একদিন সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তাই আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত যে পরিমাণে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে এতে করে একদিন গুজব সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলে আমি সন্দিহান। কারণ সত্যের চেয়ে গুজব ভয়ংকর আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। যাতে মানুষ এই গুজবকে সত্যের চেয়ে বেশি আগ্রহে গ্রহণ করছে। যেকারণে সমাজে সত্য নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষ কোনটা সত্য আর কোনটা গুজব নিমিষেই বুঝতে পারছে না।
এখনি গুজব রটানোকারীদের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ হতে হবে। সবাইকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে কোন ঘটনা বা বিষয় বিশ্বাস করতে হবে। তাহলে কেউ সহজে গুজব ছড়াতে পারবে না। এতে গুজব বিশ্বাসে বাঙালি মোরা তকমা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারব। ফলে সমাজ হবে গুজবমুক্ত। যেখানে সত্যের জয়গান থাকবে।
(শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)