২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, রাত ৩:০৫
নোটিশ :
Wellcome to our website...

করোনা মানুষের জীবনে বয়ে আনবে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ

রিপোর্টার
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন

ইমরান হুসাইন

করোনার এই মহামারিতে সারাবিশ্বে ঘর বন্দী হয়ে গেছে হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা। আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হচ্ছে দিন দিন।যা জন জীবনকে করে তুলছে আরো বিষাদময়।কিন্তু মহামারি এই করোনার ছোবল থেকে বাঁচার কোন প্রতিষেধক পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।আর তাই স্বভাবতই এই ভয়াবহ করোনাভাইরাসের কবল থেকে বাঁচতে আমাদের থাকতে হচ্ছে ঘরে, সব সময় সামাজিক দূরুত্ব রক্ষা করে চলতে হচ্ছে।সেই সাথে  মানতে হচ্ছে সরকারের ঘোষিত লকডাউন।এই ঘোষিত লকডাউন, সামাজিক দূরুত্ব নিশ্চিত করা সাধারণ জনগণ বা নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনির মানুষের জন্য হয়ে উঠেছে অভিশাপ স্বরূপ।কেননা সমাজের খেটে খাওয়া মানুষগুলো তাদের কাজ হারিয়েছে, ভ্যান, রিক্সা, অটোরিকশা চালকরা রাস্তায় নামতে পারছে না।ফলে তাদের আয় রোজগার না থাকাতে অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে তিন বেলার আহার। চারিদিকে ব্যাপকভাবে দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাব।

অন্যদিকে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যের ন্যায্য হিসাব পাচ্ছে না। বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পূর্ণ স্থগিত থাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা হারাচ্ছে এবং দিনেদিনে লোকশানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে।এছাড়াও দেশে জনগণকে সুরক্ষা রাখতে সামাজিক দূরুত্ব নিশ্চিত করতে দেশে  ঘোষিত লকডাউন চলাতে হাট-বাজার বন্ধ থাকছে যেকারণে মাঝারি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূলধন হারাতে বসেছে।এখানেই শেষ নয় দেশের নতুন উদ্যোক্তা লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে আর চাকরিচ্যুত হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক।যা আমাদের পরিবার, সমাজ, ও দেশের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ অবস্থা নির্দেশ করে।

২.

প্রতিনিয়তই আমরা পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলগুলোতে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কর্মহীনতার করুণ অবস্থা দেখতে পাচ্ছি।যারা দিন আনে দিন খায় এবং রাতে ঘুমানোর আগে ভাবে কাল যদি কাজ না পায় তাহলে কি হবে এমন দুশ্চিন্তার ভিতর তাদের দিন কাটে।কাজের অভাবে খেয়ে বা না খেয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে তারা। গাড়ি চালকেরা পথে নামলেও ভাড়া নেই।চরম বিপাকে তাদের জীবন।ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে আত্মহত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, লুট, আবার কর্মহীন মানুষদের বিক্ষোভ মিছিল।সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলোঃ

(১) ঋণ শোধ করতে না পেরে যশোরের কেশবপুর উপজেলার গ্রামে স্বামী-স্ত্রী ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।গত ২৪ এপ্রিলে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, উপজেলার ঘোপসেনা গ্রামের মো. শহীদুল ইসলামের ছেলে মো. শামীম হোসেন (৩০) ও তার স্ত্রী রেনুকা বেগম (২৫)।
কেশবপুর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, ওই দম্পত্তির মধ্যে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অনেক টাকা তারা ঋণ নিয়েছিলেন।কিন্তু করোনার প্রভাবে সকল কাজ কর্ম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পরিবারে নেমে এসেছে অভাবের ব্যাপক তাড়না যা তাদের জনজীবনকে থমকে দিয়েছে। এ দুই কারণে তারা আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

(২) দীর্ঘ দিন কাজ না থাকায় করোনায় খাদ্য  সংকটে খুলনার  সাতটি স্থানের তিন হাজার বিহারি পরিবার। ত্রাণ বিতরণ ১ মাস হতে চললেও পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী এই ত্রাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। আর  এই সংকটপূণ অবস্থা তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকার প্রভাবে।বিহারি ক্যাম্পের সদস্যরা বলেন  বর্তমানে আমাদের এখন যতটা সমস্যা তা আমাদের ছিলোনা। করোনার জন্য কাজ বন্ধ থাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে বর্তমানে খাদ্যের সমস্যা দেখা দিয়েছে প্রকটভাবে।সরকার থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ায় মাঝে মাঝে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়।

(৩) করোনা পরিস্থিতিতে সিরাজগঞ্জে, বেলকুচি পৌর এলাকায় আফরোজা খাতুন নামে এক কিশোরী আত্নহত্যা করে। স্বজনরা দাবি করে কয়েকদিন ধরে পরিবারটি অনাহারে থাকায় পিতা ধমক দেন ওই মেয়েকে।তারপর আফরোজা আত্নহত্যা করেন।করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কয়েকদিন ধরে সমস্ত কাজ বন্ধ থাকায় কাজে যেতে না পারায় কোন আয় রোজগার নেই।হাতে কোন টাকা পয়সাও নেই যে চাল ডাল কিনবো। মেয়েকে এই বিষয়ে ধমক দিলেই আত্নহত্যা করে।

(৪) করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে অভাবে পড়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় অহিদুল নামের এক ভ্যান চালক আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে উপজেলার কাজীর বেড় ইউনিয়নের ডালভাঙা গ্রামের নিজ বাড়ির আড়ায় গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।নিহতের স্ত্রী জানান তার স্বামী বিভিন্ন এনজিওসহ নানা লোকের কাছে ৫৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ভ্যান চালিয়ে যা হতো তা দিয়ে তার সংসার ও কিস্তি পরিশোধ করতেন।কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গত এক সপ্তাহে কোন আয় রোজগার হচ্ছিলো না এই নিয়ে সংসারে প্রতিনিয়তই গোলযোগ চলছিলো।করোনার প্রভাবে সংসারে আয় না হওয়া ও ঋণের বোঝা ভারি হওয়ায় মানসিক চাপ সইতে না পেরে আত্নহত্যা করেন।

(৫) সিলেটের জকিগঞ্জে সরকারি চাল পাচার ও লুট। ২৬ এপ্রিল সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে ১০ টাকা কেজি দরে খোলাবাজারে বিক্রির জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব ওএমএস কর্মসূচির ট্রাকভর্তি ৫৭০ বস্তা চাল লুটে নেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ট্রাকে করে ৫৭০ বস্তা চাল গুদাম থেকে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় এ লুটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩৪৬ বস্তা চাল উদ্ধার করে। কালিগঞ্জ বাজারের হোসেন অ্যান্ড সন্সের সামনে ট্রাক থামিয়ে ১০ টাকা দরের চালের বস্তা নামানোর সময় স্থানীয় জনতার সন্দেহ হয়। তখন ট্রাকচালককে চাল নামানোর বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে চালক জানান চালগুলো কালিগঞ্জের দুই ব্যবসায়ীর। তারপর স্থানীয় জনতা ট্রাকচালকের কাছে চালের সরকারি কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তখন ট্রাকসহ চাল আটক করে প্রশাসনকে খবর দেন স্থানীয়রা। এ সময় স্থানীয় অর্ধশতাধিক মানুষ হামলা চালিয়ে ট্রাক থেকে চাল লুট করে নিয়ে যায়।

(৬) দিনাজপুরে মাইক্রোবাসে সেনাবাহিনীর স্টিকার লাগিয়ে ডাকাতির চেষ্টা। গত ২৪ এপ্রিল এ ঘটনা ঘটে।দিনাজপুরে মাইক্রোবাসের সামনের গ্লাসে বড় স্টিকারে লেখা ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাজে নিয়োজিত, জরুরি খাদ্য সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত’। গাড়ির ভেতরে দেশীয় অস্ত্রসহ বসা চার ডাকাত সদস্য। করোনা পরিস্থিতিতে এমনই অভিনব কায়দায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে একটি মাইক্রোবাসসহ ওই চার ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। করোনার থাবায় সারা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত।যা  অর্থনৈতিক বিষয়ের উপর ব্যাপকভাবে আঘাত হানবে।দেশের এমন ভয়াবহ অবস্থা ছাড়াও সারা বিশ্ব পড়তে পারে খাদ্য সংকটে।বহির্বিশ্বের অবস্থাও করুণ।জাতিসংঘের একটা জরিপে দেখা যায়, তিন মাস পর বিশ্বে প্রতিদিন না খেয়ে মারা যাবে ৩ লাখ মানুষ।

৩.

করোনার প্রকোপে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে সবাই, বাড়ছে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর হার।ইতোমধ্যে ইয়েমেন, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ভেনিজুয়েলা, দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে শুরু করেছে।জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডাব্লিউএফপি) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে বিশ্ব ক্ষুধার মহামারিতে পড়তে যাচ্ছে এ বছর।কারণ অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বে মারাত্মক সংকটে ছিলো ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। যেহেতু এখন অনেক দেশেই কলকারখানা বন্ধ, বাধ্য হয়ে মানতে হচ্ছে লকডাউন বা কোয়ারেন্টাইন।সে কারণে এ বছর ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ২৬ কোটি ৫০ লাখ হবে।
সংস্থাটি জানায় সবচেয়ে বেশি খাদ্য সংকট ঝুঁকিতে আছে বিশ্বের ৫ দেশ।এর মধ্যে প্রথম স্থানে আছে ইয়েমেন।২০১৫ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধের কারণে দেশটি এমনিতেই দুর্ভিক্ষে আছে তারপর আবার দেখা দিয়েছে মহামারি করোনা ভাইরাস।যেকারণে বর্তমানে দেশটিতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ।ফলে দেশটির জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।

দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) ডাব্লিউএফপি জানায় দীর্ঘ ১ শতকের এক তৃতীয় অংশ গৃহযুদ্ধে থাকা দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দুর্ভিক্ষ কবলিত দেশ।দেশটির ৩ কোটি মানুষের খাদ্য সহায়তায়র উপর নির্ভর করতে হয়। খাদ্য ঝুঁকিতে তৃতীয় অবস্থানে আছে ভেনেজুয়েলা।অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের তেল সমৃদ্ধ এই দেশ।ফলে এক তৃতীয়াংশ মানুষের এখন খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। খাদ্যা সংকটে চতুর্থ ঝুঁকিতে আছে দক্ষিণ সুদান।এবং পঞ্চম অবস্থানে আছে আফগানিস্তান। 

এদিকে সম্প্রতি জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী,  গেল বছরের শেষের দিক থেকেই পঙ্গপালের হানায় পৃথিবীর ১০ শতাংশ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে পড়বে বলে হুঁশিয়ার করেছিল।এ বছরের শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থবির গোটা বিশ্ব। লকডাউনের কারণে কয়েক গুণ বেড়েছে খাদ্য সঙ্কট। আগামী দুই তিন মাস পর পৃথিবীতে প্রতিদিন অন্তত ৩ লাখ মানুষ অনাহারে মারা যাওয়ার আশঙ্কা জাতিসংঘের।আফ্রিকার ৬টি দেশে পঙ্গপালের হানায় ২ কোটি মানুষ খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের একশোরও বেশি দেশে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে গোটা পৃথিবীতে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা ছিল আগে থেকেই। জাতিসংঘের একজন বলেন, আমরা পঙ্গপাল নির্মূলে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছি সেগুলো করোনাভাইরাসের কারণে হওয়া লকডাউনে আটকে আছে। তাই আমরা স্বল্প পরিসরে বিমানের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছি। তবে, এটি প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। তাই এটি বড় ধরনের সংকট তৈরি করবে যার পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না।

পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকলেও করোনার কারণে চলমান লকডাউনে সরবরাহ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ।
জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, সারাবিশ্বে নতুন করে ৩ কোটি মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। তাদের মধ্যে ২ কোটি মানুষকে সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে। আগামী ৩ মাসের মাথায় প্রতিদিন ৩ লাখ মানুষ সারা বিশ্বে খাদ্যের অভাবে মারা যাবেন। এ মৃত্যু করোনাভাইরাসের সাথে সম্পর্কিত নয়।

পাকিস্তান, হংকংসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ অনলাইনে খাদ্যপণ্য সরবরাহ শুরু করেছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত বা স্বল্প আয়ের মানুষের অনলাইনে খাদ্য সংগ্রহ করার সামর্থ্য না থাকায় সংকট কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না- এ মত বিশেষজ্ঞদের।খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, এই সংকটের সময় আমরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবং মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে বিক্রি অন্তত ৭৭ শতাংশ বাড়াতে চাই। এর জন্য আমরা অনলাইনে বিক্রয় আদেশ গ্রহণ এবং মানুষের দরজায় পণ্য পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু করেছি। এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে পর্যাপ্ত উৎপাদন রয়েছে। মজুদ করার প্রবণতা না থাকলে সঙ্কট মোকাবিলা করা সহজ হবে।

৪.

আগেই বলেছি, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে দেড় কোটি মানুষ চরম খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে। বছরের শেষে এ সংখ্যা ২৬ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে মহামারির মধ্যে জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার সরবরাহের তাগিদে খাদ্যপণ্য রফতানি বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছে বিভিন্ন দেশ। একই পথে হাঁটছে এশিয়ার শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশগুলোও। ফলে এ অঞ্চল থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে অনেক দেশ চরম খাদ্য সংকটে পড়বে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।

করোনা মহামারির প্রভাবে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সম্প্রতি ভিয়েতনাম চালের নতুন রফতানি বিক্রয় চুক্তি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। শীর্ষ চাল রফতানিকারী দেশগুলোর তালিকায় ভিয়েতনামের অবস্থান তৃতীয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত চালের রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। ভিয়েতনাম ছাড়াও চালের রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ কম্বোডিয়া। একই আভাস দিয়েছে মিয়ানমারও। অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবেলায় খাদ্যপণ্যটির রফতানি কমিয়ে দিতে পারে দেশটি।
অন্যদিকে অনেক দেশ আবার মনোনিবেশ করেছে বাড়তি আমদানির দিকে। ফিলিপাইন এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ। নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় দেশটি চালের আমদানি বাড়াচ্ছে। করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে বাজারে খাদ্যপণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এ বছর চীন রেকর্ড পরিমাণ চাল কিনতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বজুড়ে চালের রফতানি চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মার্চে থাইল্যান্ডের ৫ শতাংশ ভাঙা চালের রফতানিমূল্য বেড়ে টনপ্রতি ৫১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ২০১৩ সালের পর থেকে পণ্যটির সর্বোচ্চ রফতানি মূল্য। মেক্সিকো থেকে মৌসুমি খামারিদের অভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ফসল উৎপাদন ঝুঁকিতে রয়েছে।

এদিকে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিলের (আইজিসি) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার বেড়ে ২২৩ কোটি টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। চলতি মৌসুমে যার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২১৯ কোটি টন। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে আগামী মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার বাড়তে পারে চার কোটি টন। সংস্থাটি জানিয়েছে, করোনা মহামারির প্রকোপে কয়েকটি খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক চাহিদায় স্বল্পমেয়াদে তীব্র উত্থান দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে চাল ও গমজাতীয় খাদ্যপণ্যের বাজারে। এক কথায় করোনা মানুষের জীবনে বয়ে আনবে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।

( লেখক : ইমরান হুসাইন, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর