ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনকালীন সময়ে আবাসিক হলগুলো খোলা থাকলেও ব্যতিক্রম সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দীর্ঘ ১৩ বছর পর আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির তৃতীয় সমাবর্তনকালীন সময়ে আবাসিক হলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
সমাবর্তনে হল বন্ধ রাখার জন্য শীতকালীন ছুটিও পিছিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে সমাবর্তনে হল খোলা রাখার দাবিতে দীর্ঘ ১৮ দিন যাবত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও সিদ্ধান্তে অনড় প্রশাসন। এ নিয়ে ১৩ বছরের অপেক্ষার সমাবর্তন অনেকটাই রঙ হারিয়েছে বলে দাবি সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, এবছরের শীতকালীন ছুটি ছিল ১৮-৩১ ডিসেম্বর। তবে গত ১৮ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় এ বছরের শীতকালীন ছুটি পিছিয়ে আগামী ৫ থেকে ১৬ জানুয়ারি ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শীতকালীন ছুটিতে হল খোলা রাখাসহ বছরের ৩৬৫ দিনই হল খোলা রাখার দাবিতে গত ২০ নভেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করে। হল বন্ধের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে পরিবহন অবরোধ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আলটিমেটাম দেওয়াসহ নানাধরনের কর্মসূচিও পালন করে শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও অনড় প্রশাসন।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গত সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধুমাত্র ৫-৮ জানুয়ারি হল বন্ধ রাখা হবে এবং সমাবর্তন পরবর্তী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রভোস্টের অনুমতি সাপেক্ষে যাতে হলে অবস্থান করতে পারেন সে বিষয়ে সিন্ডিকেটকে অনুরোধ করা হবে। তবে তার এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে আন্দোলনকারীরা। ৮ ডিসেম্বর শাবিপ্রবি উপাচার্যের সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে আন্দোলনকারীদের। একটি সূত্র জানিয়েছে, হল বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে আন্দোলন চালিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ৯ ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই সমাবর্তন উপলক্ষে হল বন্ধ করা হয়নি।
সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রপতির ক্যাম্পাসে আগমনের সময় থেকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করা পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় আবাসিক হলসমূহের গেইটে তালা ছিল। এ সময় আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা হলের ভেতর অবস্থান নেয়। তবে কিছুদিনের জন্য হল বন্ধের সিদ্ধান্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই নেওয়া হয়নি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে হল খোলা থাকলেও শাবিপ্রবিতে হল বন্ধের ঘোষণায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রদের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী আতাউর রহমান বলেন, সমাবর্তনে বর্তমান ছাত্ররা সিনিয়রদের সাথে আড্ডা দেবে, বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করবে। অথচ হল বন্ধের কারণে তারা এসব থেকে বঞ্চিত হবে।
সমাবর্তন নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সাবেক শিক্ষার্থী মো. রহিম উদ্দিন তালুকদার তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, যখন শুনলাম সমাবর্তনের সময় হল বন্ধ থাকবে এবং বর্তমান ছাত্ররা ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না তখনই মন খারাপ হলে গেল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কীভাবে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
অন্যদিকে শাবিপ্রবিতে যেকোনো ছুটিতে হল বন্ধ করে দেওয়া এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগের গ্রুপিং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে সাবেক বির্তকিত উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া তৎকালীন হল প্রভোস্টদের পরামর্শে ২০১৬ সাল থেকে হল বন্ধের রীতি চালু করেন। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের সময়ে ক্যাম্পাসে অন্যান্য কার্যক্রমে গতিশীলতা আসলেও হল প্রভোস্টদের নানা অযুহাতে হল বন্ধের রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার ফলে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
তবে অনেকেই মনে করছেন ছাত্রদের দায়িত্ব না নিয়ে প্রভোস্টরা নিজেদের অপরাগতা ঢাকতেই বারবার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে প্রশাসন। এদিকে মেয়াদ শেষ হলেও উপাচার্যের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করে আসছেন সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এস এম হাসান জাকিরুল ইসলাম। তিনি সাবেক উপাচার্যের সময় সরাসরি হল বন্ধের সাথে জড়িত ছিলেন। এবারের হল বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের কারণে এবার হল বন্ধ রাখা হচ্ছে।
বর্তমান সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর শীতকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন সময়ে হল বন্ধ থাকে। তাই এবারও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে হল বন্ধ থাকবে। তবে গত বৃহস্পতিবার কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে বলেন, শুধুমাত্র আগামী ৫ থেকে ৮ জানুয়ারি হল বন্ধ রেখে বাকি দিনগুলোতে হলে থাকার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হবে। সুপারিশের ভিত্তিতে তিন দিন হল বন্ধ থাকলে এ তিন দিন ছাত্রীরা কোথায় থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোষাধ্যক্ষ তাদেরকে কি কথা দিয়েছে তা আমি জানি না।
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষটি যেহেতু বিভিন্ন মহলে আলোচনাধীন তাই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।