২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, সকাল ১১:১৫
শিরোনাম :
শিরোনাম :
ইসিটি : ধর্মীয় ঐক্য, সামাজিক উন্নয়ন ও গবেষণার এক অনন্য যাত্রা ।। ইসিটি’তে ‘‘পবিত্র বাইবেল ও আইনের দৃষ্টিতে নির্যাতিতদের করণীয়’’ শীর্ষক আলোচনা সভা ।। ।। অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ফেয়ার ২০২৫ ।। বর্ণিল সাজে সেজে উঠেছে ডাইভার্সিটি প্লাজা নববর্ষের অনন্য স্মারক গ্রন্থ নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে সহস্রকণ্ঠে বিশ্ববাঙালির বর্ষবরণ বিশ্বকে অগ্রগামীকল্পে অনন্য ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্ক ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে উঠবে—জননেতা আমিনুল হক সাব-অল্টার্ন তাত্ত্বিক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন ৮ ফেব্রুয়ারি ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিস্টান ট্রাস্ট (ইসিটি) ও সেন্ট থমাস চার্চ এর যৌথ সেমিনার- নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ‘সিসিডিবি’র এডভিন বরুণ ব্যানার্জি কর্তৃক পবিত্র কোরান অবমাননা
নোটিশ :
Wellcome to our website...

ইসিটি : ধর্মীয় ঐক্য, সামাজিক উন্নয়ন ও গবেষণার এক অনন্য যাত্রা

রিপোর্টার
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদন :
বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সমাজের অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিষ্টান ট্রাস্ট (ইসিটি)। ১৯৮৬ সালে ট্রাস্ট আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ধর্মীয় সহনশীলতা, সমাজসেবা এবং শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সহাবস্থান তৈরি করাই ছিল এই ট্রাস্টের মূল লক্ষ্য, যা সময়ের সাথে বহুমাত্রিক রূপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১০ এ অবস্থিত।
গবেষণা ও জ্ঞানের পরিসর
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ‘ইসিটি’ শুরু করেছে এক যুগান্তকারী গবেষণা প্রকল্প—“জাতীয় জীবনে খ্রিষ্টানমণ্ডলীর অবদান”। পাঁচ বছর মেয়াদি এই গবেষণার বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা, যা সংগঠনের নিজস্ব তহবিল এবং দেশের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। এই গবেষণা শুধুমাত্র খ্রিষ্টানদের ঐতিহাসিক অবদান তুলে ধরবে না, বরং জাতীয় পরিচয়ে খ্রিষ্টানদের অবিচ্ছেদ্য অংশীদারিত্বের দিকগুলোও তুলে ধরবে।
সাংগঠনিক কাঠামো ও নেতৃত্ব
‘ইসিটি’র বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় নেতা এবং সমাজকর্মী। নেতৃত্বে আছেন বোর্ড চেয়ারম্যান রেভারেন্ড ইম্মানুয়েল মল্লিক, সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস, এবং ট্রেজারার জন সুশান্ত বিশ্বাস। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিশপ সাইমন বাড়ৈ, তন্দ্রা রাণী সরকার এবং মোহাম্মদ আফিজুর রহমান। এই বহুমাত্রিক নেতৃত্বই ইসিটিকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, দায়িত্বশীল ও প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
সামাজিক কর্মকাণ্ড ও সম্প্রসারণ
‘ইসিটি’ কেবল গবেষণা নয়, সামাজিক উন্নয়নেও সক্রিয়। স্কলারশিপ ফান্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে বিশ(২০) জন দরিদ্র ও প্রান্তিক খ্রিষ্টান শিক্ষার্থীকে সহায়তা প্রদান করা হয়, যার মধ্যে নার্সিংয়ে অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের জন্য কাউন্সেলিং সেশন, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রুপ ওয়ার্কিং এবং ধর্মীয় সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ।
২০২৩-২৫ সময়কালে সংগঠনের উল্লেখযোগ্য কিছু কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:
● সেমিনার ও আলোচনা সভা : প্রায় আড়াই বছরে অনুষ্ঠিত হয়েছে দশের অধিক সেমিনার ও আলোচনা সভা। যার মধ্যে “শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ”, “বিচারহীনতা” এবং “নির্যাতিতদের করণীয়”—এই বিষয়ে আয়োজন বিশেষভাবে গুরুত্ববহ। খ্রিষ্টান পালক-পুরোহিতদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও ‘ইসিটি’ নিয়মিত সেমিনারের আয়োজন করে থাকে। তবে বর্তমান যুবসমাজের উন্নয়নই তাদের মূল লক্ষ্য।
● ত্রাণ কার্যক্রম: ২০২৪ সালের আগস্টে নোয়াখালীতে এক হাজার পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
● প্রযুক্তি শিক্ষা: কম্পিউটার ও আইটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু রয়েছে গরিব খ্রিষ্টান যুবসমাজের জন্য।
● সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় ক্যাম্প: যৌতুক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা কর্মসূচি চলমান।
● ভবিষ্যত কর্মসূচি : গরিব ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ‘ইসিটি’ ভবিষ্যতে কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। নিম্নবর্গ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এসব সেবামূলক কাজে সমাজের উচ্চবর্গ জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণও প্রত্যাশা করে সংগঠনটি। ‘খ্রিষ্টান মণ্ডলীর ইতিহাস’ এবং ‘বাংলাদেশের পালক-পুরোহিতদের জীবনী’ শিরোনামে একাধিক প্রকাশনার পরিকল্পনাও রয়েছে সংগঠনটির।
যোগাযোগ ও প্রচারণা
প্রযুক্তি যুগে সংগঠনটির উপস্থিতিও সুসংহত। ‘ইসিটি’র ওয়েবসাইট (https://ectbd.org) এবং ফেসবুক পেজ নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়। ২০২৪ সালে ‘ইসিটি নিউজ’ নামে একটি নিয়মিত প্রকাশনাও চালু করেছে, যা তাদের কার্যক্রম ও দৃষ্টিভঙ্গি দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সংস্কৃতি চর্চা
‘ইসিটি’ আন্তঃধর্মীয় সংলাপেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধির জন্য সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। খ্রিষ্টীয় ঐতিহ্যকে লালন করে এমন নাটক, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও সাহিত্যসভাও তাদের নিয়মিত কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত।
একটি সর্বজনীন চেতনার প্রতীক
‘ইসিটি’ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিভাজনের দেয়াল ভেঙে ঐক্যের ভিত্তি গড়ে তুলছে। তারা বিশ্বাস করে—বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্য এবং এই মূল্যবোধই বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি সহনশীল, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখছে।
উপসংহার
আজকের বাংলাদেশে যেখানে ধর্মীয় বিভাজন ও অসহিষ্ণুতার শঙ্কা রয়েছে, সেখানে ‘ইসিটি’ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি কেবল একটি খ্রিষ্টান ট্রাস্ট নয়—একটি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির প্ল্যাটফর্ম, একটি সামাজিক অঙ্গীকারের প্রতীক এবং একটি গবেষণা-নির্ভর উন্নয়ন চিন্তার বাহক। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বলা যায়, ‘ইসিটি’ বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোতে ইতিবাচক পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর