২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, সকাল ৯:০৭
নোটিশ :
Wellcome to our website...

ওমিক্রন নাম নিয়ে কিছু কথা

রিপোর্টার
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন

মোঃ আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব

অ) অতিমারী কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রায় দু’বছর অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। মিউটেশনের মাধ্যমে জিন বিন্যাস পরিবর্তনপূর্বক রূপান্তরিত ভ্যারিয়েন্ট (ঠধৎরবহঃ) ইতোমধ্যে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত যে ভ্যারিয়েন্টটি উদ্ভুত হয়েছে, তার নাম দেয়া হয়েছে “ওমিক্রন”। এখন প্রশ্ন হলো যে, এই নামটি কিভাবে এবং কেন দেয়া হলো? সে ব্যাপারে বলার পূর্বে সম্যক ধারণার জন্যে কিছু ব্যাকগ্রান্ড আমাদের অবহিত হওয়া আবশ্যক বলে মনে করি। এ পেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, বর্তমান বিশে^র প্রায় সাড়ে আটশত কোটি লোকসহ জীবজন্তু, বস্তু, রোগ-ব্যাধি, ঔষধ, ব্রান্ড, ইত্যাদি নানা প্রপঞ্চে পৃথক পৃথক নামে বিদ্যমান। এক্ষেত্রে কমন নাউন তো আছেই; আমি প্রোপার নাউনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সত্যি কথা বলতে কি, এ সকলগুলো যদি ভিন্ন ভিন্ন নামে নামকরণ করা না হতো, তাহলে সামিগ্রক কর্মকান্ড বিশৃঙ্খল হয়ে পড়তো এবং বলতে গেলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতো। মূলত নামের সাথে জীব বা বস্তু বা বিষয়ের একটি গভীর যোগসূত্র আছে। পৌন:পুনিকভাবে শব্দে বা স্মরণে নির্ধারিত নামের জীব বা বস্তুর অভ্যন্তরে গেঁথে যায় এবং একই সূত্র ধরে এর বৈশিষ্ট্যের বর্হিপ্রকাশ ঘটে ও পৃথক আমেজে অবস্থান নিয়ে থাকে। আর সেই সংশ্লিষ্ট নাম কানে আসলে বা চোখে দেখলে, সেটির সবকিছু হৃদয় আঙ্গিনায় জাগ্রত হয়ে উঠে। তাছাড়া কোন কিছুর নাম বললেই নির্ধারিত প্রপঞ্চে দেহ ও মন-চোখে ভেসে উঠে। আর এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, সব নাম যদি একই রকম হতো। তাহলে আন্তঃ যোগাযোগ এবং বর্হিযোগাযোগ ভেঙ্গে পড়তো। বলতে গেলে সবকাজেই ছন্দপতন হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। উদহারণস্বরূপ বলা যায় যে একটি পালে যখন শত শত পশু থাকে, সেগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম থাকে না। আর চেহারা প্রায় একই রকম বিধায় একটি হারিয়ে গিয়ে অন্য পালে মিশে গেলে তা খুজে পাওয়া দুস্কর। এদিকে সূ²ভাবে যদি বলি, তাহলে প্রতীয়মান হয় যে ভিন্ন ভিন্ন নামের কভারে সেই প্রপঞ্চ মস্তিস্কের নিউরনে প্রোগ্রামিংয়ের আদলে সূচিত হয় বিধায় কোন কাজের ব্যাপারে এগুলোর নাম বলার সাথে সাথে সেগুলো হৃদয়পটের মনিটরে ভেসে উঠে। আর তখন প্রয়োজনমতো ব্যবহারের পথ সুগম হয়ে থাকে। কিন্তু ভিন্ন নাম না থাকলে সে সুযোগ থাকতো না বিধায় কালক্ষেপন সহ সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কোন শব্দ থেকে নতুন নাম সৃষ্টি করতে হলে সেই শব্দের এক বা দুটি আদ্য অক্ষর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন- – COVID-19, এখানে CORONA এর CO, VIRUS এর VI, DISEASE এর D. . আর যেহেতু এই করোনা-২০১৯ সালে শেষে দিকে শুরু হয়েছে। তাই সময়টা ধরে রাখতে ১৯ যোগ করা হয়েছে। যাহোক, ভিন্ন ভিন্ন নামের আওতায় অনেক দিক থেকে সুফল পাওয়া যায়। এই ধরুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম, উড়োজাহাজের ফ্লাইট নম্বর, রোগের নাম, ঔষধের নাম, ইত্যাদি। মূলত পৃথক পৃথক নামের সুবাদে সবকিছুই আমাদের নখদপর্ণে থাকে। আসলে নাম হলো যে কোন প্রপঞ্চের স্থায়ী পোশাক, যার মাধ্যমে চোখ-মন দিয়ে চিহ্নিত করা যায়। তাই বোধ হয়, জনৈক ইংরেজ লেখক বলেছিলেন,“ Name is the permanent dress of anything, as which paves the way for easy identification”| এদিকে ভিন্ন ভিন্ন নাম হলো ইতিহাসের সৌন্দর্য এগুলো কালের পরিক্রমায় প্রজন্মের পর প্রজন্মের হাত ধরে সুদূর অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের দিকে অগ্রগামী। আর এটাই অমোঘ সত্য ও বাস্তব কথা।
আ) কোন জীবজন্তু বা বস্তু বা অদেখা প্রপঞ্চের নাম দেয়ার পদ্ধতিগত বিষয়াদি তথা প্যারামিটার বহু ধারায় হয়ে থাকে। যেমন সংস্কৃতি, ধর্ম, আবিষ্কারক, ধর্মঅবতার, সময় বা কাল, প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব, ঘটনা, ভাষা, বর্ণমালা ভিত্তিক ফরমূলার চিহ্ন, ইত্যাদি, ইত্যাদি। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ফরমুলায় সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয়েছে গ্রীক ভাষা এবং একই সাথে ইংরেজীও সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর ল্যাটিন, প্রাচীন হিব্রু ভাষা, ইত্যাদিও একই আমেজে বিদ্যমান। এক্ষেত্রে সংগতকারণেই সম্যক ধারণার জন্য কেবল ২৪টি অক্ষরসম্বলিত গ্রীক বর্ণমালা নিয়ে তুলে ধরা হলোঃ

গ্রীক বর্ণমালা

উপর্যুক্ত গ্রীক বর্ণমালা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এখানে ২৪টি অক্ষর। আর অক্ষরগুলোর প্রায় সব কয়টিই কম-বেশি বিজ্ঞানের চিহ্ন ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে এক্ষেত্রে এই বর্ণমালার ব্যবহার এত কেনা? এ প্রেক্ষাপটে যতদূর জানা যায়, তাতে প্রতিভাত হয় যে বিজ্ঞানের যাত্রা শুরুর প্রথম লগনে গ্রীক সভ্যতা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগামী ছিল বিধায় তুলনামূলক অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। অবশ্য ইংরেজীও পিছিয়ে নেই। যাহোক, বিজ্ঞানের সব শাখায় গ্রীক বর্ণমালা অবস্থান নেয়ার সুবাদে চিকিৎসা বিজ্ঞানও এদের মতো করে জায়গা জুরে নিয়েছে। এই যে আমাদের মূল আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ওমিক্রন। তাই এর কথাই ধরা যাক। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের শেষ প্রান্ত থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোভিড-১৯ বার বার ভোল পাল্টিয়েছে। এ সূত্র ধরে জিন বিন্যাস পরিবর্তনপূর্বক যে স্বরূপ দাঁড়িয়েছে, সেই পরিবর্তিত রূপ হলো একেকটি ভ্যারিয়েন্ট। সংগতকারণেই এই প্রত্যেকটি ভ্যারিয়েন্টকে নামকরণ করা হয়েছে গ্রীক বর্ণমালা থেকে। ইতোমধ্যে উদ্ভুত নতুন ভ্যারিয়েন্টকে গ্রীক বর্ণমালার আলফা থেকে শুরু করা হয়েছে। নামকরণের দিক দিয়ে “আলফা”, “বেটা”, “গামা”, ডেল্টা, ইত্যাদি সমান্তরাল ভাবে চলছে এবং এই ভাবে “নূ” পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। এর মধ্যে আতঙ্ক হিসেবে নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত করা হয় আফ্রিকার বতসোয়ানায়। আর আগের ডেল্টা নামক একটি ভ্যারিয়েন্ট বিপদজনক হলেও তার চেয়ে ভয়ঙ্কর নাকি এই ভ্যারিয়েন্ট, যা জিন বিন্যাস ৫০ বারের মতো এবং একই সাথে স্পাইকের বৈশিষ্ট্য বদলিয়েছে ৩০ বারের অধিক। ইতিমধ্যে গবেষণালব্দ তথ্যমতে জানা যায় যে, আগের কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্টগুলির সাথে এর তেমন কোন মিল নেই। তবে যে সব ভাইরাসের কারণে ঠাÐা জ¦র আসে, তার সাথে বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে মিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা এর নামকরণ করেন গ্রীক বর্ণমালার ১৫তম অক্ষর “ওমিক্রন” হিসেবে। নামকরণের ধারাবাহিকতায় ১৩তম অক্ষর “নূ” হওয়া কথা এবং এর পরের অক্ষর হলো “শি”। কিন্তু তা না করে টপকিয়ে ১৫তম অক্ষর ওমিক্রণ করা হলো কেন? সে প্রশ্নের জবাবে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা হলো এই ভ্যারিয়েন্টের নাম যদি “নূ” দেয়া হতো, তাহলে পরবর্তী স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্টের নাম দিতে হতো “শি”। আর যেভাবে একটার পর একটা ভ্যারিয়েন্ট প্রকাশ্যে উঠে আসছে তাতে প্রতীয়মান যে, সে সময় বেশী দূরে নয় নতুন উদ্ভুত ভ্যারিয়েন্টের নাম শি দেয়ার বিচার্য বিষয়টি জরুরী হয়ে দাঁড়াতো। এদিকে চীনের প্রেসিডেন্টের নাম শি জেন পিং। আর তাঁর নামের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে দুই অক্ষর বাদ দিয়ে এই ১৫তম অক্ষরের নামে ওমিক্রণ করা হয়েছে।
ই) পরিশেষে বলতে চাই যে এই ওমিক্রন স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্ট যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, আগামীতে আর যেন নতুন কোন স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্ট আত্মপ্রকাশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে বিশ^বাসীকে একযোগে সচেষ্ট হতে হবে। আর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রণ নিয়ে বিশ^জুড়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার শেষ নেই। তবে এর ভয়াবহতা নিয়ে এ পর্যন্ত পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত সহ প্রায় ৪০টি দেশে ওমিক্রণ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বিধায় এ ব্যাপারে আমাদের দেশের সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে মানা সহ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। আর একটা কথা, ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে যখন করোনা শুরু হয়। তখন যেমন সঠিক প্রস্তুতির অভাবে লেজে গোবরে অবস্থা তৈরী হয়েছিল, সে রকম যেন না হয়। যদিও পরবর্তীতে সরকারের সরাসরি পদক্ষেপের সুবাদে যেমন আক্রান্তের আশংকা করা হয়েছিল, তেমনটি হয়নি।

 

লেখক-বিশিষ্ট অথর্নীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর