জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার এ নেতৃত্ব দেশের বাইরেও প্রশংসিত। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিভিন্ন জায়গায় স্থান করে নিয়েছেন। তারা সংশ্লিষ্ট সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। বেঁচে থাকলে শেখ রাসেল আজ দেশকে নেতৃত্ব দিতেন। পরিবারের অন্যদের মতো দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতেন। কিন্তু ঘাতকরা সেদিন শিশু শেখ রাসেলকেও ছাড়েনি। মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ব্রাশফায়ার করে তাকে হত্যা করে। শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে তার কাছ থেকে যে সার্ভিস পেতাম, তা থেকে আজ আমরা বঞ্চিত হলাম। শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এমনটি বলেছেন বক্তারা।
রবিবার(১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত ‘শিশুদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ’ সেমিনারের বক্তারা এসব কথা বলেন। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে জগেশ রায় ও সাথি হালদারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলামিস্ট মিথুশিলাক মুরমু।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের খুনীদের ধারণা ছিল- বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী কেউ যদি বেঁচে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের অপকর্মের বিচার করা হবে। ঘাতকরা বাংলাদেশকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি হতে দেননি। তিনি ঘাতকদের জবাব দিয়েছেন, বিচার করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। তার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকেও মানুষ তথ্য জানতে পারছে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম শিশুদের নিয়ে কাজ করে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকের ধমনীতে যে বঙ্গবন্ধুর রক্ত রয়েছে, তিনি ব্রিটিশ এমপি হয়ে প্রমাণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাই বিভিন্ন জায়গায় স্থান করে নিয়েছেন। এরা সবাই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির সদস্য। শেখ রাসেল যদি আজ জীবিত থাকতেন, তিনিও এভাবে নজির স্থাপন করতেন। কেননা, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি ছিল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মতো। সেখানে রাজনীতির চর্চা হতো এবং পরিবারের সবার মধ্যে রাজনৈতিক মনোভাব ছিল। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং জগেশ রায় ও সাথি হালদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিথুশিলাক মুরমু, স্বাগত বক্তব্য দেন ফোরামের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস।
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিল্টন বিশ্বাস বলেন, শিশুদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে হলে সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে বার বার জেল দিয়ে তার শিশু সন্তানকে মমত্ববোধ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। সেদিনের ঘাতকদের ঘৃণা করতে চাই। সেই সঙ্গে শেখ রাসেলের উদ্যম স্মৃতি মনে রাখতে চাই।
সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রত্যেক সদস্য বেঁচে থাকলে, তাদের কাছ থেকে আজ আমরা অনেক কিছু পেতাম। শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে তার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব পেতাম। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের কারণে আজ যেখানে দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, সেখানে শিশুদের জন্য নিরাপদ দেশ কিভাবে দেখব। শেখ রাসেলের নামে যে সকল প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে, সেগুলো হলে দেশের শিশুরা উপকৃত হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান বলেন, শেখ রাসেলের মৃত্যু এতটা নির্মম, ভয়াবহ যে, জন্মদিনে আনন্দ আসে না। খুনীরা এতটাই বর্বর ছিল রাসেলকে মায়ের কাছে নেবে বলে ব্রাশফায়ারে হত্যা করেছে। গোটা বিশ্বের শিশু নির্যাতন ও হত্যার বিরল প্রতীক শেখ রাসেল। রাসেল ভবিষ্যতের প্রতীক ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার বলে প্রমাণ দিচ্ছেন। রাসেল বেঁচে থাকলেও নেতৃত্ব দিতেন। এই খুনীদের ক্ষমা করার সুযোগ নেই, তাদের ধরে এনে দেশের মাটিতে বিচার করতে হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ মশিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু কারাভোগের সময় জেলে বসে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকতেন। অথচ সেই বাংলাদেশে তার সন্তানের নিরাপত্তা তো দূরের কথা, তাকে চিরতরে হত্যা করা হলো। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে হত্যা করেছে ঘাতকরা। সেই বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধারই একমাত্র খুনীদের জবাব। যেটি প্রধানমন্ত্রী দিতে পেরেছেন। বৈষম্যহীন সমাজ একমাত্র শিশুদের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারে। তিনি বলেন, শেখ রাসেল অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন।