সুইটি রাণী বনিক
বিশ্বায়নের যুগে তথ্য-প্রযুক্তির দাপট প্রবল। এই দাপট সমাজ ও সভ্যতাকে উন্নত বিশ্বের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই সকলের ধারণা বা কাম্য । জীবনযাত্রার মান বাড়াতে যেমন বিশ্বে সকল কিছুর ব্যাপক উন্নয়নে প্রচার, প্রসার ও প্রচেষ্টা চলছে তেমনি আমাদের জীবনমান বা অধিকার ও কর্তব্যবোধকে সচেতন করতে এবং ভ্রান্ত ধারণা থেকে সুস্থ্ সুন্দর চেতনায় ফেরাতে আমাদের জানতে হবে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন।
বিশেষ করে সমাজের অধিকাংশ লোকের কথাই বলা যায়, যারা সব কিছুতে জ্ঞানী বা সচেতন হলেও তারা কিন্তু, ঘরে-বাইরে নারীদের প্রতি শোষণমূলক আচরণ করে থাকে, যার ফলে নারীরা তাদের প্রতিভার বিকাশ ও তাদের মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারে না। একজন নারী যতই শিক্ষিত হোক না কেন, যদি তার অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে তথা আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হয় তবে তারা বঞ্চিত হয়ে থাকে। তবে এই শোষিত-বঞ্চিত নারী জাতির কর্ণধারকে বা সমাজকে কি দিতে পারে জাতির কাছে প্রশ্ন থেকে যায়। তাই লেখাপড়ার প্রথম থেকে ‘আইন পাঠ’ নারী-পুরুষ, সকলের জন্য বাধ্যতামূলক হওয়া প্রয়োজন।
নারীর প্রতি পুরুষের, পুরুষের প্রতি নারী কি ধরনের অধিকার-কর্তব্য, ন্যায়-নীতি, দায়-দায়িত্ব, ভরণ-পোষণ, আদান -প্রদান, প্রতিশ্রুতি-প্রতারণার ব্যাপারে সকল প্রকার সচেতনতা একমাত্র আইনপাঠের মাধ্যমেই জানা সম্ভব। তাই স্কুল, কলেজ পর্যায় থেকেই একটি আইন বই পাঠ্য করা দরকার।
একটি মেয়ে স্কুল থেকে যখন ঝড়ে য়ায় তখন সে বিবাহ, যৌতুক বা নানারকম নির্যাতনমূলক পরিস্থিতির শিকার হলে অজ্ঞতাবসত নিয়তি বলে মেনে নেয়। নিয়তির মুখের দিকে তাকিয়ে তখন ফুলের মত অনেক নিষ্পাপ জীবন অকালে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। হতে পারে সেটা গ্রামীণ কিংবা শহুরে জীবনে- বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশে।
বাবা তার মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেয়, স্বামী তার স্ত্রীকে জোর করে গৃহবন্দি করে রাখে। সামাজিক, নৈতিক ও স্বাধীন জীবন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়; কুচক্রী সমাজ এখনো নরীর উন্নয়নে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়! তাই সর্ব শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য আইনের জ্ঞান, স্কুল কলেজ পর্যায় থেকে জরুরি বলে আমি মনে করি।
সুতরাং, স্কুল পর্যায় থেকে একটি আইন বিষয় পুস্তক পাঠ্য হলে নারী-পুরুষ সকলেই সচেতন ও সুশৃঙ্খল জীবন-ধারণ ও সমাজের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। বিষয়টি বিশেষ বিবেচনার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ও সর্ব সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ( লেখক : প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক, এম.এ. বাংলা , এল.এল.বি, swityrani17@gmail.com)