প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর আগামী ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তন। ২০০৫ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর এই প্রথম সমাবর্তনের স্বাদ পেতে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর সমাবর্তন দিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই সমাবর্তনকে ঘিরেই এক সময় শিক্ষার্থীদের দ্বিধার ঘোরে ফেলেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন । শুরু করেছিল টালবাহানা । এই সমাবর্তনকে ঘিরে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উচ্ছাস প্রকাশ করছেন ।
বহুল প্রতিক্ষিত এই সমাবর্তন পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের মাঠেও নামতে হয়েছিল । শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পরে বাধ্য হয়ে সমাবর্তনের আয়োজনের লক্ষ্যে তৎকালীন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমানকে আহ্বায়ক এবং প্রশাসন ও একাডেমিক অ্যান্ড কাউন্সিল শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে সদস্য-সচিব করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাবর্তনের স্থান, সময় ও পরিকল্পনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নির্ধারণ করে ভিসি বরাবর সুপারিশ প্রদানের জন্য কমিটিকে নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের জন্য গত ১ মার্চ থেকে ১৬ মে পযর্ন্ত সমাবর্তনের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন । এ সময়ের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন ।
পরপর দুইবার সমাবর্তনের তারিখ পিছিয়ে চলতি সকল অসম্ভবনাকে উপেক্ষা করে চলতি মাসের ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তন ।
আসন্ন সমাবর্তনকে সামনে রেখে ধূপখোলা মাঠে নির্মাণ করা হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার বর্গফিটের প্যান্ডেল। দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্যান্ডেল কাজে নিয়োজিত কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ভবনগুলো রঙ করাসহ আরও বিভিন্ন কাজ । কলা অনুষদে তৈরি করা হচ্ছে বড় স্টেজ ।
ব্যস্ত সময় পার করছে সমাবর্তনের সাথে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তর ও বিভাগগুলো। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও বিএনসিসি, রোভার স্কাউটদের প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র হতে জানা যায়, সমাবর্তনে একজন শিক্ষার্থী কেবল একটি সনদের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক ডিগ্রি অর্জনকারীরা সমাবর্তনের পর ডিগ্রির সনদ তুলতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তনে স্নাতক ১১ হাজার ৮৭৭ জন, স্নাতকোত্তর ৪ হাজার ৮২৯, এমফিল ১১, পিএইচডি ছয় ও ইভেনিং প্রোগ্রামের ১৫৭৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবেন। এরমধ্যে ছেলে ১৩ হাজার ৭৬২ ও মেয়ে ৪ হাজার ৫৫৫ জন।
রেজিস্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়, সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটরা ৭, ৮ ও ৯ জানুয়ারি অফিস চলাকালীন (সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা) সময়ে স্ব-স্ব বিভাগ হতে কস্টিউম, ব্যাগ ও গিফট সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়াও গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনের দিন (১১ জানুয়ারি) বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত, ১২ জানুয়ারি ও ১৩ জানুয়ারি সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত স্ব-স্ব বিভাগ হতে মূল সনদ গ্রহণ করবেন। উল্লেখিত তারিখের মধ্যে সনদ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে, পরবর্তীতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে মূল সনদ গ্রহণ করা যাবে।
সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া সমাবর্তন গাউন শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে হচ্ছে না। সমাবর্তন স্থলে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের চাপ সামলাতে সকাল ৮টা থেকেই ভেন্যুতে প্রবেশ করার ব্যবস্থা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ।
১১ জানুয়ারী বেলা ১২টায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হবে। সমাবর্তনের বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিবেন পদার্থ বিজ্ঞানে বাংলাদেশের একমাত্র ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুন কুমার বসাক।
সমাবর্তন ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন । নিরাপত্তার জন্য মাঠে পুলিশ,এন এস আই, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস সার্বক্ষনিক অবস্থান করছে ।
ধুপখোলা মাঠে অনুষ্ঠান শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ।
নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন,সার্বক্ষণিক পুলিশ হেড কোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্টপতি থাকবেন এজন্য নিরাপত্তার কোন কমতি নেই।
সমাবর্তনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড.মীজানুর রহমান বলেন, এটি আমাদের প্রথম সমাবর্তন নতুন অভিজ্ঞতা। এর পর থেকে প্রতিবছর সমাবর্তন হবে। আমাদের সবগুলো কমিটি খুব ভালোভাবে কাজ করছে এবং আমাদের প্রস্তুতির কোন কমতি নেই। সকলের সহযোগিতায় একটা সফল সমাবর্তন দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ।