৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, রাত ১১:১০
নোটিশ :
Wellcome to our website...

মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্য ঘিরে কিছু কথা

মোঃ আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব ।। ভার্সিটি নিউজ
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন

প্রথম পর্ব

এই তো জুলাই মাসের (২০২২) মাঝামাঝি পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অবহিত হই যে, অত্যাধুনিক শক্তিশালী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ কর্তৃক তোলা ১ হাজার ৩৫০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের বিরল রঙিন ছবি প্রকাশ করেছে। এটি নিয়ে সারা দুনিয়া হই চই পড়ে গেছে। আরও নাকি ১ হাজার ৪০০ কোটি বছর আগের ছবি সহসা প্রকাশ করবে, যা মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদি বিন্দুর কাছাকাছি। শুধু তাই নয়, এগুলোর গবেষনালবদ্ধ নিয়ামকের ফলশ্রুতিতে নাকি অতীতের গোড়ার সবকিছু দেখা সম্ভব হবে; যেমন প্রথম মানব মানবী (আদম হাওয়া), শ্রীকৃষ্ণ, সক্রেটিস, এরিস্টেটল, গৌতববুদ্ধ, নবী করীম (সঃ) প্রমুখসহ আদিম সকল জীব ও বস্তুতাদি। তখন বিজ্ঞানের ছাত্র না হলেও লেখক হিসেবে উৎসুক মনে সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র, ইন্টারনেট থেকে তথ্যাদি ও বই জোগাড় করে লিখতে সচেষ্ট হই। বস্তুতঃ এই অবনিতে মনুষ্যজীবের ঊষালগ্ন থেকেই সৃষ্টিকে ঘিরে চিন্তা ভাবনার শেষ নেই। বলতে গেলে দিবানিশির সর্বসময় উদ্ভুত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চাঁদ সুরজ, গ্রহ নক্ষত্র, ছায়াপথ, নীহিরিকা, ইত্যাদি সম্বলিত আকাশের দিকে চেয়ে সৃষ্টির আদি রহস্য জানার প্রয়াস চলে আসছে। এদিকে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো শত প্রশ্নের আড়ালে জানার অদম্য ইচ্ছা। শুধু তাই নয়, এই ইচ্ছা প্রশমিত করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টার এতটুকু কমতি নেই। আর আদি থেকেই জ্ঞানী গুণীরা বিশ্বাস করতো যে খালি চোখে আকাশে যতখানি চোখে দেখা যায়, তার চেয়ে অনেক কিছু আছে, যা রহস্যবৃত্ত। এ প্রেক্ষাপটে যাঁর কথা উঠে আসে, তিনি হলেন হ্যান্স লিপাশে। তিনিই প্রথমে দূর আকাশে পর্যবেক্ষণের জন্যে ১৬০৮ সালে একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরী করেন। কিন্তু এটি তেমন কার্যকরী ছিল না। এরপর যাঁর কথা বিজ্ঞান জগতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, তিনি হলেন ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোর্তিবিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক গ্যালিলিও গ্যালিলেই, যিনি ১৬০৯ সালে আকাশে দূরবর্তী তারকারাজি ও গ্রহ পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কার্যকরী দূরবীন তৈরি করেন। অবশ্য তিনি এই যন্ত্রের ধারণা লাভ করেন এক চশমা নির্মাতার কাছ থেকে। আর গ্যালিলিও তাঁর এই দূরবীনের মাধ্যমে বৃহস্পতির উপগ্রহ ও শনির বলয় পর্যবেক্ষণ করেন। ঠিক এর দুই বছর পর অর্থাৎ ১৬১১ সালে ইয়োহানেস কেপলার এমন একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন, যা অনেকটা জ্যোর্তিবৈজ্ঞানিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ন্যায় ছিল। যাহোক, কালের ব্যবধানে দূর আকাশে পর্যবেক্ষণের নিমিত্ত অধিকতর কার্যকারিতাসহ দূরবীক্ষণ যন্ত্র একের পর এক আবিস্কার হতে থাকে। আর দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ধারাবাহিকতার বিষয়টি পুরোপুরি আলোকপাত করার আগে সংগত কারণেই সবার বোধগম্যতার জন্য দূরবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে কিছুটা বলা আব্যশক বলে মনে করি। আসলে দূরে দেখা বা বীক্ষণের জন্য এই যন্ত্র বিধায় এটিকে দূরবীক্ষণ বলা হয়ে থাকে। এদিকে ইংরেজিতে এটিকে Telescope বলা হয়। এখানে Tele মানে দূর এবং scope এর অর্থ হলো পর্যবেক্ষণের পরিসর বা ব্যপ্তি। মূলত এটি দূরবর্তী বস্তু দর্শনের জন্যে ব্যবহার হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দূরবর্তী বস্তু থেকে নির্গত বিকিরণ সংগ্রহ, পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করার কাজে ব্যবহৃত। আর সাধারণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরী করা হয় লেন্স এবং দর্পণের মাধ্যমে। এতে দূরের বস্তু আরও উজ্জ্বলভাবে এবং স্পষ্টভাবে অবলোকন করা যায়। অবশ্য, বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে ব্যবহৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্র বলতে এমন কৌশলকে বুঝায়, যার সাহায্য সীমিত দিক থেকে আগত তড়িচ্চুম্বক বিকিরণ বা কণা বিকিরণ হিসেবে আগত সকল বিকিরণ সংগ্রহপূর্বক অবলোকন করা যায়।

এবার আসুন আবার আগের কথায় ফিরে যাই। এর মধ্যে প্রায় সোয়া শত বছর পার হয়ে যায়। ১৭৩৩ সালে জেমস গ্রেগরি একটি অ্যাক্রোমেটিক ডাবলেট অবজেক্টিভ তৈরি করেন, যার মাধ্যমে প্রতিসরণ দূরবীনের প্রভুত উন্নতি সাধিত হয়। এদিকে তিনিই প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। অবশ্য নিউটনও একটি প্রতিফলন দূরবীন তৈরি করেছিলেন। আর এ ব্যাপারে নিউটন উল্লেখ করেন যে, প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্রে, যেখানে অবজেক্টিভের স্থানে লেন্স ব্যবহার করা হয়, সেখানেই দর্পণ ব্যবহার করা সম্ভব। কারণ দর্পণে ঠিক একইভাবে সকল বর্ণের আলো প্রতিফলিত হয়। যাহোক, দূরবীন বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র সাধারণত দু’প্রকারের যেমন- ১) মহাকাশ দেখার জন্যে দূরবীক্ষণ এবং ২) ভূমিতে ব্যবহার্য দু’চোখে লাগাবার দুনলা ছোট দূরবীন, তথা বাইনোকুলার। এক্ষেত্রে অত্র প্রবন্ধের অন্যতম পরিসর হলো মহাকাশ দেখার দূরবীক্ষণ যন্ত্র। বর্তমানে আমরা দু’হাজার বাইশ সালে এসে দাঁড়িয়ে আছি। এর মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় অত্যাধুনিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অবদান ভুলবার নয়। কেননা মহাকাশে সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটনে এর মাধ্যমে এতদূর পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছে যে, সাধরণ মানুষ তো দূরে থাকে, ঝানু ঝানু বিজ্ঞানীরাই হতবাক হয়ে পড়েছেন।

 

দ্বিতীয় পর্ব

পূর্বেই বলেছি যে, কালের পরিক্রমায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভুত উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং একই সংগে দূর আকাশে পর্যবেক্ষণের জন্য নানা ধরনের অত্যাধুনিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উদ্ভাবন হয়েছে। কিন্তু যে দু’টি দূরবীক্ষণ যন্ত্র অভাবনীয় গবষেণার জন্যে আমাদের অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে; তা হলো হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এবং জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়েছে স্যাটেলাইট যুগ। এ সূত্র ধরে বিজ্ঞানীরা মহাকাশে কৃত্রিম স্যাটেলাইট পাঠাতে শুরু করেন এবং যার ফলশ্রুতিতে শুরু হয় মহাকাশকে জানার নতুন পদ্ধতি। এরই পথ ধরে ১৯৯০ সালের ২৪ শে এপ্রিল মহাকাশে পাঠানো হয় হাবল টেলিস্কোপ। এর মাধ্যমে স্থাপিত হয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের আরেকটি স্যাটেলাইট টেলিস্কোপের নতুন যুগ। প্রায় ১৩ মিটার লম্বা এবং ৪ দশমিক ৩ মিটার চওড়া ১১ টন ভরের হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, যা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৭ কিলোমিটার উচ্চতায় ঘন্টায় প্রায় ২৭ হাজার কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে দীর্ঘ ৩২ বছর ব্যাপী। প্রতি সপ্তাহে এই টেলিস্কোপ পাঠাচ্ছে প্রায় ১৫০ গিগাবাইট ডেটা। আর এ ডেটা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছে যে মহাবিশ্ব কী হারে সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাছাড়া হাবল টেলিস্কোপের ডেটার সাহায্যে প্রমাণ মিলেছে যে বিশালাকৃতির ব্লাকহোল এবং একই সঙ্গে এটি সন্ধান দিয়েছে অনেক নতুন গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, নীহারিকা ইত্যাদির বিষয়ে। এদিকে হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যা কম কথা নয় ?

কিন্তু অদম্য জ্ঞানপিপাসু বিজ্ঞানীরা এতে খুশি না থেকে হাবল টেলিস্কোপের যেটুকু কমতি বা দুর্বলতা আছে, সেটুকু দূর করে মহাকাশে আরও শক্তিশালী টেলিস্কোপ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন অনেক আগে থেকেই। কেননা হাবল পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি ঘুরছে বলে অনেক সময় পৃথিবী নিজেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই  টেলিস্কোপের দৃষ্টিপথে। তাছাড়া এটি পৃথিবীর চারপাশে ঘোরার সময় ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্টের একটা অংশের কাছ দিয়ে যায় বলে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যন্ত্রপাতিতে ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ সৃষ্টি করে, যা প্রয়োজনীয় ডেটা বা উপাত্ত সংগ্রহে বিঘ্ন ঘটায়। এতদ্ব্যতীত হাবল টেলিস্কোপের ফেইন্ট অবজেক্ট ক্যামেরা এবং ফেইন্ট অবজেক্ট স্পেকট্রোমিটার অতি দূর নক্ষত্র থেকে আসা ক্ষীণতম আলো থেকে যে ছবি নির্মাণ করে, তা খুবই অনুজ্জ্বল এবং অস্পষ্ট। এসব ত্রুটি দূর করে বাড়তি অনেক প্যারামিটার সংযোজনপূর্বক নতুন একটি স্যাটেলাইট তথা দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ করে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে, যার নাম জেমস ওয়েব,যা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। এ সূত্র ধরে উল্লেখ্য যে, ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর জ্যোতিবিজ্ঞানে শুরু হয় অভাবনী বিপ্লব। সেদিন পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠানো হয় হাবল টেলিস্কোপের চেয়েও অনেক গুণ শক্তিশালী এই জেমস ওয়েব স্পেস নামক নতুন টেলিস্কোপ। তুলনামূলকভাবে যদি বলি, তাহলে উল্লেখ করতে হয় যে, হাবল টেলিস্কোপের সঙ্গে জেমস ওয়েবের গঠনে বেশ কিছু পার্থক্য আছে; যেমন- হাবল টেলিস্কোপের আকার যদি একটি ৫০ সিটের বাসের সমান হয়, যেখানে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আকার একটি টেনিস কোর্টের সমতুল্য। আর হাবলের দর্পণের ব্যাস ২ দশমিক ৪ মিটার। অথচ জেমস ওয়েবের দর্পণের ব্যাস ৬ দশমিক ৫ মিটার। এদিকে হাবলে যে ক্যামেরাগুলো আছে, সেগুলো অতিবেগুনি দৃশ্যমান আলো এবং নিয়ার ইনফ্রারেড বা দৃশ্যমান আলো কাছের অবলোহিত আলোর তরঙ্গ শনাক্ত করে ছবি তুলতে পারে। অথচ জেমস ওয়েবের শক্তিধর ক্যামেরাগুলো কাজ করে পুরাপুরি ইনফ্রারেড বা অবলোহিত আলোর তরঙ্গে। হাবল টেলিস্কোপ যেখানে পৃথিবী থেকে ৫৪৭ কিলোমিটার দূরে থেকে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে। সেখানে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ স্থাপন করা হয়েছে পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে (চাঁদের অক্ষের কাছাকাছি দূরত্বে) এই কারণে জেমস ওয়েবের পক্ষে মহাকাশের অনেক দূরের ভেতরে চোখ রাখাসহ সমধিক প্রসারিত এলাকা পর্যবেক্ষণ সম্ভব। এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এক হাজার কোটি ডলার ব্যয় করে বানানো হয়েছে। আর এটির বানানোর পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা), ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা) এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (সিএসএ)। আর এটি উৎক্ষেপণ করা হয় ফ্রেন্চ গায়ানা থেকে আরিয়ান ৫ রকেটের সাহায্য এবং বর্তমানে এটি পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরের বিশেষ বিন্দুতে অবস্থান করছে। আর এটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে স্থাপিত স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউড থেকে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে জেমস ওয়েবের মূল আয়নাটি ষড়ভুজাকৃতির। এটি ১৮টি ছোট ছোট আয়না মিলে তৈরি। আর এ আয়না সোনার আবরণে মোড়া। অবশ্য দ্বিতীয় আরেকটি আয়না আছে, যেটি মুল আয়না থেকে প্রতিফলিত আলোকে কেন্দ্রীভূত করে ইন্টিগ্রেটেড সায়েন্স ইনস্ট্রুমেন্ট মডিউলের ওপর এবং গৃহীত আলো থেকে এই মডিউল ছবি তৈরি করে। এখানেই শেষ নয়। এই টেলিস্কোপটিতে আরও আছে স্টার ট্র্যাকার হিসেবে ছোট ছোট কিছু টেলিস্কোপ, যা নক্ষত্রদের প্যাটার্ন খেয়াল রেখে মূল টেলিস্কোপটিকে দিকনির্দেশণা দিয়ে থাকে।

এবার আসুন, এর কার্যক্রম নিয়ে কিছুটা তলিয়ে দেখি। এ প্রসঙ্গ ধরে উল্লেখ্য যে ওয়েবের ইন্টিগ্রেটেড সায়েন্স ইনস্ট্রুমেন্ট মডিউলে আছে একটি নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা। সত্যি কথা বলতে কি, এটি জেমস ওয়েবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যামেরা। মূলত ৭০০ ন্যানোমিটার থেকে ১ মিলিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে আলো, যা অবলোহিত আলো বলে অভিহিত। আর এ আলো দৃশ্যমান নয়। এদিকে ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০  ন্যানোমিটার পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে বলে নিয়ার ইনফ্রারেড বা দৃশ্যমান আলোর কাছাকাছি অবলোহিত আলো। তাছাড়া সায়েন্স ইনস্ট্রুমেন্ট মডিউলে আছে একটি মিড ইনফ্রারেড, যা মাত্র ৭ কেলভিন তাপমাত্রায়ও কার্যকর থাকে। আসলে এটি ক্যামেরা কাম স্পেকট্রোগ্রাফ বা বর্ণালিমাপক যন্ত্র। এর মাধ্যমে মিড থেকে ফার ইনফ্রারেড অর্থাৎ তিন হাজার ন্যানোমিটার থেকে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে অবলোহিত আলো ধরা সম্ভব। তাছাড়া আরও আছে একটি ফাইন গাইডেন্স সেন্সর এবং নিয়ার ইনফ্রারেড ইমেজার অ্যান্ড সিটলেস স্পেকট্রোগ্রাফ, যার মাধ্যমে অতি ম্লান নক্ষত্রের আলোকেও শনাক্ত করা যায়। সাধারণত ম্যাগনিচ্যুড সংখ্যা যত বড়, উজ্জ্বলতা তত কম। আর এই তত্বের আলোকে অতি ম্লান নক্ষত্রের আলো শনাক্ত করা হয়ে থাকে। এর ওপর ভিত্তি করে ফাইন গাইডেন্স সেন্সর পরিস্কার ছবি ওঠাতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া এতে আছে একটি আলাদা নিয়ার ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফ, যা একসঙ্গে ১০০টি গ্যালাক্সির বর্ণালি ধারণ ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। যাহোক, গৃহীত আলো থেকে ছবি তৈরিপূর্বক এসব ছবি ও তথ্য পৃথিবীতে প্রেরণ করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হাই গেইন অ্যানটেনা।  আর একটি কথা, এ সব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি সূর্যের আলো ও উত্তাপ থেকে আড়াল করা জরুরী। নতুবা যন্ত্র, আয়না ও লেন্স ঝলসে যাবে। তাই এক্ষেত্রে প্রায় ২২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৪ মিটার ব্যাসের সানশিল্ড লাগানো হয়েছে। এদিকে জেমস ওয়েবের মূল নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্যে স্পেসক্রাফটের কাজ প্রণিধানযোগ্য। আর মজার ব্যাপার হলো যে এর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য সোলার পাওয়ার বা সৌর কোষ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

 

তৃতীয় পর্ব

এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে, বিজ্ঞানীরা নিরলস প্রচেষ্টাপূর্বক বহু সময় ব্যাপী এত অর্থ ব্যয় করে নানা রকম স্পর্শকাতর, মূল্যবান ও জটিল যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে এই জেমসওয়েব তৈরী করেছেন কেন এবং কি কি এর বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য? এর জবাবে উল্লেখ্য যে, প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ততার স্বার্থে এর উদ্দেশ্যে পুরোপুরি ব্যাখা না করে স্বল্প কথায় কিছুটা তুলে ধরা হলো। প্রথমতঃ শৈশবের ঊষালগ্নের মহাবিশ্বের স্বরূপ উদঘাটন এবং মহাবিস্ফোরণের পর থেকে আদি সময়ের গ্যালাক্সিগুলোর আলোর সন্ধান করতে পারলে বোঝা যাবে কিভাবে এই গ্যালিক্সগুলোর উৎপত্তি হয়েছিল। দ্বিতীয়তঃ গ্যালাক্সিগুলোর বিবর্তন অনুসন্ধান। এ ব্যাপারে প্রথম যুগের থেকে বর্তমান যুগের গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে কী কী বিবর্তন এবং কিভাবে হয়েছে, তা জানা। তৃতীয়তঃ নক্ষত্রগুলো কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথম পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রহ-উপগ্রহ সহ নক্ষত্র জগতের সৃষ্টি কীভাবে হয়েছে, তা খুঁজে বের করা। চতুর্থতঃ আমাদের সৌরজগতসহ অন্য গ্রহ উপগ্রহগুলোর বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম পরীক্ষা করে দেখা এবং একই সঙ্গে অন্য গ্রহ বা উপগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা। এই উদ্দেশ্যেসমূহ সামনে রেখে গত বছরের (২০২১) শেষের দিক হতে এই জেমস ওয়েব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে জেমস ওয়েব উৎক্ষেপণের দুইশত দিনের মাথায় অর্থাৎ ১২ জুলাই এই টেলিস্কোপ কর্তৃক প্রেরিত ৫টি ছবি উন্মুক্ত করা (স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা কর্তৃক বাছাইকৃত) হয়েছে, তাতে জ্যোর্তিবিজ্ঞান জগতে নতুন দ্বার উম্মোচিত হয় এবং এতে মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্যের জট খোলা ও নতুনত্বের আমেজে সারা অবনিতে ঢেউ খেলে যায়। এই পাঁচটি ছবির প্রথমটি হলো মহাজগত সৃষ্টির গোড়ার সেই গ্যালক্সি, যা ১৩০০ বছর আগের ছবি। এই ছবির মাধ্যমে যে উত্তর মিলবে, তা হলো মহাবিস্ফোরণের পর প্রথম সবকিছু অন্ধকার ছিল এবং সময় পর্যন্ত ছিল না। আর পদার্থ যদি কিছু থেকে থাকে, তা ছিল কেবল ডার্ক ম্যাটার। তৎপর দ্বিতীয় ছবি থেকে জানা যায় যে, পাঁচটি গ্যালাক্সির একটি গ্রæপ, যার কেন্দ্রে আছে সুপারম্যাসিভ বা প্রচন্ড ভরসম্পন্ন ব্লাকহোল এবং সেখান থেকে একটি নক্ষত্রের জন্ম হচ্ছে। তৃতীয় ছবিতে যা দেখা যায়, তাহলো কারিনা নেবুলারের ছবি। এটি মূলত নক্ষত্রের জন্ম ভূমি। তাছাড়া চতুর্থ ছবিতে উঠে এসেছে, সাউদার্ন রিং নেবুলা, সেখানে আছে গ্যাসের মেঘ, যা সম্প্রসারিত চারিদিকে। আর পঞ্চম ছবিটি হলো সৌরজগতের বাইরে গ্রহ (এস্কাপ্লানেট) এটি পৃথিবীর থেকে প্রায় ১১৫০ আলোকবর্ষ দূরে বিদ্যমান।

 

চতুর্থ পর্ব

অ) এতক্ষণ যে বিষয়টি সামনে রেখে এত কথা বললাম, তাহলো মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্যকে ঘিরে। উল্লেখ্য যে, আমাদের আদরের পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর। আর জেমস ওয়েবের সুবাদে ১৩০০ কোটি বছর আগের মহাজগৎ সৃষ্টির শুরুর বিষয়ে অনেকটা অবগত হয়েছি। তবে অনেকে ঘুরে বসে বলতে পারেন যে, এটি কিভাবে সম্ভব? সেই কথাই এখন বলবো- এ প্রেক্ষাপটটে উল্লেখ্য যে, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের শক্তিশালী ক্যামেরাগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট হলো যে, এগুলো ইনফ্রারেড বা অবলোহিত আলোকরশ্মি শনাক্ত করতে পারে এবং একই সঙ্গে সেই আলোতে ছবিও তুলতে পারে। এখানে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, অবলোহিত আলোকরশ্মি শনাক্ত করার দরকার কি? এই প্রশ্নের জবাবে পদার্থ বিজ্ঞানের আওতায় আলোর বিষয়টির উপর বিশ্লেষণমুখী নজর দিতে হবে। কেননা আমরা জানি যে, আলোর গতিবেগ শূন্য মাধ্যমে সেকেন্ড ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল (৩ লাখ কিলোমিটার)। এদিকে আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্ব মতে আলোর শক্তি, তার কম্পাষ্কের সমানুপাতিক। মজার ব্যাপার হলো যে, আলো যখন কোনো উৎস থেকে উৎপন্ন হয়ে একই মাধ্যম চলতে থাকে, তখন তার গতিবেগের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। অথচ আলোকতরঙ্গ হলো মূলত বিদ্যুৎ চুম্বক তরঙ্গ, যার কম্পাষ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য একে অপরের বিপরীত আনুপাতিক। সহজ কথা হলো যে, তরঙ্গ যদি বেড়ে যায়, কম্পাষ্ক কমে যায়। এক্ষেত্রে হাবল থেকে ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়েছি যে, মহাবিশ্ব ক্রমগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে বিধায় একই সঙ্গে আলোর তরঙ্গও প্রসারিত হচ্ছে। তার মানে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেরে যাচ্ছে। এদিকে আলোর বর্ণালির সবচেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্য হচ্ছে লাল। আর আলোর সবচেয়ে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্য হচ্ছে বেগুণি। এটি সত্য যে, লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে গেলে তা হয়ে উঠে ইনফ্রারেড বা অবলোহিত আলো। এটি আমাদের দৃষ্টিশক্তির সীমানার বাইরে। এখানে সোজা কথা হলো যে, অবলোহিত আলো আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অনুযায়ী আমরা জানি যে, আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে গিয়ে লাল বর্ণের দিকে সরে যাওয়াকে বলা হয় লাল সরণ । আবার তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমে গিয়ে বেগুণি বা নীল বর্ণের দিকে সরে যাওয়াকে বলা হয় নীল সরণ। আর এই লাল সরণের পরিমাণ হিসাব করে জানা যায় যে, মহাবিশ্ব কতটুকু সম্প্রসারিত হয়েছে এবং সেই সময়ে আলো কতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করেছে। তখন সেই দূরত্বের হিসাব থেকে সময়ের হিসাব সহজে বের করা যায়। এদিকে আলো এক সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার অতিক্রম করে। আর তাই সেই হিসাবে আলো এক বছরে যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে, সেই দূরত্বকে বলা হয় এক আলোকবর্ষ । এই সূত্র ধরে উল্লেখ্য যে, কোনো একটি নক্ষত্র যদি পৃথিবী থেকে এক আলোকবর্ষ দূরে থাকে, তাহলে সেখান থেকে আলো পৃথিবীতে আসতে সময় লাগবে এক বছর। আর এর সপক্ষে আরেকটি উদহারণ হলো, সূর্য থেকে আমাদের পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। এখানে আমরা উল্টোভাবে বলতে পারি যে, পৃথিবী থেকে যখন আমরা সূর্যকে দেখি, তখন আসলে দেখি ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড অতীতের সূর্য। সেহেতু এ সময়কে আলোর গতি দিয়ে গুণ করলে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, আকাশে যেসব সূর্য ও তারকারাজি দেখি, সেগুলো থেকে আলো পৃথিবীতে এসে পৌছাতে যদি কোটি আলোকবর্ষ লাগে, তাহলে সেগুলো কোটি বছর আগের নক্ষত্র দেখেছি বললে ভুল হবে না। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি যে, এই জেমস ওয়েব টেলিষ্কোপের ইনফ্রারেড ক্যামেরা কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সি থেকে ভেসে আসা অবলোহিত আলো শনাক্ত করতে পারে। যদি কিছুটা ঘুরিয়ে বলি তাহলে এই দাঁড়ায় যে, কোটি বছরের সফর শেষে এই আলো জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আয়নায় এসে প্রতিফলিত হয়। আর ইনফ্রারেড ওয়েব ডিটেক্টর সেই আলো শনাক্ত করে এবং একই সঙ্গে সেখান থেকে তৈরি করে গভীর মহাকাশের ছবি। এক্ষেত্রে আরও কথা হলো যে, ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফ থেকে মহাবিশ্বে ভাসমান সব ধরনের অণুর ধর্ম বিশ্লেষণ করে দেখতে পারবে যে, পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো সৌরজগতের অন্য কোনো গ্রহে প্রাণী আছে কি না? যাহোক, এতক্ষণ যে বর্ণনা করলাম, তাতে কী প্রতীয়মান হয় যে, মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উদ্ঘাটনে আমরা কত কাছাকাছি চলে এসেছি।

আ) উপর্যুক্ত আলোচনায় এতক্ষণ মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন নিয়ে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ কর্তৃক প্রেরিত আদি গোড়ার ছবি নিয়ে কিছু কথা বলেছি। আর ভবিষ্যতে জেমস ওয়েব যে ছবি পৌনঃপুনিকভাবে পাঠাবে, তাতে হয়তো আরও পরিস্কার হবে। এই তো কয়েক বছর আগে পদার্থ সৃষ্টিধর্মী ঈশ্বর কণা নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন তো সেটা সম্পর্কে তেমন কোন কথা আর কানে আসে না। আমি সীমাবদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী হলেও এখন যে কিছু কথা বলবো, সম্মানিত পাঠকবর্গ আপনার অন্যভাবে নেবেন না। আমি তখন ঈশ্বর কণার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলাম যে ধর্মগ্রন্থ বিশেষ করে ইসলামী পবিত্রগ্রন্থ কুরআন ও হাদিস বিশ্লেষণ করে দেখুন, পদার্থ সৃষ্টির পেছনে দু’টি নিয়ামক কাজ করে, তার একটি আলো এবং অন্যটি হলো শব্দ। এই বিষয়টি যদি ঘুরিয়ে বলি, তাহলে প্রতীয়মান হয় যে, পদার্থ সৃষ্টিকল্পে আলো ও শব্দের পরোক্ষ ক্রিয়াশীল প্রপঞ্চের ভূমিকা, যা খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। এখানে আলো বলতে আল্লাহ তা’লার নূর এবং শব্দ হলো তাঁরই হুকুম। এদিকে স্ররষ্টার সৃষ্টি এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড এতটাই অত্যাশ্চার্য, যা মানুষের মস্তিস্কের নিউরনে বুঝার মতো সেই প্রোগ্রাম নেই। তবে জীবকুলের শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও সুদূরপ্রসারী কৌশল খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। যদিও মানুষ তার সম্পূর্ণ মস্তিস্কের সামান্য অংশই ব্যবহার করতে পারে। আর ইতিপূর্বে জেমস ওয়েবের যে অভাবনীয় বিষয়াদি উল্লেখ করেছি, তা মনুষ্যজীবের মস্তিস্কের মাধ্যমে স্ররষ্টার খেয়ালের ফসল বই কিছু নয়। হয়তো আপনারা সদয় অবহিত আছেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞান মহাকাশ সম্পর্কে অধিকতর সচেষ্ট হয়েছে। অথচ পবিত্র কোরআনে প্রায় ১৫০০ বছর আগেই একাধিক আয়াতে এ ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে। এদিকে বিজ্ঞানের ভাষ্য মতে বিন্দু থেকে মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে ব্লাকহোল হয়ে বর্তমান সৃষ্টি এ পর্যায়ে এসেছে। পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, সেই আদিতে নাকি সময় পর্যন্ত ছিল না। পরে নাকি ৪র্থ মাত্রা হিসেবে দৈর্ঘ্য, প্রস্ত ও উচ্চতা মাত্রার সঙ্গে বস্তু ও ঘূর্ণন এর মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। কথাটি তো ঠিক। কেননা ধর্ম মতে যখন কিছুই ছিল না, তখন তো সময় থাকার কথা নয়। আর বিজ্ঞান মতে মহাকাশে যে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ, উপগ্রহ ও তারকা সম্বলিত গ্যালাক্সির কথা বলা হয়েছে। সে ব্যাপারে কুরআনে প্রকারান্তরে উল্লেখ আছে। এখানেই শেষ নয়, নাসার বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, মহাশূণ্য গভীর ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ভূ-পৃষ্ঠ নির্মাণ কাজ সমাধার পর তিনি (আল্লাহ তা’লা) আকাশ নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করলেন। আর তখন তা ছিল ধোঁয়াশাঘেরা (সূরা ফুসিসলাত, আয়াত-১১)। ইদানিং বিজ্ঞানে সময় ভ্রমণ এর কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে নবী করীম (সঃ) কর্তৃক সংঘটিত “মেরাজ” এর বিষয়টি টেনে এনে যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে এর যোগসূত্র খুঁজে পেতে হয়তো বেগ পেতে হবে না।

আসলে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে নানা কথা বলে থাকি। সীমাবদ্ধ জ্ঞানের কারণেই মাঝেমধ্যে আমাদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হয়। পরিশেষে এই বলে শেষ করছি যে, মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উদ্ঘাটন করা অতটা সহজ নয়। তবে জেমস ওয়েবের কর্মকান্ডকে স্বাগত জানাই। হয়তো এর সুবাদে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা হলেও জট খুলবে। আর আমরা সেই সোনালী দিনের জন্য অধিক আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

 

লেখক : বিশিষ্ট গবেষক, অথর্নীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর