সুইটি রাণী বনিক
কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া আমরা দীর্ঘদিন বেকার গৃহবন্দি। তার কারণ সাম্প্রতিক নতুন আবিষ্কৃত মারণঘাতী করোনা ভাইরাস, যা পুরো পৃথিবীকে গ্রাস করেছে! আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের সংখ্যাই বেশি। এখানে বেশি দিন সাধারণ কর্মজীবী জনগণ লকডাউনে থাকলে যেমন তাদের খাদ্যসংকট দেখা দেবে এবং মানসিক দুরাবস্থার সৃষ্টি হবে আর সরকার কতদিন আর তাদের সামাল দেবে সঠিকভাব, যেখানে চোর-বাটপার গরিবের ত্রাণের চাল কেড়ে নেয়।
আসল কথা হচ্ছে, উলুবলে মুক্তো ছড়ালে তেমন কোন লাভ হবে কি! এ কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে আমরা অনেকেই মরে যাব!
সরকার ও জনগণ মিলে আমরা যা প্রয়োজনীয় সেই কাজগুলো করতে পারি! এভাবে পরীক্ষা- নিরীক্ষা ছাড়া, সকলে বন্দি থাকতে পারি না।
সরকারের উচিত বলে মনে করি, সকলের গৃহে চাল-ডাল বিলি করে নয়, উপযুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা পজেটিভ শনাক্ত করতে হবে এবং তাদের আলাদা করে লকডাউনে নিয়ে ভাল চিকিৎসা-খাদ্য ব্যবস্থা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে কাজ সহজ হয়ে যাবে বলে আশা রাখি এবং সাধারণ মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবন জীবিকা শুরু করতে পারবে।
বাংলাদেশের মানুষ বেশিরভাগই অসচেতন এবং ভীত, যার ফলে কেউ অসুস্থ হলেও সহজে প্রকাশ করতে চায় না, যতক্ষণ তারা নিজের সাথে লড়াই করে জয়ী হতে না পারে! সে তো মরেই সাথে তার পরিবার পরিজনদেরকে ও মারণঘাতীতে আক্রান্ত করে বসে। তবে এভাবে ডালে-চালে (সুস্থ আর অসুস্থ) বন্দি করে, খিচুড়ি বনিয়ে কি লাভ? যেহেতু রোগটা আক্রান্ত মানুষ ছাড়া ছড়ায় না, সেহেতু আক্রান্তদেরকে আলাদা করতে পারলে সকল মানুষের জন্য জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করবে বলে ধারণা করা যায়।
সরকার যেহেতু কোটি কোটি টাকা জনগণের জন্য করোনা মোকাবেলায় ব্যয় করতে আগ্রহী এবং করছেনও, তাই যেদিক থেকে শুরু করলে তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে, ব্যয় হলেও সকল স্থানে পরীক্ষা শুরু করা জরুরি বলে জনগণ দাবি রাখে।
যেখান থেকে, যত গবেষণা ও ভবিষ্যৎবাণী আসুক না কেন, এক একটি দিন কিন্তু রোগী বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যু, ছড়াচ্ছে রোগ তবে সাধারণ মানুষগুলো বাঁচবে কি করে, রুটি- রুজির জন্য অনেকেই বের হচ্ছে! তারা আবার পরিবারে ফিরে আসে, আবার তাদের থেকে তাদের পরিজন এভাবে তাদের সংস্পর্শে আসছে। কথায় আছে, “প্রয়োজন কোন আইন মানে না! ” এই লোকেদের কাছ থেকেই অজান্তেই গৃহবন্দি থাকা মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে কোন না কোনভাবে করোনা! তবে কতটা লাভ হচ্ছে এই লকডাউন?
আর কতদিন চলা যবে বন্দি হয়ে? এতে কতটা রোগমুক্তি পাব আমরা? ভাইরাসের কিন্তু ডেটও নাই এক্সপায়ারও নেই, সে সুযোগ পাচ্ছে আর বংশবিস্তার করেই চলেছে। সে স্রোতের মত ভেসেই চলছে সমস্ত বিশ্ব পরিক্রমার মধ্যদিয়ে!
বর্তমানে যা জরুরি চিকিৎসা ও প্রশাসন ব্যবস্থার সুরক্ষা, তারাই যদি অসুস্থ ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে জনগণের অসচেতনতা কারণে, তবে কি উপায় হবে? কেউ আকাশের দিকে, কেউ ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। লেবু পানির উপর ভিত্তি করে এই ডিজিটাল যুগেও কি মুক্তি সম্ভব? সকলের কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই। বেশিরভাগ মানুষই নানা রোগে আক্রান্ত, তাই সুচিকিৎসা, জনগণের সুবিধা মাথায় রেখে সরকারকে করোনা মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বসে থাকলে বেশিদিন লাগবে না শীঘ্রই সকল কিছুর উপর দুর্যোগ নেমে আসবে।কৃষককে মাঠে যেতে হবে, জেলেদের নদীতে যেতে হবে, সকল কর্মীদের কাজ করতে হবে- আর তার জন্য সুস্থ ও অসুস্থ আলাদা করতে হবে, এটাই হবে করোনা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ও কঠোর দায়িত্ব- যা সরকার ও জনগণ মিলে চেষ্টা করলে, কষ্টকর হলে সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। তাই প্রয়োজন কিট প্রয়োজন, পরীক্ষা প্রয়োজন করোনা রোগী শনাক্ত করা দরকার এবং তাদের লক করে সাধ্য অনুযায়ী সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা।
( লেখক : প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক, এম.এ. বাংলা , এল.এল.বি, swityrani17@gmail.com)