নিজস্ব সংবাদদাতা :
এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইড আয়োজিত ১২ ও ১৩ এপ্রিল(২০২৫) নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ার এবং জ্যাকসন হাইটস ডাইভার্সিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সহস্র কণ্ঠে বিশ্ববাঙালির ১৪৩২ বাংলা বর্ষবরণ, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা। আয়োজক সংগঠনের প্রচেষ্টায় এবং দীর্ঘদিনের মহড়া ও নিবিড় অনুশীলনের মধ্য দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে শিশু-কিশোরদের একটি নিবেদিত দল। অর্থাৎ এই উদযাপন উপলক্ষ্যে শতাধিক শিশু-কিশোর পিতা-মাতার হাত ধরে বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাস-ঐতিহ্য সন্ধানে সুর-সংগীত-ছড়া-কবিতায় ব্রতী হয়েছে কণ্ঠশিল্পী মহীতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে। এ উৎসবে একইরকম শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে নারী-পুরুষের বর্ণিল পরিবেশনায় বাংলার জয় ঘোষণা করা হবে। ‘ছায়ানটে’র সভাপতি ও সংস্কৃতি সাধক সদ্য প্রয়াত প্রফেসর ড. সনজীদা খাতুনকে এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে।
১৪৩২ বঙ্গাব্দের বর্ষবরণের বিশেষত্ব হলো বহুমাত্রিকতা। সহস্রকণ্ঠের পরিবেশনায় রয়েছে নতুনত্ব; সঙ্গে নিউইয়র্ক রাজ্যসরকারের ক্যালেন্ডারে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের স্বীকৃতি এবং এশিয়ার কৃষিপ্রধান নয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকার কনসাল জেনারেল ও তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিঃসন্দেহে বৈচিত্র্য এনেছে প্রবাসী বাঙালিদের সর্ববৃহৎ এই আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে।
নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে বর্ষবরণ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। দৃশ্যত বাস্তবতা হলো, ২০২৫ সালে এসেই উৎসবটি আন্তর্জাতিক মহিমা অর্জন করেছে। বলাবাহুল্য, বাংলা বর্ষবরণের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এ বছরের উদযাপনকে অনেক বেশি তাৎপর্যমণ্ডিত করেছে; পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক উৎসবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আলবেনিতে গভর্নর অফিস বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ২৮ এপ্রিল উদযাপন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, নিউইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অনুরোধে সিনেটর লুইস সেপুলভেদার ১৫ জানুয়ারি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অঙ্গরাজ্যের আইনসভার অধিবেশনে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি আইনপ্রণেতারা সর্বসম্মতিক্রমে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গভর্নর ক্যাথি হোকুল ২৩৪ নম্বর প্রস্তাবের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করেন। ঘোষণাটি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেট-ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়, ১৪ এপ্রিল, অর্থাৎ বাংলা বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে বাংলা নববর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই অঙ্গরাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি হিসেবে এবং এই রাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে সম্প্রীতি দৃঢ় করার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। সিনেট রেজুলেশনে এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড-এর সভাপতি বিশ্বজিত সাহা প্রতিষ্ঠিত ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’ নিয়ে বলা হয়েছে- For three decades, Muktadhara Foundation, a New York based organization dedicated to the promotion of Bengali culture has celebrated it history and literature by hosting Bangla Festival and Book Fair which has been attended by almost all leading litterateurs of contemporary times; ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক মহিমা অর্জনে নেপথ্যের কারিগর এবং টাইমস স্কয়ারে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মূল নেতৃত্বে থাকা বিশ্বজিত সাহার পরিশ্রম এবং মহীতোষ তালুকদার তাপসের সংগীত পরিচালনা বিশ্বজুড়ে বাঙালির প্রাণস্পন্দন হয়ে উঠেছে। আহ্বায়ক ও শুভেচ্ছা দূত হিসেবে সঙ্গে আছেন রথীন্দ্রনাথ রায়(আহ্বায়ক, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান কমিটি), লায়লা হাসান(শুভেচ্ছা দূত), লুতফুন নাহার লতা(শুভেচ্ছা দূত) ও তাজুল ইমাম। প্রবাসে অবস্থানের কারণে বাঙালির সর্বজনীন উৎসব নিয়ে নিজের অনুভূতি ও প্রত্যাশা আত্মপ্রকাশ করেছে উৎসবের আঙিনা জুড়ে। প্রাণের অফুরন্ত আবেগে নিজস্ব কথনভঙ্গিতে নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তায় আন্দোলিত সকল বাঙালি।
উৎসবের ইতিহাসকে মুদ্রণ আঙ্গিকে ধরে রাখার জন্য প্রকাশিত হয়েছে ‘‘বাংলা নববর্ষ স্মারকগ্রন্থ ১৪৩২’’। প্রফেসর ড. সন্জীদা খাতুনকে উৎসর্গিত এই প্রকাশনার সম্পাদনা পর্ষদে দায়িত্বে ছিলেন- বিশ্বজিত সাহা(উপদেষ্টা সম্পাদক), নূরুল বাতেন(প্রধান সম্পাদক), ড. মিল্টন বিশ্বাস(সম্পাদক) এবং ফারুক আহমেদ (নির্বাহী সম্পাদক)। উল্লেখ্য, গ্রন্থটি একইসঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে নিউইয়র্ক, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে।
নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ার এবং জ্যাকসন হাইটস ডাইভার্সিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত উৎসবে বাঙালি সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে। বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা থেকে শুরু করে রানো নেওয়াজ, স্বপীল সজীব, প্রতীক হাসান, শাহ মাহবুব, রেশমী মির্জা, অনিক রাজ, সেলিম ইব্রাহিম, কৃষ্ণা তিথি, আলভান চৌধুরী প্রমুখের সুর-মূর্ছনায় পরিবেশকে করবে আনন্দমুখর। পরিবেশনায় আরো আছেন-ফাসির কবির কাব্য, এলিস হাওলাদার, ভাষা সাহা, ফরহাদ আদনান, শৌভিত রায় চৌধুরী, নির্জন ডিকস্তা, দৃষিকা চৌধুরী, ক্রিস্টিনা কুইয়া। যন্ত্র সংগীতে থাকবেন- মানিক(অক্টোপ্যাড), সাইদ(লিড গিটার), রুবেল(কিবোর্ড) শফিক(ঢোল) ও পিনাক পাণি গোস্বামী(তবলা)।
বর্ষবরণে অংশগ্রহণ করছে অনেকগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ গুলো হলো-প্রকৃতি, সংগীত পরিষদ, শ্রী চিন্ময়ী সেন্টার, পাওয়ার রকারস, রবীন্দ্র একাডেমি, বাপা, আড্ডা, বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতন, নৃত্যাঞ্জলি, জগন্নাথ এন্ড ট্রুপ, রঞ্জনী, মৈত্রী, সৃষ্টি একাডেমি, সিঙ্গিং বার্ডস, ডায়াসপোরাসহ নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। এবারের বর্ষবরণের পার্টনার হলো- পুতুল ডিস্ট্রিবিউটর ইনক, কেপিসি, গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার, পিএমসি প্রভৃতি।