“দিন শেষে তো রাত আসবেই
চোখের জলেই হোক আর মনের সুখেই হোক,
রাতের প্রথম প্রহরে হোক, দ্বিতীয় প্রহরেই হোক, আর শেষ প্রহরেই হোক শান্তি ঘুমটা ও অবশ্যই আসবে। ”
মানুষের যাপিত জীবন শেষে একদিন অবধারিত মৃত্যুর এসে তাকে জানান দেয়, তার আর সময় নেই। দুঃখের সাথে হোক আর সুখেই মৃত্যুর চির শান্তি সে লাভ করে।
যদি মেরেই যাব,
তবে কেন এত হিংসা -বিদ্বেষ, কেন এত ধর্ম নিয়ে মারামারি, কাটাকাটি, আমিত্ববোধে অহং মিশ্রিত দুরাচারী কার্য বিধি।
উপরে যিনি আছেন তিনি কিন্তু একজন, সংখ্যায় চার কিংবা তার অধিক নয়!
মানুষের মনে ভেদ, তাই তাদের ধর্মে ও বিভেদ!
তাই তারা একে অপরকে ছোট করে, তুচ্ছ করে যোর পূর্বক ধর্মান্তিত করার চেষ্টা করে, কেউ হয়। আসলে তাতে কি এমন ক্ষতি বা কি এমন ভাল হয়। মানুষের জন্যইতো ধর্ম, অমানুষের জন্য নয়।
প্রত্যেকটা মানুষের উচিত সকল ধর্ম সম্বন্ধে জানা, এবং প্রত্যেকটা ধর্মের মুল মাহাত্ম্যকে উপলব্ধি জাত ক্ষমতা মধ্যে আানা ।
রীতি-নীতি,আচার, কালচারে ভিন্নতা থাকলেও ধর্মে মুল মাহাত্ম্য কিন্তু এক! সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা,সকল জীবের প্রতি সদাচার করা, ঈশ্বরের কাছে সন্তুষ্টির জন্য ও তার কৃপা লাভের জন্য, তাকে নানা নামে জপ করা!!
উপরওয়ালাকে যে যে নামে ডাকে তার কাছে সে নামেই ধরা দেয়, তার কোন অহংকার নেই, অজ্ঞতা নেই – সকল সৃষ্টিই তার!
তবে আমাদের কেন
এতো ভেদ- বিভেদ,এত ধ্বংস -যজ্ঞ,??
কেন- অতি ধর্মীকতা, অতি নিন্দা চর্চা, ধরা যাবেনা, ছোয়া যাবে না, আমিষ খাওয়া যাবে না, বিধর্মীদের নিজের ধর্মে আনা চাই, ওরা কাঁচা মাটি, ওরা পোড়া মাটি, ওরা নরকে যাবে, ওরা দোযখে যাবে, ওদের টাকা পয়সা দিয়া নিজের ধর্মে আনো, ওদের আমাদের ধর্মে আনলে আমরা বেহেশতে যাব, বিধর্মীদের ঘৃনা আসে, আবার ওদের যুবতী মেয়েদের দিকে বিশেষ নজর ও থাকে কেন এত লীলা। কে বলেছে, কোন ধর্মের প্রভু এই দুরাচার আদেশ দিয়েছেন, আর তা কোন গ্রহন্থে এসব লিখেছেন? তার কি কোন ব্যাখ্যা আদোও কোন মানুষ দিতে পারবে।
তবে কেন, কোন সম্য – চিন্তা নাই মানুষের ভিতর।
আমরাতো মানুষই, অমানুষ তো নই। তবে কেন আমাদের কর্মে অমানুষের চিন্তা এসো ভির করে ভেদ – বিভেদ এর সৃস্টি করে। দেশ- জাতি- কাল, বর্ন – আচার- অনুষ্ঠান,ভেদে মানুষের চলাফেরা ও কাজে কর্মে ভিন্নতা আসতেই পারে! তা নিয়ে কারো কোন পক্ষপাতিত্ব, বা বিরোধ সৃষ্টি করা, আলোচনা-সমালোচনা, ছি ছি ছিটানো আসলে এসবে কি শান্তির কোন বার্তা বয়ে আনে??
কোন যুগে কোন মহা পুরুষ কি এসব বলে গিয়েছিল?
কখনোই এমন নয়। বলা হয়, যারা ন্যায়ের পথে চলে না, অনাচার-অবিচার করে, ঈশ্বরের প্রতি বা উপরওয়ালা র প্রতি ভক্তি-বিশ্বস নেই, আনুগত্য নেই,সমাজে – নিজের সহ অন্যের ক্ষতি সাধন করে তাদের নৈতিক পথে আনার বার্তা প্রচার করতে! আর তা হল মহান কাজ ও ধর্মের কাজ। অথচ প্রত্যেকটা ধর্মে দুই-চারটা করে মত, পথের সৃস্টি হয়েছে। কেউ ডানে নিতে চায়, কেউ বায়ে নিতে চায়! এই টানাটানিতে
কিছু মানুষ ডানে যায়, কিছু মানুষ বায়ে যায়, আর কিছু মানুষ ছিড়ে যায় ( পথভ্রষ্ট হয়) ফলে বা মুল ধর্ম হতে অধিকাংশ মানুষ বাহিরে থাকে, কেবল লোকাচারে ধর্ম পালন করে, ধর্মে মুল মাহাত্ম্য বুঝতে তাদের গোরামি বা অজ্ঞতা রয়ে যায়। এ অবস্থায় বলা যায় যারা বিচার বুদ্ধি দিয়ে ধর্মের মাহাত্ম্য না বুঝে কেবল আচরন পালন করে। তারা ধর্মকে আশ্রয় করে নিজেকে ধার্মিক হিসেবে জাহির করে আর পরনিন্দা ও আমিত্বে অহংকার প্রকাশ করেন।
আর যারা মাহাত্ম্য হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন,তারা চোখের জলে প্রভুর কাছে সরল সাবলীল ভাষায় নিজেকে আত্মসমর্পণ করে! ঐশ্বরিক বিধি -বিধান নিরবে মেনে চলে, সর্ব স্তরের মানুষকে ভালবেসে তার পাশে থাকেন, তাই হচ্ছ প্রকৃত ধার্মিক!! তারা বাকসংযমী, তারা ঐশ্বরিক বার্তা মনে ধারণ করে নিঃশব্দে, নিঃসন্দেহে নদীর স্রোতের মত বয়ে চলে। এবং প্রভু তাদের প্রতি সু-নজর রাখেন সর্বদাই।
শুধুই মন্ত্র কিংবা অন্য কিছু তে তাকে সন্তুষ্ট নয়, বরং তার অধিক হচ্ছে, জীবের কল্যানে যে নিজকে সমস্ত জীবন নিয়জিত করে প্রভুর কাছে দেয়া প্রতিজ্ঞা পালন করে নিজকে মানুষ হিসেবে গরে তোলে! এবং তার পাশে চিরকাল ঈশ্বর থাকেন বিরাজমান!
তবে কেন আমাদের এত ধর্ম নিয়ে বিরোধ -বৈসম্য, আমরা কি
সকলে মিলে সাম্য চিন্তা করতে পারি না। পৃথিবীর এই ক্রান্তি লগ্নে কেন ভাইরাসেরা মানুষের কানে কথা বলতে সাহস পায়? কেন আমারা পরিস্কার পরিছন্ন থাকা ধর্মীয় রীতি তা ভুলে যাই? কেন আমরা বলি করোনা হলে শত্রুকে ছুয়ে দেই? কেন আমরা ধর্মের অহংকার করি
নিজ – ধর্মে থেকে ও আমরা অন্যের ধর্ম থেকে ভাল রীতিনীতি গুলো ফলো করতে পারি, অন্যের উৎসবে আনন্দ করতে পারি! এবং পারি নিজেদের সংস্কৃতির উপযুক্ত সম্মান করতে।
আমার যদি মানুষ হই তবে বলব শত্রু ও যেন বিপথগামী না হয়, বিকৃত – মৃত্যু না ঘটে। আমরা সকলের নিজ নিজ ধর্ম -সংস্কার বজায় রেখে, অন্যদের সাথে মানবীয় বন্ধন গরে তুলে সুন্দর সভ্যতা উপহার দিতে পারি।
আমরা মানুষ একি রক্তে -মাংসে গরা এই সহজ কথাটি যেন ভুলে না যাই। যুগে যুগে মহা সাধকের বানী প্রচার করে গেছেন তাদের নানা কাব্যগ্রহন্থে! কবি নজরুল বলেছেন,” গাহি সাম্যের গান,
মানুষের চেয়ে নহে কিছু মহীয়ান। ”
কবিগুরু বলেছেন, ”
রেখেছ বাঙ্গালি করে
মানুষ তো করোনি! ”
” সবারে বাসরে ভাল,
নয়তো মনের কালি ঘুচবে নারে!”
চণ্ডিদাস বলেছেন, ”
সবার উপরে মানুষ সত্য,
তাহার উপরে নাই!”
বিবেকানন্দ – স্বামীজি বলেছেন,”
জীবে প্রেম করে যেই জন
ঈশ্বর সেবিছে সেই জন!
তবে আমরা ও মহাজ্ঞানী মহাজন দের মত,পথ অনুসরণ করে ধর্ম, বর্ন নিঃর্বিশেষ সকলে, সকলকে সম্মান শ্রদ্ধা বিনিময় করে চলার পথকে সহজ ও সুন্দর করে পৃথিবীক কে আরো অনেক দিন সতেজ করে রাখতে পারি।
ভালো বাসতে পারি!!
[বিদ্রঃ আমি মানুষ হতে চাই! ]
(সুইটি বনিক-প্রগতিশীল লেখিকা)