শিশির আহমেদ সম্পাদিত প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠার ‘ধরিত্রী শ্রেষ্ঠা শেখ হাসিনা’ (২০১৯) বইটি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে বৃহৎ কলেবরে সজ্জিত।এটি শিশির আহমেদের সুসম্পাদিত একটি গ্রন্থ। শিশির আহমেদ ২৬ নভেম্বর ১৯৮৪ সালে মুন্সীগঞ্জে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার। এ বইটি ছাড়াও তিনি আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে কয়েকটি বই লিখেছেন।
রাজনীতিবিদরাই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যান সামনের দিকে। যেমন আমরা স্মরণ করতে পারি মহামতি আলেকজান্ডার, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, আব্রাহাম লিংকন, জর্জ ওয়াশিংটন, মহাত্মা গান্ধী, চে গুয়েভারা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলা প্রমুখের নাম। রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হলে ব্যর্থ হয় গোটা জাতি। শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ কর্মের মধ্য দিয়ে নিজেকে উন্নত করেন। তেমনি লেখক স্বতঃস্ফূর্তভাবে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একজন রাজনীতিবিদ। নিজেকে উন্নতি করেছেন অনন্য উচ্চতায়। দেশ ও জাতি গঠনে শেখ হাসিনার অবদান অতুলনীয়। তিনি জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিল সে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মুখোমুখি করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন এর মধ্য দিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য এক ইতিহাস।
‘ধরিত্রী শ্রেষ্ঠা শেখ হাসিনা’ বইটিতে শেখ হাসিনার জন্ম থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের চড়াই-উৎরাই বর্ণনা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার শৈশব থেকে শিক্ষা জীবন, বিবাহ, পারিবারিক জীবন এবং রাজনৈতিক জীবনের সকল ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে শেখ হাসিনার অবদানকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন বিশাল একখণ্ড এই বইয়ে লেখক। লেখক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ও দেশের বাইরের অবদান এবং তাঁর স্বপ্ন, পাওয়া না পাওয়ার চিত্র অঙ্কন করেছেন। এ বইয়ের বিভিন্ন প্রবন্ধে বিভিন্ন অংশে এসব চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ও শিক্ষাজীবন, ছাত্ররাজনীতি, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ হাসিনা, মার্চের আন্দোলন ও শেখ হাসিনা, ১৫ আগস্ট ও শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন, জেনারেল এরশাদের শাসনের ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, পানিবণ্টন চুক্তি, শেখ হাসিনার একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, শেখ হাসিনার সমুদ্রসীমা জয়, পদ্মা সেতু নির্মাণ, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, রোহিঙ্গা সমস্যা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, হাসিনার প্রাপ্ত পদক ও পুরস্কার, শেখ হাসিনা একজন লেখক ছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ এবং ভাষণ তুলে ধরেছেন। তবে সম্পাদক বিশ্ব সভায় নেত্রীর অনেক অবদান তুলে ধরেননি এই গ্রন্থে বিশেষত শেখ হাসিনার জাতিসংঘ এবং বিশ্ব দরবারে যে অবদান তা। অবশ্য তিনি বাংলাদেশের ভেতরে নেত্রীর সাফল্য ও অবদানকে বেশি তুলে ধরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের কন্যা ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমানু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হলেও তিনি বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে যান। বর্তমানে এক ছেলে এক মেয়ের জননী। শেখ হাসিনা ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত। বাবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় তাঁরও ঝোঁক ছিল রাজনীতির দিকে। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দিয়ে দেশের পক্ষে কাজ করেছিলেন পাকিস্তানের হাতে বন্দি জনগণকে মুক্ত করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর যে প্রয়াস তা কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনার মাঝেও দেখা যায় এবং জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ভাষণ দানের সময় তিনি বাবার সাথেই বাসা থেকে রেসকোর্সে উপস্থিত হন। এছাড়া ছাত্র আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এখনো সারা বাংলার মানুষের ক্ষুধা দারিদ্র্য দূর করার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। ১৯৭৫ সালে জার্মানিতে থাকার কারণে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। পরিবারের সবাইকে হারানোর পরেও তিনি দেশে আসতে পারেননি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ গ্রহণ করেন, তখন থেকে তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রাম শুরু। বাংলাদেশকে উন্নত করার এবং বাংলাদেশ থেকে শত্রুমুক্ত করার এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। এরশাদের শাসনামলে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আমার জন্য আন্দোলনের ফলে অনেকবার গ্রেফতার হন, কারাবরণ করেন। অবশেষে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তখন থেকে নতুন যুদ্ধ,নতুন সংগ্রামের সূচনা। ভারতের সাথে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, বিভিন্নভাবে ভাতা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আবার নতুনভাবে দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য কাজ শুরু করেন। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মেট্রোরেল বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কাজ । দেশ ও দেশের কাজের অবদান স্বরূপ তিনি এখন পর্যন্ত ৪৩ টি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের জন্য জাতিসংঘ সেরেস পদক, ১৯৯৮ সালে মাদার তেরেসা পদক প্রদান করেন। ২০১৪ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক শান্তির বৃক্ষ এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য রিজিওনাল লিডারশিপ পুরস্কার, জাতিসংঘ কর্তৃক চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ ২০১৫ পুরস্কার অন্যতম।
রাজনীতি, প্রধানমন্ত্রিত্বের পাশাপাশি তিনি অনেক গ্রন্থের লেখক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে “শেখ মুজিব আমার পিতা “, “বাংলাদেশের সৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য বিমোচন”, ‘‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’’ অন্যতম।
শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অবদান দেশ ও জাতির কলঙ্কমুক্ত করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন- “সব হারিয়ে আমার শুধু দেবার পালা। দেশের মানুষের জন্য যে ত্যাগ করার করব,আমি আমার জীবন দিতেও প্রস্তুত। “
এছাড়া ‘ধরিত্রী শ্রেষ্ঠা শেখ হাসিনা’ বইতে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, সমাজ ও সংস্কৃতি, ভাষা এবং বিশ্ব দরবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে অবদান তা তুলে ধরা হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলার ১৭ কোটি মানুষের নেত্রী সর্বোপরি বিশ্ব মানুষের নেত্রী। বইটির বহুল প্রচার কাম্য।
(ধরিত্রী শ্রেষ্ঠা শেখ হাসিনা, শিশির আহমেদ সম্পাদিত, ইতিহাস প্রকাশন, ২০১৯, প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর ও মাহমুদুল হাসান মিলন, মূল্য : ১৮০০ টাকা)