জবি করেসপন্ডেন্ট
রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়(জবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ, হতাশা, অনিশ্চয়তা ও অনিদ্রায় দিন পার করছেন । প্রতিদিন কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে সালাম দিয়ে তাদের দিনটা শুরু করা একটা রুটিন হয়েছে । তাদের কাছেই এটাই এখন রাজনীতি । ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্রাচার্যও রাজনীতি শেখাচ্ছেন । প্রটোকল নিয়ে ঘুরছেন । সালাম নিয়ে তৃপ্ত হচ্ছেন । দিনের পর দিন ঘোরাচ্ছেন । সালাম দিতে দিতে জবি ছাত্রলীগের নেতারা আজ ক্লান্ত । তারা দ্রুত কমিটি দিয়েই এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায় ।
এদিকে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেই কোন কর্মসূচি । লকডাউনের শুরুতে ক্যাম্পাসে সক্রিয় থাকতে দেখা গেলেও এখন যায় না । এখন কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে টিএসসিতে হাজিরা দিয়ে নিজের সক্রিয়তা জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন । পার্টি অফিস থেকে শুরু করে টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন কেন্দ্রীয় দুই নেতার পেছন পেছন ঘুরে বেড়াচ্ছেন । প্রতিনিয়ত তাদের প্রটোকল দিচ্ছেন । তবে কমিটির অনিশ্চয়তা কাটছেই না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের হতাশা-অনিশ্চয়তা প্রকাশ করে তাদের সীমাবদ্ধতা জানান দিচ্ছেন । তাদের এমন অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন কর্মীরাও । কর্মীরাও বিমুখ হচ্ছেন নেতাদের কাছ থেকে । তবে অনেক কর্মী বাধ্য হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন প্রকাশ্যে ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক শরীফ-সিরাজ কমিটি ৩ অক্টোবর ২০১২ সালে এক বছরের জন্য অনুমোদিত হলেও ৪ বছর কাটিয়ে দেয়। সর্বশেষ কমিটি ২০১৮সালের ১৭ নভেম্বর মো.তরিকুল ইসলাম কে সভাপতি ও শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল কে সাধারন সম্পাদক করে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষনা করা হয়েছিল। প্রেমঘটিত কারণে দিনভর সংঘর্ষের জেরে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এই শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সম্মেলন হলেও এখনও কমিটি ঘোষনা করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ।
পদ-পত্যাশি এক নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আমাদের এই অবস্থার দ্রুত সমাধান হলে আমরা হাফ ছেড়ে বাঁচি । ছাত্রলীগে ভালোবেসে অনেক তো ঘুরলাম, রাজনীতি করলাম । আর কত দিন ঘুরা যায় তাদের (কেন্দ্রীয় দুই নেতা) পেছনে ? আমাদের তো ক্যারিয়ার আছে? নেতা হলে রাজনীতি করবো , না হলে ব্যবসা বা চাকুরী করতে হবে , পাশাপাশি রাজনীতি করবো।
তিনি আরো বলেন, এখন করোনা ভাইরাসের কারণে বলতেছে ক্যাম্পাস খুললে কমিটি দিবে । তারা আবার কমিটি বিলুপ্ত করতেছে বিভিন্ন জায়গার । কিছুদিন আগে জেলা-মেডিকেল কলেজগুলোর কমিটি দিলো । আমাদের কমিটি দিতে বললেই বলে, ক্যাম্পাস খুললে দিবে। এটা কেমন কথা ? অন্য ইউনিটের কমিটি দিতে পারলে জগন্নাথের কমিটি দিতে সমস্যা কোথায়?
বিনএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ছাত্রলীগ করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি(শরিফ-সিরাজ কমিটি) ও বর্তমানে যুবলীগের সহ-সম্পাদক হিমেলুর রহমান বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনলে খুব খারাপ লাগে । জবি শাখা ছাত্রলীগ বরারের ন্যায় অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার । তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এই অবস্থায় দায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপর বর্তায় উল্লেখ্য করে বলেন, জবি ছাত্রলীগকে মূল্যায়ন করে শক্তিশালী সংগঠন করা হোক ।
এবিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলা যায় নি ।