সবার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের নিশ্চয়তাই সম্প্রীতি
রাজধানীর মগবাজারে সেন্ট থমাস চার্চে ‘নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক সেমিনার আয়োজিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিস্টান ট্রাস্ট (ইসিটি) এবং সেন্ট থমাস চার্চের যৌথ উদ্যোগে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিস্টান ট্রাস্টের (ইসিটি) চেয়ারম্যান রেভা. ইম্মানুয়েল মল্লিক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্ট থমাস চার্চের সিনিয়র ব্যক্তিত্ব জর্জ বিনিময় রায়।
সেমিনারের শুরুতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস (সেক্রেটারি, ইক্যুমেনিকেল খ্রিস্টান ট্রাস্ট)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেন্ট থমাস চার্চের সিনিয়র ব্যক্তিত্ব জর্জ বিনিময় রায় বলেন, যিনি অন্য ধর্ম পালন করেন তিনি যেন স্বাধীনভাবে পালন করতে পারেন সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি হলো আপনি যেন আপনার ধর্মটা স্বাধীনভাবে পালন করতে পারেন। এক ধর্ম যেন অন্য ধর্মের উপর হস্তক্ষেপ না করে। এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আর এটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেন সরকার। কোনো ধর্মকে বেশি গুরুত্ব দিলে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হয়ে যায়।
জাতীয় ঐক্যই জাতির মেরুদণ্ড উল্লেখ করে জর্জ বিনিময় রায় বলেন, একটা জাতির মধ্যে ঐক্য থাকলে তারা যে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে একতা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আজকে আমরা যে সভ্যতার উপর দাঁড়িয়ে আছি, সেটা এনে দিয়েছে একতা। আমরা যদি এক থাকি আমদের নিরাপত্তা থাকবে। সুতরাং, আমাদের মধ্যে একতা সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমাদের কর্তব্য হলো, নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ঐক্য নিশ্চিতে নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের অবদান রাখা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে রেভারেন্ড ইম্মানুয়েল মল্লিক বলেন, সম্প্রীতি ও ঐক্য রক্ষায় আমাদের সকলের পাশাপাশি মিডিয়ারও গুরুত্ব রয়েছে। আমরা বিগত আন্দোলনে মিডিয়ার ভূমিকা দেখেছি।
সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমেদ, বিশপ সাইমন বাড়ৈ, সদস্য, ইসিটি বোর্ড, জন সুশান্ত বিশ্বাস, ট্রেজারার, ইক্যুমেনিকেল খ্রিষ্টান ট্রাষ্ট (ইসিটি) প্রমুখ।
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, কোনো কোনো জায়গায় সেনাবাহিনীকে ঐক্যের প্রতীক বলা হচ্ছে, কোথাও ধর্মকে বলা হচ্ছে। আমি বলছি সেনাবাহিনী হচ্ছে নিরপেক্ষ একটা শক্তি। কেউ যদি নিরপেক্ষ থাকে সেখানে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ। আমাদের ছাত্রদেরকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে তারাও ঐক্যের প্রতীক হতে পারে। সেটা তারা বিগত আন্দোলনে দেখিয়ে দিয়েছে। বাস্তবিক অর্থে ঐক্য ঠিক করতে হলে সামাজিক ন্যায়বিচার অত্যন্ত জরুরি। আগামীর পৃথিবীকে সুন্দরভাবে সজাতে হলে, সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতিকে রক্ষা করতে হলে জাতীয় ঐক্য জরুরি।
৫ আগষ্ট পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত দেশকে রক্ষা করেছে উল্লেখ করে ইসিটি ট্রেজারার জন সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, দেশ দাঁড়িয়ে আছে তিনটি পিলারের ওপর। সেটা হলো জনগণ, সরকার ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর সঠিক সিদ্ধান্ত আমাদের দেশকে পথ হারাতে দেয়নি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। তাড়াহুড়ো করে আমরা দেশকে আরেকটি ফ্যাসিস্ট এর হাতে তুলে দিতে চাই না।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইসিটির সেক্রেটারি প্রফেসর ড. মিল্টন বিশ্বাস। প্রফেসর বিশ্বাস বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী ‘নতুন বাংলাদেশ’ নিরাপত্তা ইস্যুতে নতুন পথের অন্বেষী হয়ে ওঠে। দেশজুড়ে সেনাবাহিনীর ইতিবাচক তৎপরতা অভিনন্দিত হয়। কিন্তু সেসময় থেকে দেশের কোনো কোনো স্থানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান তথা অমুসলীম জনগোষ্ঠীর উপর যে চাপ তৈরি হয় তাতে ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রসঙ্গটি সামনে আসে। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল লরিয়েট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এক ধর্ম সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের সৌহার্দ্য অক্ষুণ্ন রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে সাংবাদিক সুজাউল ইসলাম বলেন, ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নামে একটা বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়া, দৈনিক খবরের কাগজের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, দীর্ঘ সময় অন্যায় অত্যাচার জুলুমের শিকার একটি জাতিকে ছাত্র-জনতা এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রক্ষা করেছে। এখানে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। পরাজিত শক্তি ঐক্য বিনষ্ট করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্নভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার সবরকম চেষ্টা করছে।