নিজস্ব সংবাদদাতা :
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছে খ্রিষ্টীয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) নামক একটি দুর্নীতিগ্রস্ত ‘এনজিও’। যাদের নিজেদের অপকর্ম নিয়ে একাধিক মামলা রয়েছে। তারাই আবার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের একজন শিক্ষকের চাকরি খাওয়ার ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র ওই অধ্যাপকের পেশাগত জীবনে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং বিশ্বস্ততায়ও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ২২ মে(২০২৫) ধর্মীয় ট্রাস্ট ‘ইসিটি’তে ইভান-শাহীন ব্যাপারী-জুলিয়েট নিয়ে এসেছে জগন্নাথের তদন্ত কমিটিকে। তার আগে ১৮ মে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ইসিটি দখলের জন্য চেষ্টা চালিয়েছে। গুরুতর সব অভিযোগ রয়েছে ‘সিসিডিবি’র বিরুদ্ধে। অনৈতিক উপায়ে সরকারি প্রজেক্ট পাওয়ার চেষ্টা থেকে শুরু করে প্রজেক্টের টাকা লোপাটের একাধিক ঘটনা আছে সিসিডিবি’র জুলিয়েট-বরুণ-অনীল-পঙ্কজ-দীপক গংদের বিরুদ্ধে। সিসিডিবি’র দুর্নীতির বিষয়ে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ অবশ্যই অপরিহার্য।
এনজিও’টির বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোকে ঘুষ দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে। একটি বাইরের প্রতিষ্ঠান (সিসিডিবি) হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠনসমূহ পদক্ষেপ নিচ্ছে বা আগ্রহ দেখাচ্ছে যা একেবারে নীতি বিরুদ্ধ কাজ। সিসিডিবি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অশুভ প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু অভিযোগকারি সংস্থা সিসিডিবি’র বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ফলে এই অভিযোগের পেছনে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ বা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য আছে কিনা, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক মহলে। কারণ সিসিডিবি’র অভিযোগে একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
২.
উল্লেখ্য, জগন্নাথের একজন খ্রিষ্টান অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিসিডিবির (CCDB) আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই অধ্যাপক ইসিটি ট্রাস্ট (ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিষ্টান ট্রাস্ট)-এর সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্র পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে একাধিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—একটি বাইরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কীভাবে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে যেখানে ‘ইসিটি’র বৈধ কমিটি ট্রাস্টটি পরিচালনা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘আমরা যে কোনো অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নিই। তবে এটি সত্য যে, বিষয়টি সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতার মধ্যে পড়ে না। তবুও সিসিডিবি’র লোকজন বারবার ক্যাম্পাসে এসে বেশি আগ্রহ দেখানোর কারণে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।”অন্যদিকে, একাডেমিক ও সুশীল সমাজের কিছু সদস্য অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, সিসিডিবি নিজেই নানা অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং তাদের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
অভিযুক্ত খ্রিষ্টান অধ্যাপকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা দাবি করেছেন, ‘‘এটি একটি অপপ্রচার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাকে হেয় করার চেষ্টা।”বিশ্লেষকদের মতে, যদি অভিযোগটি আইনি বা বেসরকারি কোনো সংঘাতের আওতাভুক্ত হয়, তাহলে তার সুরাহা আদালতের মাধ্যমে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিসরে এ ধরনের বিষয় আমলে নেওয়া “উদুর পিন্ডি বুদর ঘাড়ে” অবস্থার মতো যা প্রশাসনিক স্বাধীনতার ওপর প্রশ্ন তুলতে পারে। সিসিডিবি’র পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে কিছু জানানো হয়নি।
এমতাবস্থায়, বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠছে যে তদন্ত যেন বন্ধ করা হয় এবং কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক চাপ থেকে মুক্ত থাকে জগন্নাথ প্রশাসন। শিক্ষকমণ্ডলী বলছেন, উক্ত অধ্যাপককে এই প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত, বাইরের বিষয় ক্যাম্পাসে পাত্তা না দেওয়াই উচিত।
৩.
দুর্নীতিগ্রস্ত ‘এনজিও’ ‘সিসিডিবি’র জুলিয়েট কেয়া মালাকার, ডেভিড অনীল হালদার, এডভিন বরুন ব্যানার্জি, পঙ্কজ কস্তা, ডেভিড দীপক দাস – একাধিকবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অপকর্ম আড়াল করার জন্য একজন গুণি খ্রিষ্টান অধ্যাপকের চরিত্র হননে অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছেন।
সিসিডিবি’র অপরিসীম দুর্নীতি, অর্থ লোপাট, সরকারি কাজ পাওয়ার জন্য ঘুষ বাণিজ্য গোপন করার জন্য ‘ইসিটি’ ইস্যুতে জুলিয়েট গং অতি তৎপরতা দেখাচ্ছেন। তাদের অসততা ও অপকর্ম লুকানোর পথ না থাকায় নিজ সম্প্রদায়ের একজন অধ্যাপকের চাকরি খাওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন। এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে উক্ত অধ্যাপক একাধিক মামলাও করেছেন। আসলে ভূয়া অভিযোগ দিয়ে সিসিডিবি’র জুলিয়েট গং নিজেরাই ফেঁসে যাচ্ছেন। যখন দুর্নীতির অভিযোগে নিজেই বারবার অভিযুক্ত হয় একটি এনজিও, তখন তাদের আনা অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ।