দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিজ্ঞ ও মানসম্মত শিক্ষকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ২০২০ সালে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা কমেছে। আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিধারী শিক্ষকের সংখ্যা দশের নীচে। শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে এমন ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ডিগ্রিধারী কোনো শিক্ষক নেই। ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সংখ্যা দশের নীচে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা ছিলো ৮ হাজার ৭২৮ জন। ২০২০ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬৫০ জনে। উচ্চতর ডিগ্রিধারী সবচেয়ে বেশি শিক্ষক রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষক দুই হাজার ৪২১ জন। তার মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রিধারী আছেন ১ হাজার ৯৫ জন ও এমফিল ডিগ্রিধারী ১৮৮ জন। সবচেয়ে কম রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রয়েছেন ২৮ জন। তার মধ্যে মাত্র দুইজন শিক্ষক আছেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী।
ইউজিসি বলছে, পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল।
এর জন্য শিক্ষকদের গবেষণার প্রতি উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বর্তমানে শিক্ষকরা তাদের মূল কাজ শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গবেষণা করা থেকে দূরে সরে এসেছেন। শিক্ষকরা এখন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দল গঠন করছেন। বিভিন্ন রংয়ে ভাগ হয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ইউজিসির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৪৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সালে শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিলো। এর মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার জন্য কোনো টাকা খরচ করেন নি।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নামকাওয়াস্তে গবেষণা খাতে কিছু টাকা খরচ করে দায় সেরেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় ৬৫ লাখ টাকা খরচ করলেও ২০২০ সালে একটি প্রকাশনাও প্রকাশ করতে পারেনি। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় এক কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করলেও তাদের প্রকাশনা ছিল মাত্র একটি। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র দুটি করে প্রকাশনা প্রকাশ করেছে। তবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৭০ লাখ টাকা এবং রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তিন লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয় করলেও একটি করে প্রকাশনা প্রকাশ করেছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গবেষণায় সবেচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ছয় কোটি ৬১ লাখ টাকা। তাদের প্রকাশনার সংখ্যা ছিল ৪৪৫।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে নতুন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য যোগ্য শিক্ষক তৈরি হচ্ছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু সনদ প্রদানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন লেখাপড়ার উদ্দেশ্য কী তা স্বচ্ছ ধারণা হয়তো অনেকের নেই। বিশ্বিবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবণতা হচ্ছে ডিগ্রি অর্জন করা। অভিভাবকরাও এতেই খুশি। বাস্তবে জীবনে গবেষণাহীন উচ্চশিক্ষা আমাদের কাঙ্খিত ফল আসছে না। রেগুলেটরি অথরিটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় প্রতি জোর দিতে উৎসাহ দিতে হবে। একই সঙ্গে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল পদস্থ থাকেন, তারাও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান দেশি বিদেশি জার্নালে প্রকাশের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।