১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, রাত ১:০৩
নোটিশ :
Wellcome to our website...

সবুজ নদী, শীতল জল

রিপোর্টার
রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন

সাথী হালদার।।

গল্পটা লিখতে শুরু করলে নন্দিনী প্রদীপকে বলেছিল এটার পরিণতিতে নায়ক-নায়িকার মিল দেখতে চাই। তুমি সব গল্পে নায়ককে মেরে ফেলার ফন্দি করো কেন? খুব সহজে পালিয়ে বাঁচতে চাও দীপ? জীবনটাকে এতোটা সহজ মনে করেছিলে কেন? চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পার না? প্রেম করেছ অথচ আমার দায়িত্ব নিতে পার নি। কিন্তু রাত-দিন আমার কাছে থাকতে চাও। হাস্যকর তোমার জীবন। আমাকে অন্যের কাছে ঠেলে দিলে তারপর আবার নিজেকে জাহির করতে এলে সেই আমারই কাছে। এই তোমার জীবন? আমি যা বলব তাও করতে পারবে না। পারবে কি দীপ? সব কিছু ছেড়ে চল দূরে চলে যাই। পারবে? তোমার সমাজ, সাংবাদিকতা, পরিচিত লেখক সকলকে ছেড়ে আমাকে নিয়ে থাকতে পারবে না?

 প্রদীপ কথাগুলো শুনছিল আর ভাবছিল। সেদিন নন্দিনীকে চুমো খেয়ে সে তখন অন্য মানুষ। এতো কাছের কিন্তু হঠাৎ করে নন্দিনীকে দূরের সারস মনে হলো। পশ্চিমের পড়ন্ত ব্যাকুল রোদ ওর মুখ চোখকে আলোকিত করে তুলছিল। ও ঝুকে পড়েছিল দীপের দিকে। দীপ তখন দূর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবুজ বালু নদীর দিকে চেয়েছিল। জলের শীতল কোনো অনুভূতি পাওয়ার জন্য নন্দিনীর হাতের মধ্যে হাত। ওর চোখের দিকে তাকানোর প্রবল আকুতি। তারপর কাঁধের স্পর্শ। চুম্বনের প্রথম রাগিনী। তারপর নন্দিনীর অনেক কথা। কথাগুলো তীরের মতো দীপের অন্তরকে ছাড়খাড় করে দিচ্ছিল। ‘গল্প লেখার উপকরণ খুঁজতে এসেছ। ইডিয়ট। ফালতু লোক তুমি। তুমি কি লেখক? আমার কোনো ঘটনা যেন তোমার গল্পে না আসে। দীপ, একসময় তোমাকে নিয়ে গর্ব করতাম। তুমি আমার পথ। তুমি শক্ত করে আমার হাত ধরে আছ। কিন্তু কি পেয়েছি তোমার কাছে বল তো? ভালোবাসি ভালোবাসি করে কত পাগলামি। রাত-দিন কত স্বপ্ন বোনা। তোমার কি মনে আছে- বেলাপুরে একটা ছোট নদী দেখব বলে একদিন ভোরে আমরা দুজন বেরিয়ে পড়েছিলাম। তারপর নেমে এলো বৃষ্টি। অঝোর বৃষ্টির মধ্যে তুমি নৌকা ভাড়া করে নদীতে ঘুরলে। অদ্ভুত ছিল সেই মেঘলা আকাশ, নদী আর আমাদের ঘনিষ্ঠতা। কিন্তু কি দিয়েছিলে? আমাকে ফেলে পালালে কেন? বড় হতে চাও তাই না? তোমার যোশেফ দা পরামর্শ দিয়েছিল বড় লেখক হলে মেয়েমানুষ এমনিতেই জুটবে। নারীদের নিয়ে চিন্তা ছেড়েছিলে। যখন পত্রিকায় লেখা পড়তাম ভাবতাম তুমি আমারই কাছে আছ। কিন্তু ক্রমশই তোমার কাছ থেকে দূরে গেলাম। জাহিদের কবিতা আবৃত্তি শুনতে শুনতে প্রেমে পড়লাম। তোমার কোনো খোঁজও রাখতে উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। মনের কথাগুলো ভেবে দেখার অবকাশ পাইনি আর। আজ তুমি বড় অন্যায় করেছ দীপ। আবেগ কি আমার কম ছিল না এখন শুকিয়ে গেছে। তোমার আবেগ নিয়ন্ত্রণ কর। সম্পর্কটা রাখতে হলে এটা মেনেই চলতে হবে।’

প্রদীপ ধাক্কাটা সামলে উঠতে চেষ্টা করে। নিজেকে তিরস্কার করে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় আশ্চর্য নন্দিনীর কাছে তার ছুটে যাওয়া কি সত্য নয়? রাতদিন মনের ভেতর একরাশ আনন্দ বয়ে দেয়া মিথ্যা? নিজের জন্য যা নিজেকে নিয়ে যা তারই পরিপূরক চিন্তা করা; ওকে নিয়ে ছুটে চলার ইচ্ছা- সবই ঠুনকো? নন্দিনী তোমার কথা ফিরিয়ে নাও। আমি মনের থেকে স্বচ্ছ হয়েই তোমার সাথে আবার মিশছি। আমি অতীতের প্রদীপ নেই। এখন দীপ হয়ে তোমার অন্তরে জ্বলব। আকাশ হয়ে ভাসব তোমার চোখে, তোমার পাখনার পালক আমি। আমি আর আগের মতো নেই নন্দিনী। নন্দিনী আমাকে তুমি ভেতর থেকে দেখ। আমি আমার প্রেমকে, তোমাকে আর মানুষকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আমার বেঁচে থাকার, আনন্দে থাকার মুহূর্তগুলো অনাবিল করে তোল প্লিজ। জানি তোমার অনেক ভক্ত। তোমার সৌন্দর্যের পূজারি বহুজন। কিন্তু আমি তোমার মনের পূজা করি। সেই পূজা তুমি পবিত্র জেন।

নন্দিনী ভাবতে শুরু করলো। নন্দিনীকে বেশ ভাবনার মধ্যেই ফেলে দিলাম মনে হল । কিন্তু সত্যি বলতে নন্দিনী যে আমার কাছে স্বর্গীয়  এক অনুভূতি। এক পবিত্রতা দুজন মিলে এক আত্মা। আমার ভালো থাকা। যার নীরবতা আমার মনে প্রশ্ন তোলে, যার হাসির আড়ালে কান্নাটা আমাকে ভাবায়,  যার অভিমান আমাকে ভাবিয়ে তোলে সেই মানুষটি হলো নন্দিনী। ভালোবাসাটা সম্পূর্ণ একটা আলাদা জিনিস। বুঝতে হলে যেমন মনের মত মন লাগে তেমনি চিনতে হলে চোখের মত চোখ লাগে। প্রত্যেক মানুষই চায় তার জীবনে এমন একটি মানুষ আসুক যে তাকে চিনবে। বুঝতে শিখবে চুপ করে থাকার অর্থটা বুঝে নেবে। চোখ দেখেই বলে দিতে পারবে মানুষটার মনের ভিতরে কি চলছে। মিথ্যে হাসি দেখেই বুঝে নেবে সব কিছু। আমি রাগ অভিমান করে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও সে হাজারটা কারণ খুঁজবে সেই রাগ আর অভিমানকে মুছে ফেলার জন্য। সবার জীবনে কেউ না কেউ একজন থাকে কিংবা কোন একদিন চলে আসছে অথচ কেন যেন মনে হয় এই মানুষটাকে ঠিক যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে বোধহয় পাইনি। যে মন খারাপের অর্থ বোঝে না হাসির আড়ালে কান্নার অর্থ ধরতে পারেনি যে চোখের দিকে তাকিয়ে মনের অবস্থা বোঝার ক্ষমতা নেই। তার কাছে তো অভিমানের দাম টা শূন্য । এমন মানুষ  থেকেও না থাকা সমান। যে মানুষটা থেকেও না থাকার মত হয় তার থেকে কষ্টের আর কিছুই হতে পারে না। চাইলে যে কাউকে প্রয়োজন করে বানিয়ে নেওয়া যায় চাইলেই তুমি কাউকে প্রিয়জন বানাতে পারবে না। দিনের পর দিন আসে বছরের পর বছর চলে যায় একই সাথে বসন্ত ফাল্গুন বর্ষা কেটে যায় আরো অনেক ঋতু কেটে যায় অথচ কোথাও একটা কিছু রয়ে গেছে। অপ্রাপ্তি থেকেই যায় যেটা কখনোই ওই মানুষটা জানতে পারে না বা বোঝে না। মানুষটা এমন হয়েছে অমন হয়েছে কিন্তু মনের মত হতে পারেনি। আমাদের মত মানুষ গুলো যখন কোন মানুষকে বিশ্বাস করতে চায় না মানুষের ভরসা হতে চায় না কারো সঙ্গী হতে চায় না কারণ এরা জানে সবাই প্রতারণা আর ঠকানোর জন্য ফাঁদ পেতে বসে আছে। সম্পর্কে রাগ অভিমান ঝগড়া হবেই খুবই সাধারণ ব্যাপার। অথচ এই বিষয়গুলো অধিকাংশ মানুষ ঠিকভাবে সামলাতে পারে না। একটু উনিশ বিশ হলেই শুরু করে দেয় অপরের সাথে বাজে ব্যবহার। রাগ ঝগড়া অভিমান আজ আছে তো কাল থাকবে না। কিন্তু রাগের মাথায় আপনি যা বলে দেবেন তা কিন্তু সারাজীবন অন্তরে গেঁথে থাকবে। সেইসাথে আপনি নিজেও মনের দিক দিয়ে তার কাছে ছোট হয়ে থাকবেন।

সবকিছুর বাইরে নন্দিনী আমার এক অসাধারণ অনুভূতি। যেখানে বিশ্বাস শান্তি ভরসা আশা স্বপ্ন সাকসেস সব কিছুই যেন আমার নন্দিনী। একসাথে আবার সেই পথগুলোতে চলাচল আমাদের। পত্রিকায় লেখালেখি, অনেক রাজনীতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা। কিন্তু দিন শেষে ফেরার পথে যেন দুজন দুই পৃথিবীর বাসিন্দা। তাতে এখন আর আমাদের কোন সমস্যা নেই। এতক্ষণে বুঝে গেছি বাস্তবতা কঠিন। মনের মতো মানুষ মানুষগুলোকে মনের ভিতর রাখতে হয়। এই বাস্তব পৃথিবীতে বোধহয় ব্যস্ততার জন্য আর হয়ে ওঠে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর