সুইটি রাণী বণিক
আমাদের দেশ বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র একটি দেশ! আমাদের দেশ সুজলা, সুফলা, নানা বৈচিত্র্যের মানুষ ও তাদের কালচার! এখানে বাঙালি -অবাঙালি সকলে মিলে মিশে বসবাস করে থাকে।
বৈচিত্র্যময়তা রয়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশের। একটি দেশ তখনি সুন্দর, সুশৃঙ্খল হয়, যখন- সে দেশের সর্বস্তরের মানুষগুলো নিশ্চিন্তে দু-বেলা খেতে পায়, তাদের মৌলিক চাহিদা পুরণ হয় ; সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়; সুষ্ঠু মতামত প্রকাশের অধিকার থাকে।
প্রকৃতিক দুর্যোগময় (করোনা) বর্তমান বিশ্ব, বাংলাদেশ তার মধ্যে অতি ক্ষুদ্র একটি দেশ। এখানে ৯০% মানুষের সম্পদ ভোগ করে ১০% মানুষ, আর ১০% সম্পদ ভোগ করে ৯০ % মানুষ! সম্পদের এই অসম বণ্টন এর জন্য দায়ী বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দুর্বল প্রশাসন।প্রশাসন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনা রাজনৈতিক বলপ্রয়োগ ও ভুল সমাজ ব্যবস্থার কারণে।
বর্তমানে বেশিরভাগ (এক তৃতীয়াংশ) মানুষই সচেতন, শিক্ষা-কালচার ও তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে। কিন্তু বাকি থাকে কিছু ধর্মের আগাছা ও কিছু রাজনীতির নামে অরাজনৈতিক জনগোষ্ঠী। যারা পুরো সমাজ ব্যবস্থার উপর আধিপত্য বিস্তার করে, সমাজে প্রভাব খাটায়, প্রশাসনও তাদের প্রভাব পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারে না।যার ফলে সমাজে সৃষ্ট হয় নতুন নতুন সমস্যা, জটিলতা, সিন্ডিকেট, চুরি-বাটপারি, নারী নির্যাতন, খুন, রাজনৈতিক উশৃংখলতা, যোগ্য নেতৃত্বের অভাব, দ্রব্যমূল্য-বৃদ্ধি, যানজট, জনসতেতনতার অভাব, সর্বোপরি সামাজিক নিরাপত্তার বিনষ্টি।এই সমস্যাগুলোর মূল কারণ হলো- যোগ্য নেতৃত্ব অভাব ও
প্রভাব মুক্ত সুদক্ষ প্রশাসন!
১ কৃষি :
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, কিন্তু কৃষকদের পরিশ্রম অনুযায়ী ন্যায্য মূল না থাকায় দুর্বল কৃষি ব্যবস্থা! সরকারের উচিত দক্ষ প্রশাসন ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে শক্ত হাতে কৃষির উপর নজর দেয়া, প্রয়োজনে মূল্যের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দেয়া কারণ কৃষককে সকলে চেয়ে বেশি ভাল থাকতে হবে। আমরা চাল, গম একটু বেশি মূল্যদিয়ে কিনতে চাইনা, অপর দিকে আমরা বাইরের দেশের প্রযুক্তির পেছনে অপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করতে পিছুপা হই না। কৃষি ফলন না হলে, আমরা কি প্রযুক্তি খেয়ে বাঁচব? এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, যা বিবেচনায় রাখতেই হবে -দেশ উন্নয়নের জন্য।
২ সুষ্ঠু রাজনৈতিক ব্যবস্থা :
আমাদের প্রধানমন্ত্রী -এক বক্তব্য বলেছিলেন-“জন্মবংশ, শিক্ষা-যোগ্যতা বিচার বিশ্লেষণ করে, নেতা- নেত্রী নির্বাচন করা হবে।” সে দিক থেকে কতটা যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হল, তাদের কার্যাবলি মূল্যায়ন করা এবং প্রয়োজনে ভুল মানুষদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া।
৩ সুদক্ষ প্রশাসন :
দেশের প্রশাসন হবে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দলীয় প্রভাব মুক্ত। যাতে জনগণ তার উপর ভরসা করতে পারেন।
৪ দ্রব্যমূল্য :
এ করোনা কালে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি -ঈদ-রোজা বা কোন অবস্থায় দর -দম বৃদ্ধি হয়নি দ্রব্য- মূল্যের। এতে বুঝা যায় দেশের প্রশাসন ঠিক দেশ ও ঠিক। প্রশাসন যদি সব সময় সক্রিয় থাকে, দেশের জনগণ শান্তিতে থাকবে।
৫ শিক্ষা-ব্যবস্থার পরিবর্তন:
আমরা দেখি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক কিছু এখনো প্রাচীন পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে। এখানে ছাত্ররা সকাল ৯ টা থেকে ৪/৫টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকার করণে, তারা খাওয়া, ঘুম ও প্রয়োজনীয় শরীর চর্চার সময় পায়না, যার ফলে সকলের মেধা বিকাশ হয় না, অনেকেই স্কুল জীবনেই ঝরে পরে। এ দীর্ঘ সময়ে সংক্ষিপ্ত করে এনে তাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে! তারা যেন উপার্জনের সময় ও ব্যবস্থা করতে পারে এবং সেদিকে খেয়াল রাখতে পারে! আমরা উন্নত দেশের শিক্ষার পদ্ধতি ফলো না করে তাদের প্রযুক্তি বেশি ফলো করছি যার ফলে ছাত্রদের জীবন ধংসের দিকে। এ ব্যাপারে প্রশাসনসহ, শিক্ষা নেত্রীদের সুদৃষ্টি অতিপ্রয়োজনীয়। কারণ ছাত্ররাই দেশের নেতৃত্ব দেবে একদিন।
৬ স্বাধীন বিচার বিভাগ:
আমরা সাম্প্রতিক ও বিগত দিনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখব, বিচার বিভাগের কার্যক্রম স্বাধীন না হবার কারণে, অনেক মানুষ ন্যায়বিচার পায়নি ( ছাত্রী নির্যাতন, শিশু- নির্যাতন, হত্যা, সমাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অরাজনৈতিক দুরাচারিতা)! যার ফলে মানুষ হয়রানি নিয়ে জীবনযাপন করছে।
৭ সম্পদের সুষম বণ্টন:
মানুষের শিক্ষা-কর্ম ও যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের মূল্যায়ন করলে, সম্পদের বণ্টন সুষম হবে।
৮ শ্রমজীবীদের মূল্যায়ন জরুরি:
শ্রমজীবী মানুষরা শ্রম দিচ্ছে, কিন্তু উপযুক্ত মূল্য ও জীবন মান পাচ্ছে না। এই করোনা কালে অনেক ব্যবসায়ীদের বলতে শোনা যায় ” করোনায় কিছু হলে আমরা তা দেখব। ” এতে স্পষ্টই বোঝা যায় করোনায় মৃত্যু হলে তাদের কিছুই যায় এসে না, তারা কিছু পয়সা দিয়ে দফারফা করে ইতি টানবে। এমন হলে দেশ চলবে না এবং পড়ে যাবে, ব্যবসা।
শ্রমিকদের জন্য অবশ্যই সঠিক সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে দেশনেত্রীকে। যেন তাদের জীবনের মূল্যায়ন হয়।
৯ দেশীয় রাজনীতিতে বহিঃবিশ্বের প্রভাব মুক্ত রাখা:
আমাদের দেশটা এখনো পুরোপুরি স্বাধীন মনে হয় না, এখানে রাজনৈতিক অপশক্তি ও ধর্মীয় আগাছা বিরাজমান, ফলে ধর্মীয় গোড়ামী ও অরাজনৈতিক প্রভাব দেখা যায়। যার সুদৃষ্টি জরুরি।
১০ শিক্ষকদের মূল্যায়ন জরুরি:
দক্ষতা পূর্ণ শিক্ষকদের মুল্যায়ন জরুরি কারণ, একজন নৈতিক শিক্ষকই পারে ভাল ছাত্র তৈরি করতে!
১১ ঘুষ বা দুর্নীতি বন্ধ করা:
রাজনীতির ছালা পরে অনেকেই টাকা ছেড়ে চাকুরী নেয় ও দেয়, এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন হয় না, অযোগ্য লোকের দ্বারা পরিচালিত হয়, এতে সরকারের বদনাম হয়! এ ব্যাপারগুলো প্রশাসনের খেয়াল রাখতে হবে।
১২ পর্যবেক্ষণ:
সরকারের উচিত তার সকল কার্যাবলির উপর সঠিক পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি করা, কারণ ভুল মানুষের হাতে নেতৃত্বের চাবি পড়লে তারা নীতি ঠিক রাখতে পারে না; ফলে সরকারে সকল পরিকল্পনা ধংস হয়ে যায়।
একটি সুন্দর দেশ গঠনের জন্য- সরকার, জনগণ, প্রশাসন ও যোগ্য- নেতা-নেতৃত্ব প্রয়োজন। সুতরাং আমাদের সকলকে সচেতন ও ন্যায় – সুন্দরের অধিকারী হতে হবে।
(লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক, আইনজীবী এবং এম এ বাংলা)