৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, রাত ৪:৪৩
নোটিশ :
Wellcome to our website...

বরাদ্দ বেড়েছে ছয় গুণ, র‍্যাঙ্কিং পেছালো সাত ধাপ

রিপোর্টার
শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন

তৌসিফ কাইয়ুম

সময়ের সঙ্গে বাড়ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কলেবর। বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যয়। প্রতি অর্থবছরে বাজেটের সঙ্গে গবেষণা খাতেও বরাদ্দের পরিমাণ বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে এই খাতে বরাদ্দ বেড়েছে সাড়ে ছয় গুণ। অথচ গবেষণা র‍্যাঙ্কিং ক্রমান্বয়ে নিম্নগামী হচ্ছে। সর্বশেষ গত তিন বছরে র‍্যাঙ্কিং পিছিয়েছে সাত ধাপ।

তবে এ জন্য শিক্ষকদের গবেষণা আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে প্রকাশ না হওয়া, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে মানসম্মত গবেষণা স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সেসব বিষয়ে শিক্ষকদের অজ্ঞতা অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন গবেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দফতর সূত্রে জানা যায়, গবেষণা খাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৭৫ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ চার গুণ বাড়িয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা করা হয়। ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে গবেষণা বরাদ্দ ছিল চার কোটি ৯১ লাখ টাকা। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে গবেষণা খাতে প্রায় আট কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে, গত পাঁচ বছরে গবেষণায় বরাদ্দ সাড়ে ছয় গুণ বাড়লেও আন্তর্জাতিক গবেষণা র‍্যাঙ্কিংয়ে কয়েক ধাপ পিছিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু গত তিন বছরে পিছিয়েছে সাত ধাপ।

সিমাগো র‍্যাঙ্কিং পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে যেখানে গবেষণায় অবস্থান ছিল ৪১৬, অথচ ২০২১ এসে তা দাঁড়িয়েছে ৪২৩তম স্থানে। শুধু গবেষণা নয়, উদ্ভাবনেও গত পাঁচ বছরে পিছিয়েছে ১২৮ ধাপ।

তবে র‍্যাঙ্কিংয়ে পেছানোর জন্য দুটি বিষয়কে দায়ী করছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট বাড়ার সঙ্গে গবেষণার সংখ্যাও বাড়ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব গবেষণা আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে প্রকাশ হচ্ছে না। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে মানসম্মত গবেষণা স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সেসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক অবগত নন। ফলে গবেষণা হলেও সেটি গণনা করা হচ্ছে না। এ জন্য র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক জালাল উদ্দীন সরকার বলেন, বাজেট বাড়ার সঙ্গে গবেষণার সংখ্যাও বাড়ছে। প্রকল্প সাবমিট করা ছাড়া টাকা দেওয়া হয় না। গত চার বছরে অনেক তরুণ শিক্ষক গবেষণায় যুক্ত হয়েছেন। তারা ভালো গবেষণাও করছেন। এসব গবেষণা বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশও হচ্ছে। তবে গবেষণা র‍্যাঙ্কিংয়ে পেছানোর কারণ; আমাদের অনেক শিক্ষক আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে মানসম্মত গবেষণা স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সেসব বিষয়ে অবগত নন। ফলে ওসব গবেষণা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গণনা করা হচ্ছে না।

গবেষণায় টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও শতাংশ হিসাবে বাড়ছে না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গবেষণাগুলো তার রিভিউ দেশের শিক্ষকদের রেফারেন্স দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে এসব গবেষণার একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে প্রকাশ হচ্ছে না। এ ছাড়া গবেষণাগুলো মলাটবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। অনলাইনে প্রকাশ করা হয় না। র‍্যাঙ্কিংয়ের জন্য অনলাইনে থাকা (আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে প্রকাশ) গবেষণাগুলোকে গণনা করা হয়। এ জন্য আমরা গবেষণা র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ছি।

র‍্যাঙ্কিংয়ের উন্নতির জন্য গবেষণাগুলোকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা অবশ্যক বলে মনে করেন রাবির সাবেক সহ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগুলো বাইরের দেশের গবেষকদের রেফারেন্স এবং গবেষণা আন্তর্জাতিকমানের জার্নালে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়। তাহলে অটোমেটিক বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে ওপরের দিকে উঠে আসবে। অবশ্য এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, বর্তমান প্রশাসন গবেষণায় র‍্যাঙ্কিংয়ের বিষয়ে বেশ সচেতন। ইতোমধ্যে আমরা এই বিষয় আলোচনা করেছি। র‍্যাঙ্কিংয়ে এগোনোর জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে তিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এগুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জার্নাল থাকবে, সেখানে গবেষকদের গবেষণা পেপার প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া বছরের গবেষণা বছরেই শেষ করতে হবে। গবেষণার মান যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর