২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, দুপুর ২:০১
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

লুইপা’র কালসাপ

রিপোর্টার
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০১ অপরাহ্ন

– রেজওয়ান আহমেদ, ২৭ মার্চ ২০২০, পটুয়াখালী।

‘সমস্যা হতে পারে না? আমি কেবল তোমার ঘরের মেয়ে? আমার আলাদা জীবন হয়েছে না?… কোথাও না কোথাও সমস্যা তো থাকতেই পারে।…’

পদার্থবিদ্যার ছাত্রী স্বাতী। আর দশটা তথাকথিত সচেতন অভিভাবকের মতো শিউলি চৌধুরীর মাতৃস্নেহে মানুষ। যতটুকু সচেতন হলে মেয়ের. বাহ্য-আচরণগত পরিবর্তনই শুধু চোখে পড়ে, শিউলি চৌধুরী ততটুকু সচেতন। স্বাতীর সমালোচনা এবং দুশ্চিন্তায় মুখর, অথচ তার ভেতরের জগতকে ভালোভাবে পড়ে দেখতে ব্যর্থ শিউলি।

অনুসন্ধানী মনের এক ধরনের ভালোলাগা থেকে মাতৃভাষার একেবারে মূলে চলে যায় স্বাতী। তার পাশে থাকেন লুইপা। প্রাচীন যুগের বাংলা ভাষার কবি আর বর্তমান যুগের বিজ্ঞানের ছাত্রী স্বাতীর মধ্যে সেতুবন্ধ হয় চর্যাপদ। “চঞ্চল চীএ পইঠা কাল” – বস্তুজগতে শোভনের প্রেমে প্রতারিত হয়ে চঞ্চলচিত্ত স্বাতী লুইপা’র সাথে ভবের জগত সন্ধানে অবতীর্ণ হয়। মানুষের অবচেতন মনে এই যে স্কিজোফ্রেনিয়ার প্রভাব, তা স্বাতীকে দারুণভাবে সহায়তা করে বাঙলা ভাষার আদিতে চলে যেতে। এতে তার অর্জিত অভিজ্ঞতা তার জানা ইতিহাসের সাথে মিলে যেতে চায়। ঘটনাক্রমে বাস্তব জীবনে চঞ্চলচিত্ততার মুখে পড়ে নতুনভাবে। নতুন কোনো বাস্তব চরিত্রের সংস্পর্শে আসে। কে বা কারা তারা? তাদের সাথে কী ঘটে স্বাতীর? তার পরিণতিই বা কী হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে ‘লুইপা’র কালসাপ’ উপন্যাসে।

“… বস্তুর টানে হাত বাড়াল… সুপ্রভাত আর শুভ কামনায় ভরে গেছে মেসেঞ্জার… চায়ের কাপে ধোঁয়া উড়ছে…” – একটি আধুনিক যুগের সকালের বোধকরি এর চেয়ে বাস্তব বর্ণনা আর হয় না। হয় না পুরুষের ধর্ষকামী মানসের প্রাচীন আর বর্তমান যুগের সেতুবন্ধসূচক এমন সাযুজ্য – “পতঙ্গরা উড়ে আসে। বিষ ছড়ায় দেহে।” তার সমান্তরালে অঙ্কিত সে যুগের ডোম্বী ময়ূরীর ছলাকলার চিত্ররূপ, যা এ যুগের নাট্যকর্মী ময়ূরীদের জন্য স্পষ্ট প্রতিরোধবার্তা।

“ওরে ডোমি… উঠিস আর নামিস কার নাও থেকে?” – তীব্র সন্দেহে কানু তার ময়ূরী রাধাকে দরজার ওপাশ থেকে এ প্রশ্ন করলে এপাশ থেকে আমরা বুঝি শ্রীকৃষ্ণকীর্তনও এড়িয়ে যাননি ঔপন্যাসিক।

“… কোন প্রবাদের নাও বাইবে তুমি? নৌকার না ধানের শিষের? সিদ্ধান্ত তোমার।” – কী দারুণ দ্ব্যর্থ ইঙ্গিতসূচক বর্ণনা!

তরুণ জ্ঞানস্পৃহ মনের মনস্তত্ত্ব এ উপন্যাসে ঔপন্যাসিকের খেলনার সামগ্রী। স্বাতী অথবা ময়ূরী এদেশে অসংখ্য। কিন্তু চাইলেই রৌদ্র আর রবি চৌধুরীর মতো হোয়াইট কলার ক্রিমিনালদের সংখ্যা করা সম্ভব। সম্ভাবনাময় রৌদ্র-রবি অবশ্য ঘরে ঘরে এন্তার পাওয়া যাবে, যারা সুযোগের অভাবে কিঞ্চিৎ চরিত্রবান। এরা কালসাপেদের প্রতিভূ। এদের এবং এদের ডানহাত-বাঁহাতের ছোবল থেকে ময়ূরীদের বাঁচার উপায় লুইপা’র পৌনঃপুনিক উপস্থিতিতে বাতলানোর একটা চমৎকার উদ্যোগ সমগ্র উপন্যাসেই লক্ষণীয় ।

‘লুইপা’র কালসাপ’ বোধকরি অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কিছুটা অনুপযোগী। এর মূল কারণ এ উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহে যৌনতার ইঙ্গিত। অবশ্য বর্তমান যুগে পুরুষদের ধর্ষকামী মানসের শিকার যখন বয়স নির্বিশেষে সকল নারী, তখন এ ইঙ্গিত সৃষ্টিকর্মের খারাপ দিক হিসেবে সূচিত করার কিছু নেই।

চর্যাপদের ভাষার আঞ্চলিকতাবিচারে বলা যায় এতে বঙ্গকামরূপী ভাষার ব্যবহার রয়েছে। আলোচ্য উপন্যাসের ভাষাবৈজ্ঞানিক বিচারে কোথাও কোথাও ময়মনসিংহের রূপমূল দেখা গেছে (দিয়াম প্রভৃতি)। এর বাইরে অপরাধজগতের কিছু ইঙ্গিতসূচক ভাষার ব্যবহারও লক্ষণীয় – ‘… আর এ গাছের ডাল কেটে তোর ভবের খালে ঢুকিয়ে খালের গরম জলের স্রোত চিরতরে লোনা জলে ভরে দেব।’

বাঙলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদের প্রাসঙ্গিক অনুসরণে রচিত বিধায় সেকালের সমাজের নানা দিক সম্পর্কে ‘লুইপা’র কালসাপ’ স্বচ্ছ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছে। ব্রাহ্মণ রাজন্যদের অত্যাচারী মনোবৃত্তি, নারী-পুরুষের জৈবিকতা, পুরুষের ধর্ষকামিতা, পরকীয়া, ক্ষমতার আস্ফালন, চৌর্যবৃত্তি, রান্নাবান্নার শিল্পগুণ, খাদ্যাভাস – কী নেই সে ধারণার ফিরিস্তিতে?! স্বাতীর স্কিজোফ্রেনিক চরিত্রে এ সবকিছু বিমূর্ততা লাভ করেছে ঘটনা পরিক্রমায়।

বাঙলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী-গবেষকদের জন্য ‘লুইপা’র কালসাপ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। পড়তে পারেন মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত লোকেরাও – উপকারে আসলেও আসতে পারে।

মোহিত কামাল স্যার সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি স্কুলজীবনের শেষদিকে। ২০০৮ সালে। সেবার তাঁর ‘সুখপাখি আগুনডানা’ প্রকাশিত হয়। টিনএইজের উত্তাল সময়ে বইটি পড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকলেও পড়া হয়ে ওঠেনি এখনো। স্যারের অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে ‘মন’, ‘না’, ‘হ্যাঁ’, ‘পাথরপরাণ’, ‘মরুঝড়’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বইয়ের নামঃ লুইপা’র কালসাপ

লেখকঃ মোহিত কামাল

প্রকাশনায়ঃ বিদ্যাপ্রকাশ

প্রকাশ কালঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৪৪

মূল্যঃ ২৫০ টাকা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর