১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, দুপুর ২:৫৬
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক দেশগুলোর ভূমিকা

রিপোর্টার
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৬ অপরাহ্ন

।।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মোঃ শামসুদ্দীন।।

রোহিঙ্গা সমস্যা তিন বছর পূর্ণ হয়ে চতুর্থ বৎসরে পদার্পণ করেছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদার অব হিউমিনিটি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। ২৫শে আগস্ট ২০১৭ এর পর থেকে অদ্যাবধি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় তারা মিয়ানমারে নিরাপদে ও সম্মানের সাথে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় আছে।রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে বারবার নির্মমতার শিকার হয়েছে। মিয়ানমারের সংবিধানে তাদেরকে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় নি। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে গণ্য না হওয়াতে তারা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা এবং অন্যান্য সাধারণ নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিসেবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছিল। রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় গত তিন বছর ধরে আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহের কার্যক্রম এবং এর ধারাবাহিকতায় অর্জন সম্পর্কে এই পর্বে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সহযোগিতার কথা বলেছে। তিনি উভয় দেশ সফর শেষে তিন ধাপে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটা প্রস্তাবের রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জুলাই ২০১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেইজিং সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কিকিয়াং বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। সে সময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের ভূমিকার কথা প্রথমবারের মত এসেছে যা একটা বড় কূটনৈতিক সাফল্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে চীনের ভূমিকা জোরালো হয়েছে। কম্যুনিস্ট পার্টি অব চায়নার (সিপিসি) আভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী সংতাও বেইজিং এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাদের ইতিবাচক ভূমিকার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। চীন মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টা সৌহাদ্যপূর্ণ ভাবে শুরু করার বিষয়ে তাদের ইচ্ছার কথা বলেন।

চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাখাইন প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করে যাওয়ার কথা বলেছে চীন। চীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক উ জিং হাউ বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের জানিয়েছে যে, চীন মিয়ানমারকে রাখাইনে প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে বলেছে।বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয় দেশে চীনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম রয়েছে। চীন এই সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা কেন আগস্ট ২০১৭ এর পর তিনবার বাংলাদেশ সফর করেছে? তিনি নেপিডোতে অংসান সুচির সাথে দেখা করে এ সমস্যা সমাধানে যা কিছু সম্ভব তার সবই করার আশ্বাস দিয়েছেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের সম্মানের সাথে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে জাপান জরুরি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের জন্য ৪ মিলিয়ন ডলার প্রদান করে। জাপান রাখাইন প্রদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মিয়ানমার সরকারের প্রচেষ্টাকে সহায়তার পাশাপাশি কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সহায়তার কথা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছে।বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানী রাষ্ট্রদূত নাওকীইতো বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় যেতে রোহিঙ্গাদের পাশে আছে। ২০১৯ সাল নাগাদ জাপান ৯৯.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মানবিক সাহায্য দিয়েছে রোহিঙ্গাদেরকে এবং শান্তিপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সমাধানের ব্যাপারে আশা পোষণ করে। জাপানের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানান যে জাপান রোহিঙ্গা সমস্যা একটা স্থায়ী এবং টেকসই সমাধানের ব্যাপারে আগ্রহী। তিনি জানান দ্রুত প্রত্যাবাসনের মধ্যেই এই নিরাপত্তা ও সম্মানজনক সমস্যার সমাধান আছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মিয়ানমার সফরের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের এক ভাষ্যে রাখাইন প্রদেশের সমস্যা উল্লেখ করে নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং দক্ষতার সাথে এই সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন বলে জানায়।ভারতীয় বিমান বাহিনী বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গাদের জন্য ‘অপারেশন ইনসানিয়াতে’র মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহ করে।২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা সরাজ রোহিঙ্গা সমস্যা একটা স্থায়ী সমাধানের পক্ষে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাখাইন প্রদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহবান জানান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই অঞ্চলের স্বার্থে বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ এবং টেকসই পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারত মিয়ানমারের উপর চাপ দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

          বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক দায়িত্বের বোঝা লাঘবের জন্য ভারত সারা বিশ্বের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য আহবান জানায়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এস জয়শংকর জানান, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ভারত। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিবেশী হিসেবে নয়াদিল্লি মনে করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের মধ্যে সবার মঙ্গল নিহিত। আগস্ট ২০২০ সালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলার ঢাকা সফরে ভারত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ভারত নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

          ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট উইদো দো ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের বাংলাদেশের কক্সবাজারের ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তিনি রোহিঙ্গাদের উপর চলা সহিংসতায় নিন্দা প্রকাশ করেন। ইন্দোনেশিয়ার বিমান বাহিনীর চারটা পরিবহন বিমান রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসে। ২০১৭ সালে ঘটনার পরপরই ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করেন।মালদ্বীপ রোহিঙ্গাদের উপর চলমান সহিংসতায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে এবং নৃশংসতা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। মালদ্বীপ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের দ্রুত এবং দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা সম্ভব বলে মনে করে। মালদ্বীপ সরকার জাতিসংঘ মহাসচিব এবং ইউএন মানবাধিকার কাউন্সিলকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর চলমান সহিংসতার বিষয়ে তাদের উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছে।নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যুগ্মসচিব কেদার নাথ শর্মার বক্তব্য থেকে জানা যায় নেপাল মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের নেপালে থাকতে দিয়েছে, তারা আইন ভঙ্গ না করলে নেপালে থাকতে পারে।

          পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতার ব্যাপারে কষ্টের কথা জানিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এটা একটি মানবিক চ্যালেঞ্জ বলে বর্ণনা করেছেন। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখ পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়া ইসলামাবাদে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতিবাদ জানান। পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সেখানকার নাগরিকরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভিয়েতনামকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছে।ভিয়েতনাম রোহিঙ্গাদের জন্য ৫০,০০০ ডলার সাহায্য দিয়েছে এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (উব্লিউএফপি) এই সহায়তাকে স্বাগত জানিয়েছে।

          ২৫ আগস্ট ২০১৭ এর সহিংস ঘটনার পর সিঙ্গাপুর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সব পক্ষকে শান্তভাবে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অনুরোধ করে। অক্টোবর ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুর রাখাইন স্টেটে মানবিক সাহায্য কার্যক্রমের জন্য ১ লক্ষ সিঙ্গাপুর ডলার আসিয়ান হিউমেনিটারিয়ান এ্যাসিস্টেন্ট সেন্টার (এএইচএসি) এর মাধ্যমে অনুদান দেয়। রিপাবলিক অব কোরিয়া জাতিসংঘ সাহায্যকারী সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য ৩.৪ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারে মানবিক বিপর্যয় বিষয়ক একটা রেজুলিশান গ্রহণের বিষয়ে সমর্থন দেয়ায় এবং রোহিঙ্গাদের জন্য দ্রুত মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য কোরিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

          থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত অরুনরাং ফোথংহামফেরেস মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছে যে, থাইল্যান্ড রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সমর্থন করবে। লাওস এবং ইন্দোনেশিয়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে একত্রে কাজ করার জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। কম্বোডিয়া আসিয়ান এর কাঠামোর মধ্যে থেকে রোহিঙ্গাদের রাখাইন প্রদেশে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশকে সমর্থনের কথা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছে।মালয়েশিয়া বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় সম্মানজনকভাবে নিরাপদে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে দৃঢ়ভাবে তাদের সমর্থন চালিয়ে যাবে। মালয়েশিয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সাহায্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।আসিয়ান দেশগুলো রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশ আসিয়ানের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য দৃঢ় সমর্থন আশা করে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টা এবং মানসিকতার পরিবর্তন। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে স্থানীয় জনগণ এবং বৌদ্ধ সংগঠনগুলোর মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি বা বর্তমান মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানা যায়নি।বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশগুলো রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ামারের জনগণের চলমান নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তনে অবদান রাখতে পারে। মিয়ানমারের জনজীবনে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে বৌদ্ধ ধর্ম এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রভাব স্পষ্ট। শ্রীলংকার বৌদ্ধ সংঘগুলো এবং অন্যান্য বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার তথা রাখাইনবাসীর মনোভাব পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ শ্রীলংকা। শ্রীলংকা এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একটা সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক দেশ ও সংগঠন গুলোকেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। আঞ্চলিক দেশগুলো রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং অনেক দেশ অর্থ ও মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বাস্তবে এই সমস্যার অগ্রগতি অর্থাৎ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি এবং এই সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধানের পথ এখনো কোন আলোর মুখ দেখেনি।চীন, জাপান, ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের সাথে মিয়ানমারের বাণিজ্য সম্পর্ক এবং বিনিয়োগ রয়েছে। এই দেশগুলো মিয়ানমারের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এই দেশগুলোর ভূমিকা আরো জোরালো হলে সমস্যা সমাধান দ্রুত এবং টেকসই হবে।বাংলাদেশকে এই সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ত দেশগুলো যেমন চীন, ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, আসিয়ানকে একত্রে নিয়ে এই বিষয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।

দীর্ঘ মেয়াদী ভিত্তিতে এই সমস্যা সমাধানের জন্য এর মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আঞ্চলিক দেশ এবং জোটগুলো দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নিয়ে স্থানীয় রাখাইন ও বৌদ্ধ সংঘগুলোর মাধ্যমে রাখাইন প্রদেশ তথা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা নিতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি চলমান সহিংসতা বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারে। আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারের প্রতিবেশী চীন এবং ভারত মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদে চলমান সমস্যাগুলো সমাধান করে রোহিঙ্গা সমস্যার গভীরে গিয়ে স্থায়ী সমাধানের পথ সুগম করতে পারে।মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা সমস্যা স্থায়ী সমাধানের জন্য রাখাইন প্রদেশে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে নিরাপদে নিজ বাসভূমিতে ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করা। প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে রাখাইন প্রদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়ন প্রয়োজন এবং সেখানে চলমান সহিংসতা বন্ধের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। রাখাইন প্রদেশের জনগণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে ও তাদের মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য রোহিঙ্গাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেয়া প্রয়োজন। তবে এ ব্যাপারে মিয়ানমার এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এই কার্যক্রম গ্রহণে সংবিধানে সংশোধনী আনা জরুরি যা সময় সাপেক্ষ। এই কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, অর্থনৈতিক সহায়তা প্রয়োজন এবং পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহ এবং সংস্থাগুলোর ঐকান্তিক সহযোগিতা ও মিয়ানমারের সদিচ্ছাই এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশকে মিয়ানমারের সাথে জোরালো কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। দেশে, বিদেশে সব ধরনের মিডিয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার অগ্রগতি এবং গৃহীত পদক্ষেপগুলো জানিয়ে দেয়ার পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর সাথে আরো নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের একার পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান এবং মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা কখনোই সম্ভব না। এই সমস্যা সমাধানে দাতা সংস্থা, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহ এবং সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। বাস্তচ্যুত এই বিশাল জনগোষ্ঠী নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত এই ইস্যু বিশ্ব দরবারে জানান দিয়ে যেতে হবে। কোভিড মহামারীর এই দুঃসময়েও এই বাস্তবতাকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমাধানের উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে।

(ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মোঃ শামসুদ্দীনএনডিসি এফ ডব্লিউ সিপি এস সিডেপুটি কমান্ডাণ্টবাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানাগাজীপুর)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর