৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, রাত ৪:৪৪
নোটিশ :
Wellcome to our website...

রাগীবের স্বপ্নপূরণ

রিপোর্টার
শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
শুধু পড়ালেখায় নয়, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, খেলাধুলা, বিতর্কতেও আগ্রহ আছে রাগীবের।

এ বছর মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় সারা দেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন ৬৯ হাজার ৪০৫ জন। তাঁদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন রংপুর ক্যাডেট কলেজের রাগীব নূর। মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষাকে বলা হয় ‘ভর্তিযুদ্ধ’। যুদ্ধে জয়ী হতে গিয়ে রাগীব যে শুধু বইয়ে মুখ গুঁজে থেকেছেন, তা নয়। বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অভিজ্ঞতাও তাঁকে সহায়তা করেছে। 

‘পাঠ্যবইগুলো আমি বেশি বেশি পড়তাম। বইয়ের একটি পাতাও বাদ দিতাম না। প্রতিটি পাতা থেকে নিজেই নিজের জন্য প্রশ্ন তৈরি করতাম। আবার নিজেই নিজের খাতা দেখতাম। এভাবে প্রতিদিন চর্চা করেছি।’

কথাগুলো যিনি বলছিলেন, তাঁর নাম রাগীব নূর। বাড়ি রংপুর। এই তরুণ এ বছর মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। গত ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় সারা দেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন ৬৯ হাজার ৪০৫ জন। এত শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে প্রথম হওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। তাই রাগীবের সঙ্গে দেখা করতে ৫ নভেম্বর আমরা হাজির হই তাঁদের রংপুরের বাসায়। ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল রংপুর ক্যাডেট কলেজের এই কৃতী ছাত্রের। সেই স্বপ্নপূরণের পথে তাঁর যাত্রা তো কেবল শুরু। কিন্তু শুরুটা দুর্দান্তভাবে হলো বলেই বোধ হয়, সামনের দিনগুলোর জন্য অধীর অপেক্ষায় আছেন রাগীব।

চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছাটা কীভাবে মনে জায়গা করে নিল? রাগীব বললেন, ‘পরিবারে যখন দাদা-দাদি, নানা-নানি অসুস্থ হয়েছেন, তাঁদের কষ্টটা কাছ থেকে দেখেছি। তাই ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হয়ে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের
সেবা করব, তাঁদের পাশে থাকব। পাশাপাশি দেশ ও দশের সেবা করার চেষ্টা করব।’

বাবার চাকরিসূত্রে রাগীব নূর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে। এরপর মা তাঁকে নিয়ে রংপুরে চলে আসেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে রাগীব ভর্তি হন রংপুর জিলা স্কুলে। এক বছর কেটেছে সেখানে। এরপর সপ্তম শ্রেণিতে তাঁর ঠিকানা হয় রংপুর ক্যাডেট কলেজ।

ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় ভালো ছিলেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে মেধাতালিকায় বৃত্তি পেয়েছেন। ক্যাডেট কলেজের শৃঙ্খলা তাঁর মেধাকে শাণিত করেছে আরও। মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও মেধাতালিকায় বৃত্তি পেয়েছেন রাগীব। দিনাজপুর বোর্ডে তাঁর অবস্থান ছিল পঞ্চম। ১৩০০ নম্বরের মধ্যে এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ১২৪১। আর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ১৩০০ নম্বরের মধ্যে রাগীবের অর্জন ১২৩৫। স্কুল-কলেজে সব বিষয়ই গুরুত্বসহকারে পড়েছেন। তবে রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল একটু বেশি। ওই যে, চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল মনে!

স্কুল–কলেজে রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বইয়ের প্রতি রাগীবের আগ্রহ ছিল একটু বেশি। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে

স্কুল–কলেজে রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বইয়ের প্রতি রাগীবের আগ্রহ ছিল একটু বেশি। ছবি: স্বপ্ন নিয়েতাই বলে এক স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে রাগীব যে আর কোনো কিছুতেই অংশ নেননি, তা নয়। ভালো বিতার্কিক ছিলেন। ১৪তম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিল তাঁর দল। স্কুল পর্যায়ে জাতীয়ভাবে উপস্থিত বক্তৃতায় তৃতীয় ও রচনা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়ও হয়েছেন তিনি। কলেজে নিয়মিত বাস্কেটবল খেলতেন। গিটার তাঁর অবসরের বন্ধু। পড়ায় যখন ক্লান্তি আসে, রাগীব নূর অনুপ্রেরণা পান গানে।

রাগীবের বাবা এস এম মফিজুল ইসলাম একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে আছেন। থাকেন কুষ্টিয়ায়। রাগীবের মা আঞ্জুমান আরা চৌধুরী নীলফামারী মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা করেন। রাগীবরা দুই ভাই-বোন। রাগীব বড়। ছোট বোন মাঈশা ফাহমিন নবম শ্রেণিতে পড়ছে।

রাগীব নূর মনে করেন, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুধু পরীক্ষার আগের তিন মাসে নিলে চলবে না, প্রস্তুতি শুরু করতে হবে কলেজজীবনেই। বলছিলেন, ‘শুধু মেডিকেল নয়, যে বিষয়েই আপনি উচ্চশিক্ষা নিতে চান না কেন, আমার মনে হয় উচ্চমাধ্যমিক থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।’

তাই বলে কি স্কুল-কলেজের মধুর সময়ের পুরোটাই পড়ালেখার জন্য উৎসর্গ করতে হবে? ‘না তো!’ রাগীব বলেন, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলাটা খুব কাজে আসে। আমি কলেজে নিয়মিত বাস্কেটবল খেলেছি। খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে। অনেকে মনে করে খেলাধুলা করলে ক্লান্ত হয়ে যাব, পড়তে পারব না। আমার তো মনে হয় উল্টো। নিয়মিত খেলাধুলা করলেই বরং ক্লান্তি আসে না।’

রাগীব নূর মনে করেন, তাঁর ভালো ফলের পেছনে মা-বাবাসহ শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। মা আঞ্জুমান আরা চৌধুরী বলেন, ‘সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। সে যেন চিকিৎসক হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে।’

রাগীবের ৫ পরামর্শ

* ভবিষ্যতে যাঁরা মেডিকেলে পড়তে চান, তাঁদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ দিলেন রাগীব নূর।
* নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে। কোনো পড়া ফেলে রাখা যাবে না।
* পাঠ্যবইগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না।
* পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মতো বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। এতে মন সুস্থ থাকবে। পড়াশোনায় মনোযোগ থাকবে।
* পাঠ্যবইয়ের শেষে যেসব অনুশীলন আছে, সেগুলো বেশি করে চর্চা করতে হবে। বেশি বেশি পরীক্ষা দিতে হবে।
* নিয়মিত বিশ্রাম ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ থাকতে হবে। তা না হলে পড়াশোনায় একঘেয়েমি চলে আসে। এমনটা যেন না হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর