৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, রাত ৪:৪৪
নোটিশ :
Wellcome to our website...

রবীন্দ্রনাথ ও পদ্মা নদী

রিপোর্টার
শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন

সুইটি রাণী বনিক

রবীন্দ্রনাথ ও পদ্মানদী দুজনার ভালবাসা ও জীবন পরিণতি যেন ধ্বংস যজ্ঞে, সুখ ও ছন্দে বয়ে যাওয়া কেবলি চলমান স্রোতের গতি। এই পথ ও চলা যেন যুগ যুগান্তর ধরে চলছে চলবে। রবীন্দ্রনাথের জীবনে সবচেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তার করেছিল পদ্মানদী। পদ্মার আদর্শ অখণ্ড ও অচ্ছেদ্য রূপে বলাকায় আকাশগঙ্গায় পরিণত হয়। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর কাব্যকে বুঝতে হলে এই পদ্মানদীকে বোঝা আবশ্যক। শুধু পদ্মাকে নয়, ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্ত শায়ী এই দেশের যে বৈশিষ্ট্য বাংলার প্রাণ প্রতীক এই নদী প্রকাশ করে তা না বুঝলে চলবে না। কারণ রবীন্দ্রপ্রতিভা ভারতীয় ও বঙ্গীয় বৈশিষ্ট্যের দ্বন্দ্বে উপজাত। পদ্মা, বিশেষ করে বাংলার নদী। গঙ্গার সাথে তার নাড়ির যোগ আছে কিন্তু পথের যোগ নাই। সমস্ত ভারতবর্ষের ধারাকে হঠাৎ অস্বীকার করে খামখেয়ালি কল্পনার মত স্বৈরগতিতে অজানার পথে ছুটে চলেছে এই পদ্মা নদী। পদ্মার তীরে ঘটনাক্রমে রবীন্দ্রনাথকে কিছুকাল বাস করতে হয়েছিল। কবি পদ্মার গতিতে তাঁর আপন অন্তর্নিহিত কবিধর্মকেই যেন দেখতে পেলেন।

রবীন্দ্র কাব্যের স্বভাব চলমানতা বা গতি, এই গতি যেন পদ্মার স্রোতে প্রবাহিত। অন্তরের আদর্শের সাথে বাইরের দৃশ্য সায় দিয়ে উঠে। রবীন্দ্রনাথ আপন কবি ধর্মে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেন। সোনার তরীতে তাঁর কবিতার পরিণতি, সেই সময়টাতে তাঁর পদ্মাবাস। পদ্মাতীরে বসে যে কবি শুধু তাঁর আপন ধর্মকে বুঝতে পেরেছিলেন শুধু তাই নয়, পদ্মার কলধ্বনিতে বাংলার যে ইতিহাস উচ্চারিত হচ্ছে তাও তিনি শুনতে পেলেন। যার ফলে কবিজীবন দেশের জীবনে স্পর্শ করল। হৃদয় অরণ্য থেকে কবি যথার্থ নিষ্ক্রমণ এ সময়টাতে। আমাদের জানার খুব আগ্রহ থেকে যায় কবি কিভাবে এই পদ্মাকে গ্রহণ করলেন, এত নিবিড়ভাবে আপন করে নিলেন। কবি ভোর থেকে আরম্ভ করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পদ্মার গতির আকর্ষণে তাঁর লেখায় নিমজ্জিত থাকতেন। নদীর গতির আকর্ষণে থেকে তাঁর চোখ কিছুতেই ফেরাতে পারত না। জলের দিকে চেয়ে তাঁর ভাবনা আসে, যদি বস্তু থেকে গতিকে  আলাদা করে গতিকে উপভোগ করার ইচ্ছা হয় তবে নদীর স্রোতের মাঝে তা পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, মানুষের চলা, খানিকটা চলা, খানিকটা না চলা, কিন্তু নদীর আগাগোড়াই চলছে, সেজন্য নদীর সাথে মানুষের চেতনার সঙ্গে তাঁর একটা সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এজন্য এই ভাদ্রমাসে পদ্মাটাকে একটা প্রবল মানসিক শক্তির মত বোধ হয়, সে মনের ইচ্ছামত ভাঙছে চূড়ছে এবং চলছে মনের ইচ্ছা মত সে আপনাকে বিচিত্র তরঙ্গভঙ্গ এবং অস্ফুট কলসঙ্গীতে নানা প্রকারে প্রকাশ করার চেষ্টা করছে। বেগবান একাগ্রগামিনী নদী আমাদের ইচ্ছামত, আর বিচিত্রশস্য শালিনী স্থির ভূমি আমাদের ইচ্ছামত সামগ্রীর মত। তিনি গভীর ভালবাসা থেকে বলেন, “আমি জীবনে কতবার যে এই নদীর বাণী থেকেই বাণী পেয়েছি মনে হয় সে যেন আমি আমার আগামী জন্মেও ভুলবনা।”

পদ্মা যেন তত্ত্ব হিসেবে রবীন্দ্রনাথের নিকট সত্য। কিন্তু পদ্মা যে কবির নিকট কত প্রিয় কোন তত্ত্ব হিসেবে নয়, প্রায় ব্যক্তির মত তা আমরা জানি। পদ্মার এই ব্যক্তিত্বকে কবি ছাড়া আর কিউ উপলব্ধি করেছেন কিনা জানি না। পদ্মাস্রোতের এই গতি কবিজীবনকে যে শুধু গড়ে তুলেছে, কেবল তা নয়, অন্যের জীবন সম্বন্ধেও কবির ধারণা গড়ে তুলেছে।

বোটে করে অবিরাম ভেসে চলেছেন তিনি, তাতে তাঁর মনযোগ আছে, কিন্তু কোথাও সেই মনযোগের সন্নিবেশ নাই, এ যেন ছবি দেখা। এভাবে দেখা অর্টিস্টের দেখা, কর্মীর দেখা নয়। এই বোটটির নামও ছিল ‘পদ্মা’।

( সুইটি রাণী বনিক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক, এম এ বাংলা)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর