১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, সকাল ৮:২৯
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

মামা কালচার

রিপোর্টার
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন

মোঃ আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব

ইদানিং একটি বিষয় প্রত্যক্ষ করি যে বাস, রিক্সাওয়ালা, টি-স্টল, হোটেল, স্টেশনারী দোকান, ইত্যাদির মালিক বা সেলস্ম্যানকে স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মালপত্র ক্রয়ের প্রাক্কালে মামা বলে সম্বোধন করে থাকে। তখন আমি ভাবি মামা তো বাপের শালা। আবার ওদিকে মায়ের ভাই। আরও চিন্তা করি যে, অনেকভাবেই তো এ্যাড্রেস করা যেতো। কিন্তু সেভাবে না করে, কেন অহরহ মামা বলে সম্বোধন করা হচ্ছে। আর এই মামা নামের মধ্যে এমন কি মধুর নিয়ামক বিদ্যমান যে, এর উপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এবং আগেই দেয়া হতো। তাছাড়া আগামীতে একই ভাবে চলবে বলে প্রতীয়মান হয়। ভাবতে ভাবতে ছোটবেলায় একটি কবিতার কথা মনে পড়ে যায়, যা হলো ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা, মামা বাড়ী যাই…; কিম্বা মা জননী কর্তৃক ছোট শিশুকে আদর করার আতিসয্যে বলতে শুনেছি “আয় আয় চাঁদ মামা, খোকার কপালে টিপ দিয়ে যা…” কিম্বা রবি মামা দেয় হামা….” ইত্যাদি। এদিকে আমাদের দেশের সকল বিদ্যাপীঠের বড় ছুটিতে মামা বাড়ী যাওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার ও রেওয়াজ। এদিকে মামা শব্দকে ঘিরে গানও কম রচিত হয়নি? যেমন- বাঘ শিকার যামু, বন্ধুক লয়ে রেডি হলাম আমি আর মামু…..”। একই ভাবে চলমান প্রবাদ হিসেবে মামাকে নিয়ে গ্রাম বাংলায় একটি কথা প্রচলিত আছে। যেমন- “মামা ভাগ্নে যেখানে, আপদ নাই সেখানে”। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, চাচা বা আংকেল বা ভাই বা দাদা বলে সম্বোধন করা হলেও মামা শব্দের মতো এত গ্রহণযোগ্যতা ওসব ক্ষেত্রে মেলেনি। মূলতঃ যে সম্বোধনের আওতায় শব্দ বা শব্দগুচ্ছ হৃদয় স্পর্শ করে এবং একে অন্যের কাছে টেনে নেয়, সেটাই ব্যবহার করলে আরোধ্য কাজটি সহজতর হয়ে থাকে। তাছাড়া একে অন্যের ক্ষতিরও আশংকায় থাকে না। তাই বোধ হয় “মামা” এর উপর এতো জোর দেয়া হচ্ছে। আবার মামা নামটি যেমন সাহিত্য বা গানে স্থান করে নিয়েছে, অন্যগুলো তেমনটি নয়।

এদিকে ‘মামা’ এর ইংরেজি শব্দ হলো Maternal Uncle আর কেউ যদি আংকেল (Uncle) বলে সম্বোধন করে, সেক্ষেত্রে মামা কথাটি হিসাবে এনেই বলে থাকে বলে মনে হয়। বাস্তবে অনেকের চেয়ে মামারাই ভাগ্নে ভাগ্নিদের অধিক আদর করে থাকেন। আর প্রায় আবদারের ক্ষেত্রে মামারই তুলনামূলক অধিক চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। চাচাদের ভূমিকা এ ব্যাপারে তেমনটি নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ছোট মামা ও ভাগ্নে সমবয়সী হলে তো কথাই নেই। তখন দু’জন গলায় গলায় ভাব ও বন্ধু বনে যায়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, জিনেটিক কারণেই হোক, কিম্বা প্রতিবেশ ও পরিবেশগত কারণেই হোক, মামারা ভাগ্নেদের অধিক আদর যতœ করে থাকেন। আর তাঁদের আন্তরিকতার এতটুকু কমতি থাকে না। এ প্রেক্ষাপটে আমার বাস্তব জীবনের একটি ঘটনা তুলে ধরার প্রয়াসী হয়েছি। ঘটনাটি পঞ্চাশ দশকের। তখন আমি খুব ছোট। ইফ্লুয়েঞ্জা জ¦র হলে আমি খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে রুচি হারিয়ে ফেলি এবং না খেয়ে খেয়ে কৃশকায় হয়ে পড়ি। তখন আমার ছোট মামা সিদ্দিক মিয়া গোয়ালন্দে বেলওয়েতে বুকিং ক্লার্কের কাজ করতেন। তিনি আমাকে খুব আদর করতেন। আমার এহেন অবস্থার কথা শুনে খুব দুঃখ করেন এবং লোক দিয়ে সেখান থেকে আনারস সহ ফলফলাদি পাঠিয়ে দেন। আর সেই আনারস যে কি সুস্বাদু লেগেছিল, যা এখনও মনে হলে জিহŸায় পানি আসে এবং সাথে ছোট মামা সিদ্দিক মিয়ার অবয়বও চিত্রপটে ভেসে উঠে। অথচ আমার চাচাও তো রাজবাড়ীতে চাকুরী করতেন। অথচ আমার অসুখের কথা জেনে শুনেও তিনি নিশ্চুপ ছিলেন। যাহোক, মামা নামটি এমনই জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য যে, অনেক খাদ্য সামগ্রির সাথে ‘মামা’ নামটি যোগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রোজার সময় ‘মামা হালিম’ এর নাম কে না জানে? তাছাড়া ধর্মীয় পর্বসহ মেলায় কেনা-কাটার ব্যাপারে মামা কর্তৃক প্রদত্ত মোটা দাগের গিফ্্ট বা সালামীর বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, যা হলো মামা কর্তৃক কোন কিছু দেয়ার ব্যাপারে সঙ্গতকারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামীর অগোচরেই বা লুকিয়ে করা হয়ে থাকে।

এতক্ষণ মামাকে নিয়ে সুখকর ও ইতিবাচক কথা বললেও নেতিবাচক কথাও অনেক সময় মর্ম পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, কারও কাছে দেয়া-নেয়ার ব্যাপারে এতটুকু ব্যতিক্রম হলে প্রায়ই যে কথাটি শোনা যায়, তাহলো ‘মামা বাড়ীর আবদার পেয়েছো”? কিম্বা চাকুরীর ক্ষেত্রে কারও শরনাপন্ন হলেও যে কথাটি হৃদয়ে আঘাত করে সেটা হলো “যত ভাল রেজাল্টই করোনা কেন, মামার জোর না থাকলে কোনক্রমেই চাকুরী হবে না”। তাছাড়া মায়ের ভাই মামা অনেক সময় বোনের বাড়ীর উপর আধিপস্ত বিস্তার করেন। আর মামা যদি এক কেন্দ্রিক ও লোভী হন। তখন তিনি ভিলেনের পর্যায়ভুক্ত হয়ে পড়েন। অনেক সময় এ সূত্র ধরে কতিপয় সংসারে ভুল বুঝাবুঝিসহ ঝগড়া ঝাটির সৃষ্টি হয়েছে, সে নজিরও নিজে দেখেছি। আর এর সপক্ষে অনেক সিনেমা ও নাটক হয়েছে, তা হয়তো আপনারা প্রেক্ষাগৃহ বা টিভিতে দেখতে পারেন।

যদি ‘মামা’ নিয়ে বিশ্লেষণ করি এবং কিছুটা যদি গভীরে যাই। তাহলে প্রতিভাত হয় যে বোনেরা ভাইকে তুলনামূলক অধিক শ্রদ্ধা বা আদর করে থাকে। সেই সুবাদে বোনের ছেলে মেয়ে তথা ভাগ্নে-ভাগ্নিরা তাঁর একান্ত কাছে চলে যায়। আর এটাকে ভিত্তি করে তাদের মধ্যে বিনে সুতার মালার মতো একটি মিষ্টি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এখানে কোন রাগ বা শাসন থাকে না বিধায় মামাদের সাথে ভাগ্নে-ভাগ্নিদের সম্পর্ক নিবিড় থেকে নিবিড়তা লাভ করে। অনেক সময় ভাগ্নে-ভাগ্নিরা কোন অন্যায় করলে তার থেকে প্রতীকার পেতে মামার সাহায্য নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ভাগ্নে-ভাগ্নিদের পক্ষ নিয়ে দুলা ভাই এবং বোনের কাছে ওকালতী করে তাদের নিস্কৃতি পাওয়ার পথ সুগম করে থাকেন। আরেকটি কথা, প্রত্যেকটির নামে একটি তাছির বা মর্মকথা আছে, যা নামের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মূলত মামা হলো বাপের শালা। এক্ষেত্রে কথাটি সমাজে ভাল চোখে দেখে না। কিন্তু মায়ের ভাইয়ের সারথী ধরে মামা কথাটি মাধুর্যপূর্ণ ও হৃদয় স্পর্শ করে থাকে। তাই বোধ হয়, কবি সাহিত্যকরা এটাকে ঘিরে কাগজ কলম হাতে তুলে নিতে এতটুকু কাপর্ণ্য করেননি, যা পূর্বেই কিছুটা আলোকপাত করেছি।

পরিশেষে এই বলে ইতি টানছি যে, উপর্যুক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে ‘মামা’ নামটি কেন সকল জনপদে কালচার হিসেবে এত ব্যবহার হয়ে থাকে, তা হয়তো মোটামুটি প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। Thus, we can mention that the very word ”Mama” is one of the phenomena in communication culture in our society of day to day life.

সূত্র:
১। লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতা।
২। বই-পত্র ইত্যাদি।

বিশিষ্ট গবেষক, অথর্নীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত।
Email: abdulbaki85@yahoo.com/www.goonijon.com , 01813333335 * 01670451475 * 02-48119024


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর