২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, দুপুর ২:১৪
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জননী’

রিপোর্টার
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:১৪ অপরাহ্ন

রেজওয়ান আহমেদ

চরিত্রকেন্দ্রিক সাহিত্যে নির্দিষ্ট পরিমণ্ডলে সংশ্লিষ্ট চরিত্রের গুরুত্ব বিস্তারিত সূক্ষ্মতায় ধরা পড়ে। একজন সাহিত্যিক তার সৃষ্ট সব চরিত্র মমতার বুননে গাঁথলেও পাঠকের কাছে সমানভাবে ধরা পড়ে না তা। সেজন্য কিছু কিছু চরিত্র কাহিনির প্রয়োজনে সৃষ্ট বলেই প্রতীয়মান হয়।

‘জননী’ উপন্যাসের নামচরিত্র শ্যামা নামের আবরণে সমগ্র উপন্যাসে একটা সর্বগ্রাসী প্রভাব বিস্তার করেছে। তবে সহযোগী অন্য চরিত্রগুলোর মধ্যেও যথেষ্ট শক্তির সঞ্চার পরিলক্ষিত। দ্বিতীয় প্রজন্মের কোনো এক ফাল্গুনের ক্লান্ত দুপুরে উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয়ে চতুর্থ প্রজন্মের নিঝুম চৈতিরাতের তারাদের হাতে নিঃশেষ হয়েছে। ফ্ল্যাশব্যাকসহ দেখানো হয়েছে মামার চরিত্রটিকে (প্রথম প্রজন্মের প্রতিরূপ)। সে বিচারে শ্যামার মামার চরিত্রটি যথেষ্ট বিকশিত হলেও গুরুত্বের প্রশ্নে হারিয়ে যায় শ্যামার ছায়ায়। এছাড়া শীতল এবং মন্দাকিনী চরিত্র দুটিও কাহিনির প্রয়োজনে মাঝে মাঝে দেখা দিয়ে হারিয়ে গেছে। মোটাদাগে জ্যেষ্ঠপুত্র বিধানকে সাথে নিয়ে শ্যামা বিভিন্ন সময়ে বাকি চার সন্তানের পরিবারের অস্তিত্বের যে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে, ‘জননী’ তারই কাহিনি।

উপন্যাসের কাহিনির বিন্যাসে অনেকগুলো ভাগ। স্পষ্টত চোখে পড়ে তিনটি ভাগ। বিধান, বকুল, মণি, ফণির জন্মের পর ধীরে ধীরে কর্মমুখী হয় শীতল। উপরিসহ যা আয় করে, তার একটা বড় অংশই জমায় শ্যামা। সংসারে ফিরে আসে শান্তি। সেই সাথে হঠাৎ ফেরেন বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ভবঘুরে মামা‌। শ্যামার বোধকরি আর কিছুই চাওয়ার ছিল না জীবনে। প্রাচুর্য না থাকলেও টানাটানি পড়ে যায়নি তখন তার সংসারে। বিপদ বলে-কয়ে আসে না – ঘটনাক্রমে শীতল চুরির মামলায় জেলে চলে যায়। শীতলের জেলে যাওয়া উপন্যাসের অনেকগুলো চরিত্রের বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ফলে ঘরের অভিমানী মেয়েটি শ্যামার মতোই সংসারী হওয়ার আগে একটা প্রেমও করে চুপিচুপি। গম্ভীর, ভাবুক, উদাস বিধানের প্রতিবিধান হয় পড়ার পাট চুকিয়ে চাকরিতে যোগদান – মায়ের জন্য। অনেক ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতে, অভাবের তাড়নায় শ্যামাকে নিজের বাড়ি বিক্রি করতে হয়। ততদিনে কলকাতার শহরতলি ছেড়ে বনগাঁয়ের শ্যামল মায়ায় আচ্ছন্ন আশ্রিত পরিবার শ্যামার। রাত যত গভীর হয়, প্রভাত নাকি তত নিকটে আসে। শ্যামার জীবনের রাত পোহাবে আদৌ? কোন প্রভাতের সূর্যোদয় তার অপেক্ষায়? – এসব জানতে হলে পড়তে হবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘জননী’।

শ্যামার চরিত্রটিকে সংসারজীবনে সচেতন করতে গিয়ে অতিমাত্রায় প্রাচীন মননে আবৃত করে ফেলেছেন ঔপন্যাসিক- তর্কসাপেক্ষ ব্যাপার হতে পারে। উপন্যাসের পূর্ণাঙ্গ পাঠে আধুনিক মননে শ্যামার মৌন সম্মতি আছে বলেই মনে হয়। সেসব যা-ই হোক, শ্যামা শীতলের প্রেমে বঞ্চিত ছিল – এটা সত্য। হয়তো এ সত্যই তাকে আধুনিকতার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত রেখে একাগ্রচিত্ত সংসারী হতে বাধ্য করেছে।

শ্যামা ছাড়াও আরো কিছু জননী চরিত্র উপন্যাসে দেখানো হয়েছে। তবে ব্যাপকতা বিচারে শ্যামার কাছে সবাই ম্লান। এতে একটা ইঙ্গিত মেলে – সব নারী জননী ‘হতে’ পারলেও জননী ‘হয়ে উঠতে’ পারা সংসারে সহজ কথা নয়।

উপন্যাস থেকে –

১. তরকারি সে আজো কোটে। সুখে-দুঃখে জীবনটা অমনি হইয়া গিয়াছে, সিদ্ধ করিবার চাল ও কুটিবার তরকারি থাকার মতো চলনসই।

২. জীবন-মরণের ভার যে ডাক্তার পান চিবাইতে চিবাইতে লইতে পারে সে-ই তো ডাক্তার…।

৩. আজকাল হাজার মদ গিলিয়াও নেশা পর্যন্ত যেন জমিতে চায় না, কেবল কান্না আসে। কত কি দুঃখ উথলিয়া ওঠে।

৪. মন পাকিবার পর কোনো নারীর হয় না নূতন বন্ধু, নূতন প্রেমিক।

৫. এক হাতে ছোট ছেলেটাকে বুকের কাছে ধরিয়া রাখে, সে ঝুলিতে ঝুলিতে প্রাণপণে স্তন চোষে,… চোখের দিকে তাকাও, বাৎসল্য নাই, স্নেহ-মমতা নাই, শ্রান্তি নাই – কিছুই নাই! শ্যামা সত্যই যন্ত্র নাকি?

৬. যথাসময়ে শঙ্কর চলিয়া গেল সেই শীতল পাহাড়ি দেশে, এখানে বিধানের দেহ গরমে ঘামাচিতে ভরিয়া গেল।

৭. মন্দা ভুলিয়া গিয়াছে সে বধূ। এই মূল্য দিয়া সে হইয়াছে গৃহিণী!

৮. হায়, ও-বাড়ির প্রত্যেকটি ইটের জন্য শ্যামার যে অপত্যস্নেহ!

৯. টাকা থাকিলে খরচ কেন বাড়িয়া যায় কে জানে।

১০. ছেলেবেলা বকুল আর বনগাঁয় মন্দার সেই কুকুরটা ছাড়া এ জগতে সকলে ফাঁকি দিয়াছে শীতলকে।

ভাষা বিশ্লেষণ –

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহজাত ভাষাই এ উপন্যাসে পরিলক্ষিত। সহনীয় মাত্রায় সাধু-চলিতের মিশ্রণ রয়েছে। সীমিত কিছু ক্ষেত্রে নারীদের ভাষার (গালিশব্দ – ধেড়ে মাগী, তালগাছ প্রভৃতি) প্রয়োগ লক্ষণীয়। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রাঢ়ী উপভাষাও পাওয়া যায়। কিছু সংখ্যক অর্ধতৎসম শব্দ (যেমন – চিকিচ্ছে) রয়েছে। এর বাইরে চর্যাপদের সান্ধ্যভাষার কাছাকাছি অর্থসূচক সরল বাঙলা প্রকাশও মেলে শ্যামার আশঙ্কায় – কে জানে ওর ওই ভয়ানক সুন্দর দেহের আকর্ষণে কোথা দিয়া অমঙ্গল ঢুকিবে সংসারে। (আপণা মাংসে হরিণা বৈরী।)

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখায় মার্ক্সবাদ ধারণ করে সফল হয়েছেন। ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘অহিংসা’, ‘চতুষ্কোণ’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস।

(রেজওয়ান আহমেদ, শিক্ষার্থী, তৃতীয় সেমিস্টার, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর