নিজস্ব প্রতিনিধি
গত ১৮ জুন(২০২০) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশ অনুসারে ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে কবি নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক (মানিক) ৩০শে জুন এলপিআর-এ গেছেন। তবে মোহাম্মদ জাকির হোসেন যোগদান না করায় পদটি এখনো কার্য়ত শূন্য।
উল্লেখ্য, অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেন নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ পাওয়ায় দেশের প্রগতিশীল নজরুল চর্চাকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।কারণ উক্ত আমলার নজরুলচর্চার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশে নজরুলচর্চার ধারার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দেশের একাধিক বুদ্ধিজীবী বলেছেন, মোহাম্মদ জাকির হোসেন আল নূর ফাউন্ডেশন, তমুদ্দুন মজলিশ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে নজরুল নিয়ে বিতর্কিত অনেক বক্তৃতা দিয়েছেন যার ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যায়। প্রায় ৪০টির মতো বিতর্কিত বক্তৃতা ইন্টারনেটে আপলোড করা আছে। কিন্তু এগুলোর কোনোটিতে নজরুলের (ক.) সংগ্রাম, (খ.) প্রেম (গ.) সম্প্রীতি (ঘ.) দেশপ্রেম (ঙ.) বিদ্রোহভাব প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা নেই। অথচ, এগুলোই জাতীয় কবির মূল বৈশিষ্ট্য। তিনি নজরুলকে শুধু ধর্মীয়ভাবে তুলে ধরেছেন, যে প্রবণতাটি পাকিস্তান আমলে দেখা গিয়েছিল। পাকিস্তান আমলে নজরুলের সবগুণ বাদ দিয়ে শুধু ইসলামী চেতনা চর্চিত হতো। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ সূত্রে দেখা যায়, নজরুলের উদ্দীপনামূলক লেখা, যেমন, নারী, সাম্য, কুলিমজুর ইত্যাদি কবিতা তিনি নিজে আবৃত্তি করেছেন এবং সেগুলোকে পশ্চিম পাকিস্তানের মাটিতেও উচ্চারণ করে এসেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব জাকির হোসেনের কোনো আলোচনাতে নজরুলের ওই উদ্দীপনামূলক লেখাগুলোর কথা নেই। নজরুলকে তিনি মৌলবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছেন। জাতির পিতা নজরুলকে বাংলাদেশে না আনলে বাঙালি এই মনীষীর দেহকে বাংলাদেশের মাটিতে ধারণ করতে পারতো না। এ কথা তাঁর আলোচনায় কখনো আসেনি। অবাক হওয়ার মতো গালগল্প দিয়ে ভরা জাকির হোসেনের নজরুলচর্চা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি আল নূর ফাউন্ডেশনের আলোচনাতে বলেছেন, নজরুল ত্রিশালে থাকার সময় সাত পৃষ্ঠাব্যাপী ইংরেজি রচনা লিখেছিলেন। জনৈক নজরুল বিশেষজ্ঞ এ সম্পর্কে বলেছেন, তিনি এই তথ্য কোথায় পেলেন? অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম কিংবা অন্য কারো লিখিত জীবনীতে এই তথ্য নেই। সত্যি, যদি সেই সাত পৃষ্ঠা নজরুল লিখে থাকেন, সেই অমূল্য রচনাটি কোথায়? রচনাবলিতে তা যুক্ত করা দরকার। কবি নাকি পরীক্ষায় গ্রেস নম্বর না পেয়ে রাগ করে ত্রিশাল ত্যাগ করেছিলেন। আসলে, এই তথ্যগুলো গালগল্প। ধর্ম আর সঙ্গে গালগল্প এই হলো জাকির হোসেনের নজরুলচর্চার মূল, যা পাকিস্তান আমলে সবসময় দেখা যেতো।
মূলত স্বাধীন বাংলাদেশে যেখানে নজরুলচর্চা হওয়ার কথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ধারায়, বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতির আলোকে, সেখানে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেনের মতো ব্যক্তিরা আজ নজরুলচর্চা করছেন পাকিস্তানী ধারায়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা সুদূর পরাহত হবে।
ভুল ব্যাখ্যা ও বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে কবি নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেনের নিয়োগ বাতিলের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নজরুল গবেষকগণ।