২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, রাত ৯:৩৪
নোটিশ :
Wellcome to our website...

বাসে অর্ধেক যাত্রীতে আগেও ভোগান্তি ছিল চরমে

রিপোর্টার
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধে রাজধানীতে চলাচলে যে অসহনীয় দুর্ভোগা ও ভোগান্তি হয়েছিল, সেটি আবার শনিবার থেকে ফিরে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সে সময় অফিস আদালত খোলা রেখে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন করার নির্দেশ দেয়ার পর অফিসগামী যাত্রীদের একটি বড় অংশ বাসে চড়তে পারেনি। পরে বিক্ষোভও করে তারা।

বাসের বদলে হেঁটে, অটোরিকশা, মোটর সাইকেলে, ভ্যানে, পিকআপ বা প্রাইভেট কার ভাড়া করে কর্মস্থলে যেতে হয়।

১ এপ্রিল থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল এই চিত্র। পরে ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হলে যাত্রার এই ভোগান্তির উপসম হয়।

দুর্ভোগের সেই চিত্র থেকে সরকারি কর্মকর্তারা দৃশ্যত কোনো শিক্ষা নেননি। ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় আবার যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, তাতেও গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে অফিস-আদালত চলবে স্বাভাবিক নিয়মে সম্পূর্ণ জনশক্তি নিয়েই। বরং বিপণিকেন্দ্রগুলো আগেভাগে বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ এসেছে যে কারণে বাড়ি ফেরার চাপ তৈরি হবে, যে সময় অফিসগামীরা সবাই ঘরে ফিরতে পারবেন না।

করোনা বিধিনিষেধ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলেও গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের বিষয়টি দুই দিন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। শনিবার ভোর থেকে এই নির্দেশনাটি কার্যকর হবে। তবে এবার মন্দের ভালো এই যে, যাত্রীদেরকে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে না।

এর আগে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশ এসেছে তিন দফা, তিন বারই নির্ধারিত ভাড়ার ৬০ শতাংশ বেশি আদায় করতে বলা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, কিছুদিন যাত্রী অর্ধেক তুললেও পরে প্রতি আসনেই এমনকি দাঁড়িয়েও যাত্রী বহন করা হয়েছে, কিন্তু ভাড়া আদায় করা হয়েছে বেশি।

সব কিছু খোলা রেখে পরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনায় রীতিমতো শঙ্কিত নাজমুল হোসেন নামে এক নগরবাসী। তার বাসা মোহাম্মদপুরে, অফিস মতিঝিলে।

তিনি বলেন, ‘অফিস শুরু ও শেষ হওয়ার সময় সাধারণ পরিস্থিতেই বাসে উঠার মতো পরিস্থিতি থাকে না। এখন যদি অফিস আদালত খোলা রেখে বাসে অর্ধেক যাত্রী বহন করা হয়, তাহলে অসংখ্য মানুষ বাসে উঠতে পারবে না। বিকল্প উপায়ে অফিস বা বাসায় যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আগেরবারও এমনটি হয়েছে। বাস পাওয়া যায় না, সিএনজি, প্রাইভেটকারে বাড়তি ভাড়া গুণতে হয়। রিকসাতেও উঠার পরিস্থিতি থাকে না। তারা সুযোগ ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলে।’

মোহাম্মদপুর থেকে তাও কিছু বাসের শুরুর কাউন্টার আছে। যারা মাঝের এলাকায়, যেমন ধানমন্ডি থেকে বা খিলক্ষেত থেকে বা বাংলামোটর থেকে কোনো গন্তব্যে যেতে চান, তাদের বাসে উঠা আরও অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

গত ১ এপ্রিল বিধিনিষেধের প্রথম দিন যাত্রীরা যে বিক্ষোভ করেছিলেন, তা হয়েছিল বিভিন্ন গন্তব্যের মাঝের এই স্টপেজগুলোতেই।

লাব্বাইক পরিবহন চলে সাভার থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত। নিউ ইস্কাটনের বিয়াম গলিতে তাদের একটি স্টপেজ আছে। দিনভর সেই বাসে দেখা যায় দাঁড়িয়ে যাত্রী চলছে। কখনও কখনও সেই স্টপেজ থেকে যাত্রীকে উঠতে হয় নানা কসরত করে। এই অবস্থায় যদি ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করলে শত শত যাত্রীর বাসে উঠাই হবে না।

যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সবকিছু খোলা রেখে গণপরিবহনে অর্ধেক সংখ্যক আসন খালি রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়। যে স্বাস্থ্যবিধির মানার জন্য এমন সিদ্ধান্ত, বাস্তবে দেখা যাবে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে সেই স্বাস্থ্যবিধিই উধাও হয়ে যাবে।’

পুলিশ বাসে যাত্রীর বিষয়ে কঠোর থাকবে বলে জানিয়ে রাখলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. রেফাতুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছে, তা আমরা পালন করব। নির্দেশনা অমান্য করে যারা চলাচল করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বুধবার দুপুরে বিধিনিষেধে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যে সভা হয়েছে, সেখানেও এই ভোগান্তির আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে।

সভায় বিআরটিএ, পরিবহন মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশন, পুলিশসহ সবাই একমত হয়েছে যে, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চললে সংকট দেখা দেবে। সংকট কাটাতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের আদেশটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধও করা হয় বাস মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে চালক ও শ্রমিকদের টিকা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়।

মালিক ও শ্রমিকদের এই দুই দাবি সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে জানানো হবে জানিয়েছেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।

তিনি বলেন, ‘সরকার বিধিনিষেধের যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য আজকের সভা ডাকা হয়েছিল। সভায় মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশন, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), পুলিশ সবাই মতামত দিয়েছে।

‘সবাই একমত হয়েছে যে, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চললে সংকট দেখা দেবে। সে জন্য মালিক সমিতি ও অন্যদের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছে, যত সিট তত যাত্রী পরিবহনের সুযোগ যেন দেয়া হয়।’

সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে তিনি বলেন, ‘বিমানে যেভাবে সব সিটে যাত্রী নেয়, সেভাবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে যাত্রী বহন করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গাড়ি চললে সংকট হবে। আর হঠাৎ করে বাসের সংখ্যা বাড়ানোও সম্ভব না। সরকার যে সিদ্ধান্তই নেবে তা ভাড়া বৃদ্ধি না করে আমরা গাড়ি চালাব।’

গত সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি হয়। এই আদেশ কার্যকর হবে আগামী ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে। তবে পরে জানানো হয়, বাস, ট্রেনে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে ১৫ জানুয়ারি থেকে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর