২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, সকাল ১১:২৫
নোটিশ :
Wellcome to our website...

বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া সময়ের দাবি

রিপোর্টার
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

আহমেদ রিয়াজ

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপন করলাম আমরা। পরাজিত পাকিস্তান পালন করল ঢাকাপতনের ৫০ বছর। বাংলাদেশে বিজয় উৎসবের বিপরীতে পাকিস্তানে ঢাকাপতন দিবসটা পালন হয় কেবলই কাগজ-কলমে ও শোকের মধ্য দিয়ে। পরাজিতদের আবার উৎসব কীসের? তবে একটা কাজ করছে পাকিস্তান। উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে শাক দিয়ে ইতিহাসের শোলমাছ ঢাকার হাস্যকর চেষ্টা করে যাচ্ছে পঞ্চাশ বছর ধরে।

বিজয়ের পঞ্চাশ বছর নিয়ে বিবিসি বাংলা একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে। বাংলাদেশ সম্পর্কে পাকিস্তানের মনোভাব জানাতে পাকিস্তানের চারজন বিশিষ্ট নাগরিকের মন্তব্য দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রতিবেদনটি। এ চার পাকিস্তানি হচ্ছেন করাচির ইন্সটিটিউট অব হিসটোরিক্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ-এর পরিচালক ড. সৈয়দ জাফর আহমেদ, পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও পাকিস্তানি সেনা গোয়েন্দা সংস্থার (আইএসআই) সাবেক প্রধান লে. জে (অবসরপ্রাপ্ত) আসাদ দুররানী, পাকিস্তানের সিনিয়র সাংবাদিক নাসিম জেহরা এবং পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সিনেটর ও লেখক জাভেদ জব্বার।

তারা চারজনই স্বীকার করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যা করা হয়েছিল, তা মোটেই ঠিক করা হয়নি। পূর্ব পাকিস্তান থাকার সময় বাংলাদেশের প্রতি নানান বৈষম্য করা হয়েছিল। এই ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক বিষয়ে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে গিয়েছে বলেও তারা যুক্তি দেখালেন।

 

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে চারজনই একমত পোষণ করে। তবে জেনারেল দুররানীর কণ্ঠে ছিল আক্ষেপ, ‘গত ১৮ বছর ধরে পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের চেষ্টা করলেও অগ্রগতি তেমন কিছু হয়নি।’

অর্থাৎ, পাকিস্তান বাংলাদেশকে কাছে টানতে চায়, কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাড়া মিলছে না। পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সিনেটর ও লেখক জাভেদ জব্বার মন্তব্য করেছেন, ‘…(পাকিস্তানের) তরুণ প্রজন্ম এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অনেক আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ১৯৭১-এ যা হয়েছে তার জন্য তারা অনুতপ্ত।’

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের অত্যাচারের জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গে এই চার পাকিস্তানির সুর কিন্তু প্রায় একই। মামাবাড়ির আবদার তাদের কণ্ঠে, বাংলাদেশকেও ক্ষমা চাইতে হবে। জব্বার সাহেব তো আরও এক কাঠি বাড়িয়ে বললেন, ‘দেখুন যুদ্ধ বিগ্রহের পর ক্ষমা চাওয়ার নমুনা বিরল। হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলার জন্য কি আমেরিকা ক্ষমা চেয়েছে? ভারত কি কাশ্মীর নিয়ে কখনও ক্ষমা চেয়েছে? ফিলিস্তিনদের দেশছাড়া করার জন্য ইসরায়েল কি ক্ষমা চেয়েছে? তাহলে পাকিস্তান কেন ব্যতিক্রম হবে? কিন্তু তারপরও সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে সেটাও অসম্ভব নয়।’

এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ কি পাকিস্তানি জনগণের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে? ধর্ষণ করেছে? অহেতুক প্রাণহানি ঘটিয়েছে? তাহলে বাংলাদেশ কেন ক্ষমা চাইবে? বরং পাকিস্তানের নৃশংসতা যে কেমন ছিল, সেটা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট থেকেই দেয়া যাক।

পাকিস্তানি সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের লেখা বই থেকে নৃশংসতার উদাহরণ না হয় বাদই দেয়া হলো। ১৯৮১ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনস হিউম্যান রাইটস কমিশনের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মানবসভ্যতার ইতিহাসে সংঘটিত গণহত্যার মধ্যে অতি অল্প সময়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। প্রতিদিন গড়ে এখানে ৬ থেকে ১২ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়। ইতিহাসে গণহত্যার সর্বোচ্চ গড় এটাই। অপারেশন সার্চলাইট নামে গণহত্যার প্রথম রাতেই কমপক্ষে ৩৫ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে ২৭ মার্চে প্রাণহানির সংখ্যা ১০ হাজার।

১৯৭১ সালে সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে ২৫ থেকে ২৯ মার্চ পাঁচ দিনে প্রাণহানির সংখ্যা ১ লাখ। তার মানে প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষ হত্যা করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। রাশিয়ার ‘প্রাভদা’ পত্রিকা ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশে তিরিশ লাখ শহীদের বিষয়টি প্রকাশ করে। শহীদ হওয়ার সংখ্যা নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলে ওটা বঙ্গবন্ধুর বানানো, তাদের জন্য জবাব হচ্ছে বঙ্গবন্ধু তো তখনও পাকিস্তানের জেলে বন্দি। তাহলে তিরিশ লাখ শহীদ হওয়ার বিষয়টি রাশিয়ার পত্রিকা প্রকাশ করল কী করে? ওই পত্রিকার ইংরেজি সংস্করণে উল্লেখ করা হয়, ÔOver 30 lakh persons were killed throughout Bangladesh by the Pakistani occupation forces during the last nine months.Õ

পত্রিকাটির ১৯৭২ সালের ৫ জানুয়ারির বাংলা সংস্করণে শিরোনাম করেছিল, ‘দখলদার বাহিনী বাংলাদেশে ত্রিশ লক্ষাধিক মানুষ হত্যা করেছে।’

ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েও আজ পর্যন্ত কিন্তু পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চায়নি। যদিও ইনিয়ে বিনিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকবার। প্রথমবার দুঃখ প্রকাশ করে ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে দিল্লিতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় সম্মেলনের শেষে যৌথ বিবৃতিতে। তবে সে দুঃখ প্রকাশেও ধূর্তামির পরিচয় দিয়েছিল পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমদ। বিবৃতির ভাষা ছিল এমন- The Minister of State for Defence and Foreign Affairs of the Government of Pakistan said that his Government condemned and deeply regretted any crimes that may have been committed.Õ

(সূত্র: https://casebook.icrc.org/case-study/bangladeshindiapakistan-1974-agreement

এ বিবৃতিতে কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নেই। যদি কোনো অপরাধ হয়ে থাকে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে গণহত্যার বিষয়টি কিন্তু নেই।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারিতে দেশে ফিরে বার বার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই ‘আর্ন্তজাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩’ ঘোষণা করা হয়। এ আইনে দেশীয় ও পাকিস্তানি দুই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের সুযোগ ছিল।

ভারতে আটক পাকিস্তানি সৈন্যদের মধ্যে প্রথমে ১৫০ জন ও পরে আরও ৪৫ জন, সবমিলিয়ে ১৯৫ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছিল বাংলাদেশ। ভারতও বাংলাদেশের কাছে অভিযুক্ত ওই ১৯৫ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে সম্মত হয়েছিল।

ওদিকে পাকিস্তানে তখন চার লাখ বাংলাদেশি আটকা পড়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ওই আটকেপড়া বাঙালিদের জিম্মি করে ভুট্টো। হুমকি দেয়, বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানিদের বিচার করে, তাহলে পাকিস্তানেও আটকেপড়া বাঙালিদের বিচার হবে। আটকেপড়া বাঙালিদের মধ্যে ২০৩ জন শীর্ষ বাঙালি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে এবং তথ্য পাচারের অভিযোগ আনে। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার পাকিস্তানের মাটিতেই হবে বলে নিশ্চয়তা দেয়। শুধু তাই নয়, এই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানির বিচার ঠেকাতে বাংলাদেশের উপর আর্ন্তজাতিকভাবে চাপ দেয়ার চেষ্টা করতে থাকে।

জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য আবেদন করা বাংলাদেশের সদস্যপদ বিষয়ে চীনকে দিয়ে ভেটো দেয়ায়। মুসলিম বিশ্ব থেকেও চাপ আসতে থাকে বাংলাদেশের ওপর। সবচেয়ে বড় চাপটা আসে ভারতের তরফ থেকে। ভারতের মাটিতে থাকা ৯৩ হাজার পাকিস্তানি বন্দি নিয়ে ভারত বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। এই যুদ্ধবন্দিদের খাওয়া-পরা ও থাকার ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খাচ্ছিল ভারত। সে কারণে যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধান করে যুদ্ধবন্দিদের পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ভারত।

একাত্তরের ঘটনা তদন্তে পাকিস্তানের হামুদুর রহমান রিপোর্টের জন্য গণহত্যার প্রমাণ সরবরাহ করেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানি সৈন্যদের নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে কয়েকজন সেনাকর্মকর্তার শাস্তির সুপারিশও ছিল ওই কমিশনে। কিন্তু পাকিস্তান বলে কথা! উল্টো গণহত্যা ও বাংলাদেশে ঘটানো সব অপকর্ম আড়াল করার চেষ্টা করতে থাকে পাকিস্তান। আজও তাদের সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সে কারণেই তারা কখনোই ক্ষমা চায়নি। কারণ ক্ষমা চাইলেই তো অপরাধ স্বীকার হয়ে যায়।

১৯৭৪ সালের ২৮ জুন বাংলাদেশ সফরে এসে পাকিস্তানের ধূর্ত প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বলেছিলেন, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য আমি শোক প্রকাশ করছি।’

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে পাকিস্তানপ্রেমের জোয়ার বইতে লাগল। জিয়া ও এরশাদ দুই সামরিক শাসকের পর ১৯৯১ সালে সরকার গঠন করেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী হয়ে উঠলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

এর মধ্যে ২০০২ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল মোশাররফ ঢাকা সফরের সময় জাতীয় স্মৃতিসৌধে মন্তব্য খাতায় লিখেছিলেন, ‘আপনাদের পাকিস্তানি ভাই ও বোনেরা একাত্তরের ঘটনাবলির জন্য আপনাদের বেদনার সঙ্গে একাত্মতা বোধ করে।’ পরে রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় মোশাররফ বললেন, ‘এই ট্র্যাজেডি, যা আমাদের দুই দেশের ওপর ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে, তার জন্য আমরা দুঃখিত।’

ব্যস। তাতেই বিনয়ে বিগলিত হয়ে গেল তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা। লিখিত বক্তব্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘একাত্তরের ঘটনাবলির জন্য এমন খোলামেলা বক্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই বক্তব্য সন্দেহ নেই, পুরোনো ক্ষত মেটাতে সাহায্য করবে। আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই এবং ভাইয়ের মতো একযোগে কাজ করতে চাই।’

তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা মহামান্য পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টের এই সফরের সময় ক্ষমা প্রার্থনার মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তাকে বিব্রত করতে চাই না।’

তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে। পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে নেতাদের নির্ধারিত সাক্ষাৎও বাতিল করে আওয়ামী লীগ। ৩০ জুলাই ঢাকায় অর্ধদিবস হরতালও দিয়েছিল।

তখন এই ক্ষমা চাওয়ার বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুদেশেই তুমুল আলোচনা হয়। করাচির ডন পত্রিকার ভাষ্যকার আমির আকিল লিখেছিলেন, ‘সবাই বলছে এখন সময় এসেছে ক্ষমা করার ও পুরোনো ঘটনা ভুলে যাওয়ার। আমাদের ক্ষমা করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে শুধু বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু ভুলে যাওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, তার জবাবে বলা যায়, বাংলাদেশ সে ঘটনা কখনোই ভুলবে না, আর আমাদের (পাকিস্তানিদের) সে ঘটনা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। ১৯৭১-এর ঘটনাবলির পেছনে যে সত্য নিহিত, তা এখনো আমাদের চৈতন্যে প্রবেশ করেনি, অথবা তা আমাদের সম্মিলিত স্মৃতির অন্তর্ভুক্ত হতে দেওয়া হয়নি।’

(সূত্র: একাত্তর ও ক্ষমার রাজনীতি, প্রথম আলো, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫)

হায়! একজন পাকিস্তানি হয়েও আমির আকিল বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, কিন্তু দলীয় প্রতিষ্ঠাতা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার বিএনপির সেই উপলব্ধির বিন্দুমাত্রও ছিল না।

যাহোক, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়েছিল আওয়ামী সরকার। গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে আপসহীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালে ইসলামাবাদের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণ পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এখনও সে দাবি জানিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ সরকার।

ঢাকায় পাকিস্তানের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে দেখা করতে এলে পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের এ দাবির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

পাকিস্তানের জব্বার সাহেবের কথার জবাবে বলা যায়, হিরোসিমা-নাগাসাকির জন্য আমেরিকা, ফিলিস্তিনের জন্য ইসরায়েল, কাশ্মীরের জন্য ভারত ক্ষমা চায়নি। কিন্তু ওসব জায়গার লড়াই দুতরফা। অপরদিকে বাংলাদেশের ওপর প্রশিক্ষিত সৈন্য দিয়ে একতরফা হামলা চালিয়ে গণহত্যা ঘটানো হয়েছে। দুটোর মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। বরং ব্রিটিশদের উদাহরণ দেয়া যায়। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল অবিভক্ত পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল ব্রিটিশশাসক। এ ঘটনায় ২০০০-এর মতো মানুষ হতাহত হয়; ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমাও চেয়েছে। একাত্তরের গণহত্যা ছিল জালিয়ানওয়ালাবাগের চেয়েও নৃশংস।

দুই হাজারের বিপরীতে তিরিশ লাখ মানুষ হত্যা করেছে পাকিস্তানি সৈন্যরা। পাশাপাশি ধর্ষণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ আরও অনেক নৃশংসতা ঘটিয়েছে। এত নৃশংসতা ঘটানোর পরও যদি পাকিস্তান ক্ষমা না চায়, তাহলে বলতেই হয়, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি এখনও অসভ্যই রয়ে গেছে। এই অসভ্য দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্ক গড়ে তুলবে কি না, সেটা পরের কথা। তার আগে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চেয়ে সভ্য হওয়ার পথে পাকিস্তানের পা বাড়ানো উচিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর