৪ঠা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, বিকাল ৪:০৮
শিরোনাম :
শিরোনাম :
।। ড. মিল্টন বিশ্বাসের জীবন ও কর্মকথার রূপরেখা ।। সলিমুল্লাহ খানের ‘‘ঠাকুরের মাৎস্যন্যায়: ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা’’ ।। জগন্নাথে ফেঁসে যাচ্ছে ‘সিসিডিবি’ এনজিও ।। ।।নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার দ্বিতীয় দিন।। নিউইয়র্কে ৩৪তম আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার বর্ণাঢ্য উদ্বোধন ।। নিউইয়র্ক মুক্তধারা বইমেলা : বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা ।। ড. নূরুন নবীর পদত্যাগ এবং মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের নীতিগত অবস্থান বিশ্বসভায় বাংলাদেশ ও বাঙালির জয়গান ইসিটি : ধর্মীয় ঐক্য, সামাজিক উন্নয়ন ও গবেষণার এক অনন্য যাত্রা ।। ইসিটি’তে ‘‘পবিত্র বাইবেল ও আইনের দৃষ্টিতে নির্যাতিতদের করণীয়’’ শীর্ষক আলোচনা সভা ।। ।। অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ফেয়ার ২০২৫ ।। বর্ণিল সাজে সেজে উঠেছে ডাইভার্সিটি প্লাজা
নোটিশ :
Wellcome to our website...

বাংলাদেশের এই জয় কি টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটন

রিপোর্টার
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৪:০৮ অপরাহ্ন

অঘটন?

নাহ্‌, মুশফিকুর রহিম-মুমিনুল হকদের উদ্‌যাপনে তেমন মনে হলো না। সেই তো হাসি, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উদ্‌যাপন। আর দশটা জয়ে যেমন হয়। তবে স্টাম্প নিয়ে যাওয়ায় সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে।

জয়টা বিশেষ না হলে আর স্মারক হিসেবে স্টাম্প নিয়ে যাওয়া কেন? মুশফিক-মুমিনুল এই জয় মনে রাখতে চান। তাই অনিবার্য কারণবশত ফেটে পড়া আবেগ চেপে রাখলেও স্টাম্প নিয়ে যাওয়ার ‘সুবিধা’টা ভুলে যাননি। নাতি-পুতিদের একদিন মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের স্টাম্প দেখিয়ে বলতে পারবেন, রবার্ট ব্রুসের আর কয়বার…।

স্কটিশ রাজার গল্প সবারই জানা। ইংরেজদের কাছ থেকে স্কটল্যান্ড উদ্ধার করেন ছয়বার হারের পর। নিউজিল্যান্ডে সব সংস্করণ মিলিয়ে মুশফিকদের হার ৩২ বার, এবার ৩৩তম বারের চেষ্টায় লেটার মার্কসসহ পাস। ব্রুসকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার যথেষ্ট কারণ থাকবে বৈকি!

আর লেটার মার্কস মানে চার দিন দাপট ছড়িয়ে পাওয়া জয়কে তো ক্রিকেটীয় কারণেই ‘অঘটন’ না-ও বলা যায়। কিন্তু লোকে বলাবলি করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দুই সেশনের বেশি সময় হাতে রেখে তুলে নেওয়া এ জয় এতটাই অনিবার্য ছিল যে মুশফিক-মুমিনুলের মধ্যে তেমন হেলদোল দেখা না গেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন উঠেছে, টেস্ট ইতিহাসে এটাই কি সবচেয়ে বড় অঘটন!

সবচেয়ে বড় না হলেও অন্যতম তো বটেই। এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। অথচ ভারত এই মুহূর্তে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ‍শীর্ষ দল, দুইয়ে নিউজিল্যান্ড আর নয়ে (জিম্বাবুয়ের এক ধাপ ওপরে) বাংলাদেশ। ল্যাথাম-মুমিনুলদের মধ্যে ৭৪ রেটিং পয়েন্টের ব্যবধান। ভারতকে পঞ্চগড় ধরলে দিনাজপুর থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব আরকি!

পাঁচে থাকা পাকিস্তান ও সাতে শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ নিষ্প্রয়োজন। এই এক দশকে অন্তত টেস্টে এশিয়ার তিন পরাশক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করার মতো বোকামি কেউ করবে না। তবে করে থাকলেও দেখা যাচ্ছে, বোকাদের কল্পনাও মাঝেমধ্যে সত্যি হয়!

এ দশকে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে উপমহাদেশের দলগুলোর মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স বাংলাদেশেরই
এ দশকে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে উপমহাদেশের দলগুলোর মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স বাংলাদেশেরইছবি: এএফপি

তা নয় তো কী? নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের টেস্ট জয় তো স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই রোমাঞ্চকর। ঐতিহাসিক। এই নিউজিল্যান্ড সফর বাঘা বাঘা দলগুলোর জন্যই সিন্দবাদের ‘কালা জাজিরা’ দ্বীপ অভিযানের মতো বিপদসংকুল। কেন? ২০১৭ সালে মার্চের পর থেকে ঘরের মাঠে টেস্টে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত ছিল এ সংস্করণের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। ১৩ জয়ের মধ্যে ৮টিতেই ইনিংস ব্যবধানে জয়। প্রতিপক্ষ? এই ধরুন, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।

খ্যাতিমান ক্রীড়া সংবাদকর্মী টিম উইগমোর তাই টুইট করেন, ‘খর্বশক্তির বাংলাদেশ হারিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে—টেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ঘরে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত—নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এই জয় টেস্টে অন্যতম অঘটন হয়ে থাকবে।’ খর্বশক্তি? আনন্দের আতিশায্যে সাকিব-তামিমের অনুপস্থিতি ভুলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়!

তাতে অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের বুকের ছাতি চওড়া হওয়া উচিত। সেরা দুই পারফরমারকে ছাড়া এমন দাপুটে জয়, সেটাও বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস চতুষ্টয়ের বিপক্ষে, তাঁদেরই পেসবান্ধব কন্ডিশনে; ক্রিকেট সংবাদকর্মী জ্যারড কিম্বার তাই টুইটে স্পষ্ট বলেন, ‘সেরা দুই পারফরমারকে ছাড়া নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট ইতিহাসে এটি সর্বকালের সেরা অঘটন হিসেবে সহজেই বিবেচিত হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের অবিশ্বাস্য কিছু জয় আছে। অঘটনের তালিকায় শ্রীলঙ্কাও ওপরের দিকে থাকবে।’

বাংলাদেশের কাছে এ হারে ঘরে টানা ৬ টেস্ট জয়ের ধারায় ছেদ পড়ল নিউজিল্যান্ডের। ঘরে টানা আটটি টেস্ট সিরিজ জেতার পর থামতে হলো বাংলাদেশের সামনে, যেহেতু সিরিজ দুই টেস্টের। অথচ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে তাঁদের মাটিতে সিরিজ জয় বাদ দিলে এশিয়া ও জিম্বাবুয়ের বাইরে আগে কখনো টেস্ট জেতেনি বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মাটিতে আগের ২১ টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৫টি আবার ইনিংস ব্যবধানে। এমন দলের বিপক্ষে হেরে বসল নিউজিল্যান্ড!

বলা হচ্ছে, মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন বোলাররা। বিশেষ করে পেসাররা, আরও বিশেষ করে বলতে গেলে ইবাদত হোসেন। অথচ নিউজিল্যান্ডের চার পেসারের টেস্টে সম্মিলিত উইকেটসংখ্যা ৯০৭, যেখানে বাংলাদেশের তিন পেসারের মোট উইকেট ৪৫। ১১ টেস্ট খেলা জেমিসনের একার উইকেটসংখ্যাই (৫৪) এর চেয়ে বেশি!

এসব তারতম্য দেখে অঘটন-বিতর্কে না গিয়ে বরং উইজডেন ক্রিকেটারস অ্যালমানাক সম্পাদক লরেন্স বুথের কথাটা মেনে নেওয়াই ভালো, ‘…তাদের টেস্ট ইতিহাসে সেরা অর্জন।’ ফাঁকা জায়গায় কোন দল হবে, তা নিশ্চয়ই বলে দেওয়ার দরকার নেই। তবে এরপরও যদি সর্বকালের সেরা, অন্যতম সেরা কিংবা নিদেনপক্ষে অঘটন কিনা—এসব নিয়ে বিতর্ক করতে ইচ্ছা করে, তাহলে ক্রীড়া সংবাদকর্মী ড্যানিয়েল চের্নির টুইটটি দেখে নেমে পড়তে পারেন অভিযানে, ‘টেস্ট ক্রিকেটে এর চেয়েও বড় অঘটন আছে কি না, মনে করতে পারছি না।’

হ্যাঁ, এর চেয়েও বড় অঘটন খুঁজে বের করার অভিযান। শুভকামনা রইল


এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর