২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, সকাল ১১:১৮
নোটিশ :
Wellcome to our website...

বঙ্গবন্ধুর মিশন স্কুল এখন ‘সীতানাথ-মথুরানাথ মডেল স্কুল’

রিপোর্টার
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধু ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মধুমতি নদীর তীরে মথুরানাথ ইন্সটিটিউট বা গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি হন। মিশন স্কুলের অদূরেই `সীতানাথ একাডেমি’। নিজগ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে (১৯২৭-২৯) নয় বছর বয়সে শিশু মুজিব বাবার সাথে এসে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন গোপালগঞ্জ সদরের ‘সীতানাথ একাডেমি’তে। বর্তমানে এটি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল। ১৯৩৪ সালে সীতানাথ একাডেমিতে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় তাঁর ‘বেরিবেরি’ হয়। ছেদ পড়ে লেখা-পড়ায়ও। টানা দুই বছর চিকিৎসা শেষে তিনি যখন গোপালগঞ্জ ফেরেন, ততদিনে তাঁর সহপাঠীরা নবম শ্রেণির ছাত্র।

১৯৩৬ সালে তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান মাদারিপুর মহকুমার সেরেস্তাদার হিসেবে যোগ দেন। অতঃপর শেখ মুজিবুর রহমানের নতুন ঠিকানা হয় মাদারিপুর মহকুমা সদর।  সেই সূত্রে তিনি মাদারিপুর ইসলামিয়া স্কুলে আবারও সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ বিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়া করেছেন স্বল্পকাল- মাত্র তিন-চার মাস। এরপর তিনি মারাত্মক চোখের রোগ ‘গ্লুকোমায়’আক্রান্ত হন। চিকিৎসার জন্য লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে।চিকিৎসা শেষে অতঃপর ভর্তি হন মিশন স্কুলে।সেখান থেকেই তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন।

২.

যশোরের কালিগঙ্গা নদীর পাশে কোটচাঁদপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত হিন্দু জমিদার  পরিবারে ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর জন্ম নিয়েছিলেন সাধু মথুরানাথ।  বাবা :  সদানন্দ বোস, মা : সুলোচনা দেবী। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান মথুরানাথ ১৮৫৭ সালে যশোর জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রাস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এরপর ভর্তি হন কলকাতার স্কটিশ মিশনারি কলেজে। ডা. আলেকজান্ডার ডাফ কর্তৃক ১৮৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি সেসময় কলকাতার সবচেয়ে ‘ভালো’ ইংরেজি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হতো। ১৮৬৪ সালে পর্যন্ত তিনি কলেজটি পরিচালনা করেন। এই ডাফ সাহেবের সংস্পর্শে এসেই তিনি খ্রিষ্টধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি ১৮৬০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে বি.এ. পাশ করেন এবং ১৮৬২ সালে পাশ করেন এল.এল.বি.।

মথুরানাথ ১৮৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গোপালগঞ্জে আসেন।সেই বছরই একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। মোট পাঁচজন ছাত্র ও দুইজন ছাত্রী নিয়ে যে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের যাত্রা, সেই স্কুলে বঙ্গবন্ধু ভর্তি হন ৬৩ বছর পর ১৯৩৭ সালে। তার আগে স্কুলটি ক্রমে চতুর্থ শ্রেণি, অষ্টম শ্রেণি ও ম্যাট্রিক পর্যন্ত শিক্ষা স্তরে উন্নীত হয়ে সমগ্র ফরিদপুর জেলার সেরা স্কুলে পরিণত হয়েছিল। এই স্কুলটির পরিচালনা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল মিশনারি বা বেঙ্গল মিশন সোসাইটি তখন গোপালগঞ্জের চারপাশে ত্রিশটি পাঠশালা পরিচালনা করতো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন মথুরানাথ ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন তখন ইন্সটিটিউটটি পরিচালনা করেন মথুরানাথ বসুর তৃতীয় সন্তান ব্যারিস্টার জন জিতেন্দ্র বসু (দায়িত্বকাল ১৯৩৫-১৯৪৬ )। প্রধান শিক্ষক ছিলেন গিরিশ বাবু। কিছুদিন পরেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন বাবু রসরঞ্জন সেনগুপ্ত। তাঁর কাছে বঙ্গবন্ধু প্রাইভেট পড়তেন।

সাধু মথুরানাথ বসু ইহলোক ত্যাগ করেন ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর। তাঁর মৃত্যুর পরে স্কুলটি পরিচালনা করেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ব্যারিস্টার মহেন্দ্র নাথ বোস। ১৯২৭ সালে তাঁর মৃত্যু হলে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মথুরানাথের দ্বিতীয় সন্তান জন জ্যোতি বোস। ১৯৩৫ সালে তাঁর মৃত্যু হলে কনিষ্ঠ সন্তান জিতেন্দ্র বোস দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

৩.

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের ফলে বেঙ্গল মিশন সোসাইটি অর্থ সংকটে পড়ে। পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব সংকট প্রকট হলে গোপালগঞ্জের বাতিঘর সাধু মথুরানাথ বোস প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। এ সময় সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি শক্তি ইন্সটিটিউটের সমস্ত জমি অধিগ্রহণ করে নিয়ে ‘কায়েদে আজম কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করে। মথুরানাথ ইন্সটিটিউটকে পাশ্ববর্তী সীতানাথ একাডেমিতে স্থানান্তরিত করে দুটি প্রতিষ্ঠানকে একীভুত করে  নতুন নামকরণ করা হয় ‘সীতানাথ-মথুরানাথ মডেল স্কুল’ বা ‘এসএম মডেল স্কুল’। বঙ্গবন্ধুর মিশন স্কুল ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলে।

(তথ্য- ভিকটর কে রোজারিও, সাংবাদিক ও গবেষক)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর