৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, রাত ৪:১০
নোটিশ :
Wellcome to our website...

পূর্বাচলে দৃষ্টিনন্দন মেলা, জমে ওঠার অপেক্ষায় ক্রেতা-বিক্রেতারা

রিপোর্টার
শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন

ভার্সিটি ডেস্ক

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। বছরের শুরুর মাসটির এই আয়োজনে নজর থাকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। ২৫টি আসর পেরিয়ে এবারেই এই মেলার চিত্রটি ভিন্ন। দীর্ঘ প্রতীক্ষা কাটিয়ে আগারগাঁওয়ের বদলে এ বছর যে এই মেলা শুরু হয়েছে পূর্বাচলে। তাতে মেলার পরিসর যেমন বেড়েছে, তেমনি যুক্ত হয়েছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। দৃষ্টিনন্দন এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরে পর্যাপ্ত স্থান, খোলামেলা পরিবেশ, পর্যটনের বিশাল রেস্টুরেন্ট আর সুবিশাল পার্কিং লট এরই মধ্যে নজর কেড়েছে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) এবারের বাণিজ্যমেলার চতুর্থ দিনে অবশ্য মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল, এখনো মেলার আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ হয়নি। এখনো বহু স্টলের কাজ চলছে। মেলায় এবার বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির স্টলগুলোও আকারে ছোট। দর্শনার্থীরা বলছেন, মেলায় দেখার মতো তেমন কোনো পণ্য নেই। আর চার দিন হয়ে গেলেও বেচাকেনায় হতাশ বিক্রেতারা। তারা অপেক্ষায় রয়েছেন ছুটির দিনের।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা রয়ে গেছে। কুড়িল থেকে পূর্বাচলে আসার রাস্তাও যান চলাচলের পুরো উপযোগী নয় বলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মেলায় আসা-যাওয়ার পথে।

রাজধানীর সম্প্রসারিত অংশ পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) হচ্ছে প্রথমবারের মতো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। মেলার ২৬তম এই আসরের জন্য এক্সিবিশন সেন্টারটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থায়ী ঠিকানা পাওয়া মেলার দ্বার খুলবে প্রতিদিন সকাল ১০টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় ঢুকতে টিকিটের দাম ৪০ টাকা, শিশুদের জন্য ২০ টাকা।

কথা হলো ক্রোকারিজ পণ্যের স্টল এসকেবির স্টল ইনচার্জ জয়ের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, মেলায় মানুষজন ঘুরতে আসছেন। দর্শনার্থীরা আসছেন। তবে সেই তুলনায় বেচাবিক্রি নেই। আমরা এখন শুক্রবার ও শনিবারের জন্যে অপেক্ষা করছি। সাপ্তাহিক ছুটির ওই দুই দিনে হয়তো জনসমাগম বাড়বে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত টুকটাক বেচাকেনা হচ্ছে।

আগারগাঁওয়ের মেলার সঙ্গে পূর্বাচলের মেলার পার্থক্য জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘ওখানে প্রচুর লোক হতো। এটা ঢাকার আউটসাইড। ঢাকার লোকজন তেমন আসছে না। এখানকার স্থানীয়দের বাইরে বসুন্ধরা ও উত্তরার অধিবাসীর কেউ কেউ হয়তো আসছেন। ফলে ক্রেতা কম।’

পূর্বাচলে দৃষ্টিনন্দন মেলা, জমে ওঠার অপেক্ষায় ক্রেতা-বিক্রেতারা
কাশ্মিরি শাল বিক্রি করছে— এমন একটি স্টলের মালিক শাব্বির সারাবাংলাকে বলেন, ‘লোক নেই। ওখানকার (আগারগাঁও) তুলনায় এখানে কোনো লোক নেই। সন্ধ্যা হলে কেউ আর এখানে থাকে না। ৬টার পর লোকজন চলে যায়। প্রত্যাশানুযায়ী বিক্রি হচ্ছে না।’

আখতার ফার্নিচারের স্টলে কর্মরত জামাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রথম চার দিনে দর্শনার্থী সমাগম একেবারে কম নয়। কিন্তু বেচাকেনা তেমন ভালো না। আশা করি সপ্তাহখানেক পরে বিক্রি বাড়বে। মেলায় আমাদের প্রতিটি পণ্যে ১২ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি।’

মেলায় এবার ওয়ালটনের স্টলটি খুবই ছোট। জানতে চাইলে ওয়ালটনের ফার্স্ট সিনিয়র অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর তানভীর মাহমুদ শুভ বলেন, ‘এবারের মেলায় আমরা পণ্য বিক্রি করতে আসিনি। আমরা আমাদের নতুন নতুন ইনোভেশনগুলো দেখাতে এসেছি। আমরা আমাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি দেখাচ্ছি। সারাদেশেই ওয়ালটনের প্রচুর শো-রুম রয়েছে। তাই মেলা থেকে কেউ পণ্য কিনে কষ্ট করে বাড়ি নেবে, সেই বিড়ম্বনা এড়াতে অনলাইনে ওয়ালটনের পণ্য কিনতে উৎসাহিত করছি। অনলাইনে অর্ডার করলে ওয়ালটনের পণ্য ক্রেতার ঘরে দ্রুত পৌঁছে যাবে।’ মেলায় ওয়ালটনের পণ্যের বিক্রি ভালো বলেও জানালেন তিনি।

বিক্রেতাদের হতাশার বিপরীতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মধ্যে সন্তোষজনক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল না। বাড্ডা থেকে মেলায় এসেছিলেন ফাতেমা-রবিন দম্পত্তি। ফাতেমা বলেন, ঢাকার তুলনায় এখানের মেলা কিছুই না। অনেক দূর থেকে জার্নি করে আসছি, কিন্তু দেখার মতো কিছুই নেই। এখানে ঢাকার মেলার আমেজ নেই।

মেলার পরিবেশ নিয়ে অবশ্য সন্তুষ্ট পূর্বাচলের বাসিন্দা নাইম। পরিবারসহ মেলায় এসেছিলেন। নাইম সারাবাংলাকে বলেন, এখানে মেলা হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। এখানে খোলামেলা পরিবেশ। এই এলাকায় এমনও মানুষ আছে যারা কখনো আগারগাঁওয়ের বাণিজ্যমেলায় যাননি। তারা এখন এখানে আসছেন।

পরিবেশে সন্তুষ্ট হলেও দাম নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে নাইমের। তার বক্তব্য, ‘মেলায় এখনো দোকান বা স্টলের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ভবিষ্যতে হয়তো বাড়বে। তবে মেলায় সব পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।’

মেলার সার্বিক চিত্র

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো অনেক স্টলের কাজ চলছে। কোথাও স্টলে রঙের কাজ চলছে, কোথাও ফার্নিচার বসিয়ে স্টল সাজানোর কাজ চলছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বড় বড় ব্র্যান্ড ও নামিদামি প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলোও এবার বেশ ছোট। তুলনামূলকভাবে মেলায় প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যও কম।

পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটিতে আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সবই আছে। দর্শনার্থীদের গাড়ি রাখার জন্য রয়েছে বিশাল পার্কিং। অবসর নেওয়ার জন্য সেন্টারের সামনে দৃষ্টিনন্দন বেঞ্চ, ফোয়ারার পাশপাশি ক্ষুৎপিপাসা মেটানোর জন্য পর্যটনের বিশাল রেস্টুরেন্টও রয়েছে সেন্টারটিতে।

মেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এবারে বাণিজ্যমেলায় ২২৫টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এরমধ্যে ১০টি স্টল ও মিনি প্যাভিলিয়ন বিদেশি। মেলায় অত্যাধুনিক সুবিধাসহ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা রয়েছে। বরাবরের মতো মেলায় এবারও রয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। মেলায় দ্বিতল গাড়ি পার্কিংয়ে সুবিধা রয়েছে, যেখানে এক হাজার গাড়ি পার্কিং করা যাবে। এছাড়াও হলের বাইরে ছয় একর জামিতে পার্কিং ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

মেলায় ইন্টারনেট সমস্যা

মেলা প্রাঙ্গণে ইন্টারনেটের সমস্যার কথা জানালেন অনেকেই। মোবাইল নেটওয়ার্কও ঠিকঠাকমতো কাজ করছে না বলে অভিযোগ দর্শনার্থীদের। তারা বলছেন, এক্সিবিশন সেন্টারটিতে মোবাইল ফোনে কখনো ফোরজি আবার কখনো থ্রিজি নেটওয়ার্ক দেখাচ্ছে। আবার কখনো কখনো মোবাইল ইন্টারনেট একেবারেই কাজ করে না।

কয়েকটি স্টলের কর্মীরা জানালেন, নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় কাজ করতে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। গণমাধ্যমকর্মীরাও একই রকম তথ্য জানিয়েছেন। এই প্রতিবেদককেও মেলায় অবস্থানকালীন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

মেলায় যাচ্ছে বিটিআরসির বাস

মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্যে বিআরটিসির ৩০টি বাস চলাচল করছে। রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে ছাড়ছে বাসগুলো। মেলা চলাকালীন প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাতায়াত করছে বাসগুলো। বাস ভাড়া ৩০ টাকা।

মেলায় যাওয়ার পথে কুড়িলে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, মেলায় যাওয়ার জন্যে যাত্রীরা লাইন ধরে টিকেট কাটছেন। যাত্রী পূর্ণ হলেই ছেড়ে যাচ্ছে বাস। একটি বাসের আসন পূর্ণ হতে গড়ে মিনিট বিশেক সময় লাগছে। এ কারণে টিকেট কেটেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের।

নতুন রাস্তা

কুড়িল থেকে পূর্বাচল আসার রাস্তার কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। কোথাও রাস্তা প্রশস্ত, কোথাও সরু। রাস্তা মেরামত করা হলেও বেশকিছু স্থানেই সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। এসব স্থান অতিক্রমের সময় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

মেলা প্রাঙ্গণে জহির নামের এক দর্শনার্থী বললেন, দু’টি জায়গায় আন্ডারপাসের জন্য ওপর দিয়ে রাস্তা করা হচ্ছে। আর নিচ দিয়ে বাস চলছে। বাসগুলো চলাচলের সময় প্রায় ওপরের রাস্তায় লেগে যাচ্ছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। আবার যে দু’টি স্থানে আন্ডারপাসের কাজ চলছে, সেখানে এক লেনে গাড়ি চলতে হয়। এতে গাড়ির ছোট ছোট জটলাও তৈরি হচ্ছে। আর এই রাস্তায় রয়েছে প্রচণ্ড ধুলো। সংশ্লিষ্টদের এসব বিষয়ে দ্রুত নজর দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য জহিরসহ অন্য দর্শনার্থীদেরও।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

নিরাপত্তার জন্য মেলা প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে ২২০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সরেজমিনে দেখা গেছে, মেলা প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর