২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, বিকাল ৫:৫০
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

‘দরিদ্র নারীরা আইনি সহায়তা পেতেও বৈষম্যের শিকার’

রিপোর্টার
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫০ অপরাহ্ন

সমাজের সব শ্রেণির নারী একইরকম আইনি সুবিধা ভোগ করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী। আইনি সুরক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক বৈষম্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছেন তিনি।

সালমা আলী বলেন, আইনের সুবিধা পাওয়া ক্ষেত্রে ধনী ও গরীব নারী সমান সুযোগ পায় না। এছাড়াও ক্রমাগত বেড়ে চলা আমলাতন্ত্র ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণেও আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নারীসহ সাধারণ মানুষ।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডাব্লিউএলএ) আয়োজিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি’ শিরোনামের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। সোমবার (৩ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর আহমেদ চৌধুরী হলে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

২০২১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুবাইদা পারভিন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সমিতির সহসভাপতি সীমা জহুর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সারাদেশে কেবল নারী ও শিশু সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা আনুমানিক ১৯ হাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে চট্টগ্রামে— ৩ হাজার ৩৮৫টি, সর্বনিম্ন ১৪৪টি নড়াইলে।

বিভিন্ন জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল থেকে প্রাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে কেবল যশোর, খুলনা, নরসিংদী, রাজশাহী, ফরিদপুর, সিলেট, নড়াইল, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও কুমিল্লা— এই ১০টি জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল এ মামলার সংখ্যা সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি নির্দেশ করে বলে মনে করছে তারা। নরসিংদীতে ১৮৪টি, খুলনা ৭৩৬টি, নড়াইলে ১৪৪টি, রাজশাহীতে ৬৪৯টি, ফরিদপুরে ৩১২টি, সিলেটে ৭২১টি, কুষ্টিয়ায় ১৯০টি, দিনাজপুরে ১২৭৬টি, চট্টগ্রামে ৩ হাজার ৩৮৫টি, কুমিল্লায় ২ হাজার ৯৭৪টি ও যশোরে ১ হাজার ২০০টি মামলা হয়েছে এ বছর।

এদিকে, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ঢাকার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে মোট দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ৬০৪টি। এই সেন্টারে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে ৬৭৬ জনের ভর্তি হওয়াও নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ করে বলে মনে করছে মহিলা আইনজীবী সমিতি।

জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত সহিংসতার চিত্র

২০২১ সালে মোট ২ হাজার ৩১৬ জন নারী নানা ধরনের সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যে নির্যাতনের শিকার ১ হাজার ৭৪২ জন, হত্যা করা হয়েছে ৪৮৪ জনকে ও সহিংসতার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৫৩ জন। এ সময়ে মোট যৌন হয়রানির শিকার ১৯৬ জন, হত্যাকাণ্ডের শিকার সাত জন, আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন।

এক বছরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ২৫৩টি, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে। আর ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন। এছাড়া এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন ১৯ জন, এসিড ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছে ৯ জনকে এবং এসিড নিক্ষেপের ফলে আত্মহত্যা করেছেন এক জন। একই সময়ে যৌতুক না দেওয়ায় নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ২০৩টি। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১২৩ জন, হত্যার শিকার হয়েছেন ৬৯ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৩ জন। ৪৪ জন গৃহকর্মী বিদায়ী বছরটিতে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে নির্যাতনের শিকার ২৭ জন, নির্যাতনের পর হত্যার শিকার দুই জন এবং আত্মহত্যা করেছেন আরও দুই জন।

পারিবারিক সহিংসতা

গত বছর ৬০২টি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সহিংসতা পরবর্তী সময়ে স্বামী ও স্বামীর পরিবার দ্বারা হত্যার শিকার হয়েছেন ২৮৫ জন। পরিবারেও নিরাপদ ছিলেন না নারী। এসময় পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১২৫ জন, নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৬০ জন, নির্যাতনের ফলে আত্মহত্যা করেছেন ১১৭ জন।

গত বছর কী পরিমাণ নারী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এবং এর ফলে নির্যাতন বেড়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সালমা আলী বলেন, কর্মহীন নারীর সংখ্যা কত, তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। তবে সাদা চোখেই দেখা গেছে, চাকরিচ্যুতির প্রাথমিক ধাক্কার শিকার নারীই। চাকরিজীবী শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত নারী যেমন কর্মহীন হয়েছেন, তেমনি অদক্ষ শ্রমিক ও গৃহকর্মীরাও কর্মহীন হয়েছেন। ঘরে থাকার কারণে তারা অনেকেই স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আবার লকডাউনে অনেক পুরুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারাও ঘরে থেকেছেন এবং অর্থনৈতিক ও মানসিক সমস্যার ঝাল মিটিয়েছেন পরিবারের নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতন করে। লকডাউন থাকায় নারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সাহায্য থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।

পারিবারিক সহিংসতার এক-তৃতীয়াংশ ঘটনায় মামলা

২০২১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০২টি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে মাত্র ২৬৬টি, যা মোট সহিংসতার ঘটনার এক-তৃতীয়াংশ। বিএনডাব্লিউএলএ বলছে, সরকারি হিসাবেই মহারির মধ্যে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব আরও বলছে, গত বছর দেশে স্বামীর হাতে স্ত্রীর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে ৬৫টি, কিন্তু মামলা হয়েছে ১৮টি। স্বামীর পরিবারের হাতে নির্যাতনের ২০টি ঘটনায় মামলা করেছেন ১০ নারী। আবার স্বামীর হাতে ২১২ জন স্ত্রী খুন হলেও মামলা হয়েছে ১০৬টি। এছাড়া স্বামীর পরিবারের সদস্যের হাতে খুনের ৭৩ ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪০টি ঘটনায়।

নারী হত্যায় পিছিয়ে ছিল না নিজ পরিবারও। এসময় পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হন ৭৫ জন। কিন্তু এসব ঘটনায় মামলার সংখ্যা মাত্র ৩৪। এদিকে ৪০ জন নারী নিজ পরিবারের হাতে নির্যাতনের শিকার হলেও মামলা করেছেন মাত্র ১৮ জন। নানা ধরনের পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় আত্মহত্যা করেছেন ১১৭ জন। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৪০টি ঘটনায় মামলা হয়েছে।

পাচারের পরিসংখ্যান নেই

বিদায়ী ২০২১ সালে পাচারের শিকার নারীদের রক্ষার জন্য অভিযান হয়েছে ৯৪টি। সালমা আলী বলেন, বাংলাদেশে নারী ও শিশু পাচারের মোট সংখ্যা বলা মুশকিল। কারণ এটি সবার অগোচরে ঘটতেই থাকে। আবার আভ্যন্তরীণ পাচারের ঘটনাও উল্লেখযোগ্য, যা কোনো হিসাবে আসে না। দেশে কত নারী ও শিশু পাচারের শিকার হয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে, তার কোনো হিসাব নেই।

পুলিশের নাকের ডগা দিয়েই এসব ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন সালমা আলী। বলেন, এসব ঘটনায় থানায় মামলাও হয় না। করোনাকালীন মনিটরিংয়ের অভাবে আভ্যন্তরীণ পাচার বা দেশের ভেতরে নারী ও শিশু পাচার বেড়েছে বলে জানান তিনি। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে দেশের পতিতাবৃত্তির ‘রেড জোন’গুলোতে সংগঠন থেকে বছরে কয়েকবার উদ্ধার অভিযানে গেলেও করোনার সময়ে মাত্র একবার যেতে পেরেছেন ও নামমাত্র উদ্ধার চালাতে পেরেছেন বলে তিনি জানান।

মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে এক ধরনের চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে সবাইকে। এর ফলে সমাজে ও পরিবারে অসহিষ্ণুতা বেড়ে গেছে এবং এর প্রতিফলন হিসেবে মহামারির এই সময়ে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এসব ঘটনার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতার শীর্ষস্থানীয় দেশের একটিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর