* মোঃ আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব*
অ) বর্তমানে আমের ভরা মৌসুম চলছে। বস্তুত আম গ্রীষ্মম-লীয় ও উপগ্রীষ্মম-লীয় দেশগুলিতে ব্যাপকভাবে উৎপাদিত একটি ফল। এটি গোত্রের প্রজাতির আওতাভুক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আম বাংলাদেশ, আসাম (ভারত) ও মায়ানমারসহ ভারত উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় ফল। অবশ্য অন্যান্য প্রজাতির (গ. ষধঁৎরহধ) উৎপত্তি মালয় অঞ্চলে। উল্লেখ্য যে, ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় ও লোকজ অনুষ্ঠানে ব্যবহার্য ফলাদির মধ্যে আমের ব্যবহার সর্বাধিক। এসব অনুষ্ঠানের সঙ্গে আমের মতো অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক খুব কম ফলেরই রয়েছে। কথিত আছে যে, স্বয়ং গৌতম বুদ্ধকে এই মর্মে একটি আ¤্রকানন উপহার দেওয়া হয়েছিল, যাতে তিনি এর ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারেন। এদিকে অতি প্রাচীনকালে নির্মিত ভারতের অজন্তা ইলোবার গুহাচিত্রে রয়েছে আম গাছের অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন চিত্র। তাছাড়া খৃষ্টপূর্ব ৩২৭ মহাবীর আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় এসে সদৃশ্য আম বাগান দেখে মুগ্ধ হন। আর ভারতবর্ষে পাল রাজাদের আমলে পন্ডুবর্ধনভুক্তি ও শ্রীনগরভুক্তিতে আমের চাষ করা হতো। জানা যায় যে, বিখ্যাত চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং, যিনি ৬৩২ থেকে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে ভারত উপমহাদেশে ভ্রমণে এসছিলেন এবং তিনিই আমকে সর্বপ্রথম বর্হির্বিশ্বে পরিচিত করান। যাহোক, মুসলিম শাসন আমলেও আম চাষ ও আম বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠে। স¤্রাট বাবর তাঁর রাজত্বকালে আমকে ভারতের শ্রেষ্ঠ ফল বলে আখ্যায়িত করেন। এদিকে মুগল স¤্রাট আকবর তাঁর শাসনামলে (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ) ভারতের লাখবাগের দারভাঙার সন্নিকটে প্রায় এক লক্ষ আম গাছ রোপন করেছিলেন। আর সেটিকে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সুসংগঠিত আমবাগান বলে অভিহিত করা হয়। এক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদের নবাবদের অবদান খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, আনুমানিক ১৭০০ সালে ব্রাজিলে প্রথম আম গাছ রোপণের পূর্ব পর্যন্ত পশ্চিম গোলার্ধে আমের চাষ শুরু হয়নি। আর সম্ভবত সেখান থেকে এ ফল ওয়েস্ট ইন্ডিজে পৌছায় ১৭৪০ সালের দিকে। যতদূর জানা যায়, তাতে প্রতীয়মান হয় যে, স্প্যানিশ, ডাচ, ফ্রেন্স ও ইংরেজদের হাত ধরে ধীরে ধীরে আমেরিকা, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিন আফ্রিকা, সোমালিয়া, কেনিয়া ও ফিলিপাইনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করে। অবশ্য আমেরিকার গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে কিছু বুনো প্রজাতির আম জন্মে। বর্তমানে অনেক দেশেই আম জন্মিলেও বেশি জন্মে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, পাকিস্তান, মিশর, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, ইত্যাদি দেশে। আম গাছ বিভিন্ন কৃষি উপযোগী জলবায়ুতে জন্মাতে সক্ষম বলে বর্তমানে এটিকে পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলেই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এটি চিরসবুজ, কা- বৃহদাকার, বাকল খসখসে ও কালচে রঙের, শাখাপ্রশাখা বিস্তৃত ও ঘন পাতা। বস্তুত ফাঁকে ফাঁকে আম চারা রোপন করা হলে তা বৃদ্ধি পেয়ে উপর দিকে ছাতার আকৃতি ধারণ করে এবং প্রায় ২০ মিটার উঁচু ও ৩০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হতে পারে। আম কাঠ ধূসর বর্ণের, মোটা আশযুক্ত। যাহোক, প্রায় সব ধরনের মাটিই আম চাষের জন্য উপযোগী। তবে যেখানে মাটি স্তরের গভীরতা এক মিটারের কম এবং যেখানে মাটির নি¤œ স্তরে নুড়ি, শিলা, কাঁকর ইত্যাদি রয়েছে অথবা যে মাটি অতিরিক্ত আঠালো, সেখানে আম গাছ ভাল হয় না। পলিমাটির স্তরসমৃদ্ধ গাঙ্গেয় সমভূমি এলাকায়, যেখানে মাটিস্তর গভীর এবং আলগা নুড়ির একটা উপস্তর রয়েছে এবং মাটির ঢ়ঐ মাত্রা ৫.৫ থেকে ৭.৫, যা এর বৃদ্ধির সহায়ক। আমের ভাল ফলনের জন্য প্রয়োজন প্রচুর বৃষ্টিপাত, যেন মাটির বেশ গভীর পর্যন্ত আর্দ্র হতে পারে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আম গাছে যখন মুকুল আসে। তখন কুয়াশা, বৃষ্টি এবং মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে ফলের গঠনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। মুকুল থেকে ফলের উন্মোষ ও বৃদ্ধির সময়ে হালকা বৃষ্টিপাত উপকারী। কিন্তু ঝড়, বিশেষত শীলাবৃষ্টিতে ফলের ক্ষতি হয় এবং অকালে ঝরে যায়। কলম পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম গাছে প্রথমবারের মতো ফল আসে গাছের বয়স যখন প্রায় চার বছর হয়। বিচি থেকে উৎপন্ন গাছে ফল আসতে আরও বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। ফল আসা একবার শুরু হলে বছরের পর বছর ফলন বৃদ্ধি পেতে থাকে। কলম করা গাছে প্রায় ৪৫ বছর পর্যন্ত ফল ধরে, তারপর ফলন হ্রাস পেতে আরম্ভ করে। বীচি থেকে উৎপন্ন গাছ বাঁচে বেশি দিন এবং তাতে ফল ধরে ৬০ বছর বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত। হলদে সাদা বা বেগুণি বর্ণের ও সুগন্ধযুক্ত মুকুল পত্রগুচ্ছের মাথায় ঝুরির আকারে জন্মে। প্রতিটি মঞ্জরিতে ১০০ থেকে ২৫০টি মুকুল ধরে। মুকুল সাধারণত উভয়লিঙ্গ। আর স্ত্রীমুকুল কম থাকে। একটি আম গাছের মোট মুকুলের পরিমাণ বা সংখ্যার ওপর ফলের বিন্যাসের মাত্রা নির্ভর করে। প্রায় এক হাজার মুকুলের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ফলে রূপ নিতে পারে মাত্র দু’একটি। মজার ব্যাপার হলো যে, একটি মঞ্জরি থেকে দুই বা তিনটি ফল হলেই ফলন সন্তোষজনক বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। আমের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত থাকলেও প্রবন্ধের স্বার্থে এর গঠন প্রণালী সম্পর্কে যতকিঞ্চিৎ তুলে ধরছি। এ সূত্র ধরে উল্লেখ্য যে, আম মসৃণ, কিছুটা আঁটসাঁট, শাঁসালো, এক আঁটিযুক্ত। এই ফল গোলাকার, ডিম্বাকার, হৃৎপিণ্ডাকার, বৃক্কাকার, লম্বা বা সরু, ইত্যাদি বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। কাঁচা আম সাধারণত সবুজ, পাকলে সবুজাভ হলুদ, হলুদ, কমলা, মিশ্র রঙের লাল আভাযুক্ত, এমনকি সবুজও থেকে যেতে পারে। পাকা ফল আকারে ও গুণে নানা রকমের হতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, ক্ষুদ্রতম আম আলুবোখারার ন্যায়। আর বড় প্রজাতির একেকটি আমের ওজন ৭৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আ) আম গাছ সারা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে জন্মে এবং মূলত এর রোপণ হয় বসতবাড়ির গাছ হিসেবে। এদেশের আম প্রধানত দুটি জাতের, একটি উন্নত বা অভিজাত; (যা জোড়কলম ও অন্যান্য অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে) অন্যটি স্থানীয়; (যার বংশবিস্তার ঘটে বীজ থেকে)। এ ধরনের আম স্থানীয়ভাবে দেশি আম বা গুটি আম হিসেবে পরিচিত। এদের নির্দিষ্ট কোনও নাম নেই, স্বাদও খুব একটা নিশ্চিত নয়। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে বেশ কিছু সংখ্যক উন্নত জাতের আম রয়েছে, এগুলি অধিকাংশই জন্মে রাজশাহী, নবাবগঞ্জ ও দিনাজপুর এলাকায়। বাজারে এসব আমের চাহিদাই বেশি এবং এ জাতগুলি বাণিজ্যিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত জাতের আমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফজলি, লেংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, ক্ষীরসাপাতি, আশি^না, কিষানভোগ, কুয়াপাহাড়ি, লতা বোম্বাই, ফোরিয়া বোম্বাই, কোহিতুর, লক্ষণভোগ, মোহনভোগ, রাণীপছন্দ, মি¯্রেিভাগ, ইত্যাদি। প্রসঙ্গক্রম উল্লেখ্য যে, আম সব সময়ই ছিল রাজ রাজাদের প্রিয় ফল, সে জন্য এর নাম নৃপপ্রিয়। ফলটি রসাল বলে এর নামের সঙ্গে বিভিন্ন নামকারক রস শব্দটা জুড়ে দিয়েছেন; যেমন- মধ্বারস, রসাল, সিধুরস, ইত্যাদি। মিষ্টি স্বাদের বলে এর নাম মধুলী। সত্যি কথা বলতে কি, আমের রয়েছে বহু প্রজাতি, আর সেসব প্রজাতির নামকরণের পেছনে রয়েছে মজার মজার ইতিকথা ও শানে নুযুল। এ সূত্র ধরে উল্লেখ্য যে, মোগল বাদশাহ আকবরের দরবারে এক প্রখ্যাত বাইজি ছিলেন। নাম ছিল তাঁর ফজল বিবি। বৃদ্ধ বয়সে ফজল বিবিকে বাদশাহ তাঁর আমবাগানের এক কোণে একটা ঘর তৈরি করে থাকতে দেন। আর ফজল বিবির ঘর ছিল একটি আমগাছের তলায়। সে গাছে বড় বড় আম ধরতো। ফজল বিবি মারা যাওয়ার পর মানুষ ঐ বড় বড় আমের নাম দেয় ফজলি আম। এখন আমরা যে ফজলি আম খাই, সেটা সেই আদি গাছের আম। তবে সময়ের বিবর্তনে এর আকার ও স্বাদে বেশ বৈচিত্র্য এসেছে। এ জন্য এখন ফজলিরও অনেক উপজাত সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- সুরমাই ফজলি, মালদা ফজলি, নাক ফজলি, কাল ফজলি, ইত্যাদি। এদিকে প্রাচীন ভারতে আ¤্রপালি নামক খ্যাতনামা অপসরা ও শ্রেষ্ঠ নর্তকী ছিলেন। তাঁর নামেও বিশেষ একটি জাতের আমের নাম রাখা হয়েছে “আম্রপালি”। আমের মধ্যে ছোট হলেও আ¤্রপালিই সবচেয়ে মিষ্টি। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, ইতিহাস ঘেঁটে আম্রপালী সম্পর্কে যতখানি তথ্য পেয়েছি, তা সম্মানিত পাঠকবর্গকে জানানো সমীচীন বলে মনে করি। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের কথা। প্রাচীন ভারতে বিহারের অন্তগত বৈশালী নামক সবার সমঅধিকার সম্বলিত একটি গণতান্ত্রিক শহর ছিল। সেই শহরে বাস করতেন আম্রপালী। মজার ব্যাপার হলো যে, একদা মাহানামন নামে একজন জনদরদী ও উদার ব্যক্তি একটি আম গাছের নিচে শিশু আ¤্রপালীকে কুড়িয়ে পান। তিনি মা-বাবাহীন এই শিশুকে পিতৃ-মাতৃ ¯েœহে পালন করতে থাকেন। কালের পরিক্রমায় সে দিনে দিনে বেরে উঠেন এবং ভরা যৌবনে পা দেন। তখন এই অপসরা আ¤্রপালীর রূপের কথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশ বিদেশের রাজপুত্রসহ রাজা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পাগলপ্রায় হয়ে যান। সবাই বিয়ে করার জন্য এগিয়ে আসলে দ্বন্দ, ঝগড়া ও ভীষণ বিবাদের কথা একের পর এক আসতে থাকে। বলতে গেলে বৈশালী শহরে এটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তখন এই সমস্যা সমাধানের জন্য সেখানের ক্ষমতাধর, ধনবান ও জ্ঞানী-গুণীরা বসে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেন যে বৈশালী একটি গণতান্ত্রিক শহর। আর এখানে সবার সমান অধিকার। কেউ আ¤্রপালীকে একা বিয়ে করতে পারবেন না। আ¤্রপালীর অভূর্তপূর্ব রূপ যৌবনের উপর সবার সমান অধিকার আছে বিধায় তিনি হবেন নগর বধু তথা সবার বধু; এক কথায় পতিতা। এছাড়াও আ¤্রপালী নিয়ে আরও অনেক কাহিনী আছে, তা প্রবন্ধের স্বার্থে বলা নিষ্প্রয়োজন বলে মনে করি। এবার আসুন আ¤্রপালী নামকরণ নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা যাক। শিশু আ¤্রপালীকে যে জাতের আম গাছের নিচে কুড়িয়ে পাওয়া যায়। সেই গাছের আমের নাম আ¤্রপালী, যা তাঁর নামকে ঘিরেই করা হয়েছে। এখানে একটি কথা থেকে যায়, যা হলো যেহেতু তাঁকে আম গাছের নিচে পাওয়া গিয়েছে, তাই তার নামকরণ করা হয়েছে, “আ¤্রপালী”। আর, সংস্কৃতিতে “আ¤্র” মানে “আম” এবং পল্লব হলো “পাতা” (অপভ্রংশ পূর্বক হয়েছে পালী)। এদিকে দূর অতীতে ভারতের বেনারসে একজন সৌখিন ল্যাংড়া বৃদ্ধ ছিলেন। তিনি আম গাছের প্রতি অনুরাগী ছিলেন বিধায় বেছে বেছে অপূর্ব স্বাদ ও ঘ্রাণের একটি আম গাছ লাগান। সেই ঘ্রাণসহ অপূর্ব স্বাদের আমের কথা সর্ব জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে এই প্রজাতির আমের চাষ বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়। সেই থেকে আমটার নাম হয় যায় ল্যাংড়া। স¤্রাট শাহজাহান তাঁর ছেলে আওরঙ্গজেবকে খাওয়ানোর জন্য দাক্ষিণাত্য থেকে যে আম আনিয়েছিলেন, সে আমের নামকরণ করা হয়েছিল বাদশাহপসন্দ। এভাবে দিলপসন্দ, রানিপসন্দ, জামাইপসন্দ, ইত্যাদি নামের পেছনেও জড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। অনেক আমের নামের শেষে যুক্ত হয়েছে ভোগ শব্দ; যেমন- গোপালভোগ, ক্ষীরভোগ, মোহনভোগ, রাজভোগ, রানিভোগ, লক্ষ্মণভোগ, ইত্যাদি। বস্তুত এসব জাতের দেড় হাজারের উপরে বিভিন্ন নামের আম আছে আমাদের এ উপমহাদেশে।
ই) আম অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। খাদ্যমানের দিক থেকে অন্যান্য দেশীয় ফলের মধ্যে বলতে গেলে আমের স্থান শীর্ষে। পাকা আমে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ থাকে। ভিটামিন এ এর বিবেচনায় আমের স্থান পৃথিবীর প্রায় সব ফলের উপরে। আমে ভিটামিন সি এর পরিমাণও সন্তোষজনক। কাঁচা ও পাকা উভয় আমে ভিটামিন সি থাকলেও কাঁচা আমে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি। গবেষণালব্দ তথ্য থেকে জানা যায় যে, কাঁচা আমে পাকা আমের চেয়ে দেড় গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। এ ছাড়া ১৬৫ গ্রাম সদ্য সংগ্রহ করা আমের পাল্পে ৯৯.০ ক্যালরি শক্তি, ১.৩৫ গ্রাম প্রোটিন, ০.৬৩ গ্রাম চর্বি, ২৪.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২২.৫ গ্রাম সুগার ও ২.৬৪ গ্রাম আঁশ থাকে। সাধারণত পাকা আম মিষ্টি বা মিষ্টি-টক হয়ে থাকে। আমের মিষ্টতা নির্ভর করে আমে থাকা চিনির পরিমাণের ওপর; বিশেষ করে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ। টাটকা পাকা আমে প্রায় ১৫ শতাংশ সুগার বা চিনি থাকে। জাতভেদে এই পরিমাণ কমিেবশ হয়। কাঁচা আমে ফ্রুক্টোজ প্রধান মনোস্যাক্কারাইড, কিন্তু পাকা আমে প্রধান হলো সুক্রোজ। কাঁচা আমে পরিমাণের দিক থেকে স্টার্চ বেশি থাকে। অথচ পাকার প্রাক্কালে এই স্টার্চ গ্লুকোজে পরিণত হয়। এভাবে পাকার সময় আমের শাঁসে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সক্রোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
ঈ) সংগত কারণেই একটি কথা না বলে পারছি না; তা হলো আমের খোসার পুষ্টিগুন। আমরা কত না কথা বলি, আম হলো ফলের রাজা এবং এর স্বাদে গন্ধে আমরা উতালা হয়ে পড়ি। এ সূত্র ধরে উল্লেখ্য যে, এর উপরের অংশ তথা খোসা ফেলে দিয়ে কেবল রসালো হলুদ অংশ নিয়ে মাতামাতি করে থাকি। বস্তুত আমের খোসার পুষ্টিগুণ আমাদের অনেকেরই অজানা। এ ব্যাপারে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, আমের চেয়ে এর খোসার পুষ্টিগুণ অনেক বেশী। ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড স্কুল অব ফার্মেসির এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, আমের খোসার ভেষজগুণ ওজন কমাতে সাহায্য করে। আর কিছু গবেষণায় এমনও তথ্য পাওয়া গিয়েছে যে, ক্যান্সার কোষ সারানোসহ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বাড়ায় এবং বার্ধক্য মন্থর করে থাকে। এদিকে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। আর ত্বকের জন্য আমের খোসার গুড়ার ভূমিকা অতুলনীয়। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, এই গুড়ার সঙ্গে দই মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরীপূর্বক ব্যবহার করলে ত্বকের দাগ, বলি রেখা ও ছোপ দূরীভূত হয়ে থাকে।
সহায়ক সূত্রাদি :
০১। বিজ্ঞান চিন্তা, মে-২০২২
০২। বাংলাপিডিয়া।
০৩। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন- ২৩/০৫/২০২২, ২৪/০৫/২০২২ এবং ২৫/০৫/২০২২
০৪। মাসিক মানবাধিকার খবর, জুন-২০২৩
০৫। সাপ্তাহিক গোর্কি- বর্ষ-১৪, সংখ্যা- ১১, ১৩ জুন,২০২৩
০৬। সতীর্থদের সঙ্গে আলোচনা।
০৭। লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতা।
০৮। অন্যান্য পত্র-পত্রিকা।
(বিশিষ্ট গবেষক, অথর্নীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত)